সাগর-রুনি হত্যা : ৭ বছরেও তৈরি হয়নি প্রতিবেদন

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ঢাকা প্রতিনিধি,১১ ফব্রেুয়ারি : সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ৭ বছর পর এখনো সে ঘটনার তদন্তের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্তের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য গত ৭ বছরে ৬০ বারের বেশি সময় নিয়েছেন।২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজেদের বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি খুন হওয়ার পর বাংলাদেশের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের একটি মন্তব্য ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছিল।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে সে সময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। আজ সাগর-রুনি হত্যার ৭ বছর পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতির ছিঁটেফোটা বাস্তবায়নও হয়নি।দোষীদের আইনের আওতায় আনা তো অনেক দূরে, সাত বছরে এখন পর্যন্ত ঐ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনই জমা দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে করতে পরিবারের সদস্যরা ওই ঘটনার বিচারের আশা ছেড়েই দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের রোমান বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন, যার এখন বদ্ধমূল ধারণা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সদিচ্ছার অভাবেই অগ্রগতি হচ্ছে না হত্যাকাণ্ডের তদন্তের।রোমান জানান, শুরুর দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তার পরিবারের সাথে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানালেও গত কয়েকবছর ধরে এ বিষয়ে কোনো ধরনের যোগাযোগই করেনি।তাদের পরিবার বিচারের আশা একরকম ছেড়েই দিয়েছেন বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন রোমান। বলেন, ‘হয়তো এমন কেউ জড়িত এটার সাথে যার জন্য হয়তো চায়নি বের করতে।’সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মামলা হওয়ার পর প্রথমে এর তদন্তে নামে শেরেবাংলা থানাপুলিশ। ৪ দিনের মাথায় মামলা হাতবদল হয় ডিবি পুলিশের কাছে। এর ৬২ দিনের মাথায় ডিবি আদালতে ব্যর্থতা স্বীকার করলে তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব।দায়িত্ব নিয়েই সাগর ও রুনির মরদেহ কবর থেকে তুলে এনে আবারো ময়না তদন্ত ও ভিসেরা পরীক্ষা করে র‍্যাব। বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হলেও তদন্ত আর এগোয়নি।এখনকার বাস্তবতা হচ্ছে, র‍্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য এখন পর্যন্ত ৬০ বারের বেশি সময় নিয়েছেন।হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সে সময় ৮ জনকে আটক করা হয়, যাদের মধ্যে দুজন বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। তবে হত্যার সঙ্গে এই আটককৃতদের সম্পৃক্ততা আসলে কতটুকু, সেবিষয়েও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কখনই পরিষ্কার কোনো তথ্য দেননি।সে সময় চাঞ্চল্যকর এই হত্যার ঘটনার অনুসন্ধান করা সাংবাদিকদের অনেকে মনে করেন, তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত কয়েকবছর নীরবতা পালন করায় তদন্ত আরও বেশি ব্যাহত হচ্ছে।স্থানীয় গণমাধ্যমে র‍্যাব অবশ্য সবসময়ই বলে এসেছে তদন্তের স্বার্থেই তারা এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না।সে সময় এ ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক সংগঠনগুলো ব্যাপক আন্দোলন করলেও কিছু দিনের মধ্যেই তা স্তিমিত হয়ে যায়।বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের মতে, সাংবাদিকদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যু নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কার্যকরভাবে চাপ প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি।এ খুনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো ডিএনএ নমুনার পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেলে মামলার রহস্য উদ্ঘাটন হবে বলে এর আগে র‌্যাবের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছিলেন।তবে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেলেই যে অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব হবে- তেমনটি নাও হতে পারে।
খবর বিবিসি