ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,ঢাকা প্রতিনিধি,১২ আগস্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনায় জড়িতরা ক্ষমার অযোগ্য, তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে। ওভারটেকিংসহ ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে, তাই কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা যাবে না।
আজ রবিবার ঢাকা-এয়ারপোর্ট মহাসড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের কাছে পথচারী আন্ডারপাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময়ই ড্রাইভারদের ট্রেনিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। কিন্তু ট্রেনিং না দিয়ে ড্রাইভারদের গাড়িতে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। চালকের পাশাপাশি রাস্তা পারাপারে পথচারীদেরও সমানভাবে সচেতন হতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সড়ক আইন এরই মধ্যে আমরা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দিয়েছি। এখন এই আইনটি সংসদে গিয়ে পাস হবে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সড়ক নিরাপত্তা করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেআইনিভাবে রাস্তা পাড় হওয়া গ্রহণযোগ্য না। তাই সবাইকে অনুরোধ করব রাস্তা পারাপার করার সময় দাঁড়িয়ে ডানে বায়ে দেখে রাস্তা পার হতে হবে। রাস্তা পারাপারের সুনির্দিষ্ট যে জায়গা আছে- ফুটওভার পাস, আন্ডারপাস, জেব্রা ক্রসিং এগুলো দেখে রাস্তা পার হতে হবে।তিনি বলেন, যত্রতত্র যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো যাবে না, যেখানে স্টপেজ সেখানেই থামতে হবে, লাইন ধরে বাস চালাতে হবে, ওভারটেক করলে ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন গাড়ি সড়কে চলতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়েছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক ছিল। আমরা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু, তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়ে সে আন্দোলনে গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সে চেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, যেভাবে শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছিল তার প্রতিদান তারা পেয়েছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম শিক্ষার্থীদের যেন কোনও ক্ষতি না হয়। কিন্তু আন্দোলনের তৃতীয় দিন দেখি ব্যাগের ভেতর থেকে ছাত্রদের পোশাক বের করে অনেকে ছাত্র হয়ে যাচ্ছে। তারা ব্যাগের ভেতর থেকে দা, রামদা এগুলো বের করছে। দর্জির দোকানে স্কুল ড্রেস বানানোর ভিড় বেড়ে গেছে। তখন আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্ররা আন্দোলনের সময় যা বলেছে তাই করা হয়েছে। প্রত্যেকে তাদের কথা শুনেছে। ছাত্রদের আন্দোলনে যখন তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়ে তখন আমি অভিভাবক ও শিক্ষকদের আহ্বান করি তাদের সন্তানদের যেন তারা রাস্তা থেকে সরিয়ে নেন। তারা আমার কথা শুনেছে। আমি তাদের ধন্যবাদ জানায়।তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের জীবন মান উন্নত করা আমরা লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সারা বাংলাদেশে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চাই।’প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ভেবেছিলাম কিভাবে সারাদেশের মানুষকে কমপিউটার শিক্ষানো যায়। আমি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে সে কাজ করেছি। দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তর করেছি। জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতবুনিয়া ভূউপগ্রহ নির্মাণ করে দিয়ে যান। তার ভিত্তিতে আমরা স্যাটেলাইট পাঠাতে পেরেছি। আমরা ছাত্রদের হাতে বিশ্বকে উন্মুক্ত কেরে দিচ্ছি।শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুশিক্ষিত জাতি ছাড়া দেশ উন্নতি করতে পারে না। এ জন্য আমরা শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। একটি ছেলেমেয়েও যেন বিদ্যালয়ের বাইরে না থাকে সে দিকে নজর দিচ্ছি।তিনি বলেন, শিক্ষা ছাড়াও আমরা চিকিৎসাকেও গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা সবসময় চাই দেশটিকে এগিয়ে নিতে।এর আগে আজ সকালে রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ প্রাঙ্গণে আন্ডারপাসের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন তিনি। এর পর প্রকল্পের ওপর একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদসহ বেসামরিক ও সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা।গত ২৯ জুলাই জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী নিহত দুই শিক্ষার্থীর প্রতি পরিবারকে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র প্রদান করেন।