ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট তম,ষ্টাফ রেপোর্টার,১৭ মে : মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতার শিকার হয়ে যেসব রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে সেখানে প্রতিদিন প্রায় ৬০ শিশুর জন্ম হয়। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এ তথ্য জানিয়েছে।
বুধবার সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত বছরের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশমুখী স্রোত তৈরি হয়। কক্সবাজারে তখন রোহিঙ্গা ঢল শুরুর পর এ পর্যন্ত ১৬ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জন্ম হয়েছে মাত্র ৩ হাজার শিশুর।
ইউনিসেফের বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডুওয়ার্ড বেইগবেদার বলেছেন, প্রতিদিন প্রায় ৬০টি শিশু ভয়ঙ্কর পরিবেশের মধ্য দিয়ে দুনিয়ার মুখ দেখছে। তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। যে মা তাদের জন্ম দিচ্ছেন তারাও নানা সংকটের মধ্যে রয়েছেন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৮ হাজার ৩০০ জন গর্ভবতী নারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে সেখানে এমন ২৫ হাজার নারী রয়েছেন।
রোহিঙ্গা সংকটের সূচনার পর গত নভেম্বরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে মিয়ানমারের সৈন্যরা হত্যা, লুটপাট, জ্বালাও পোড়াওয়ের পাশাপাশি ব্যাপক হারে যে যৌন সহিংসতা চালাচ্ছে, তার ভয়ঙ্কর বিবরণ উঠে আসে সেখানে।
ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৫২ জন রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে, যাদের মধ্যে ২৯ জন ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর প্রাণ নিয়ে রাখাইন থেকে পালাতে পেরেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে যে অভিযান চালাচ্ছে, তার গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়াবহ একটি অংশ এই ব্যাপক হারে ধর্ষণ।
রয়টার্স লিখেছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য চলতি বছর অন্তত ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রয়োজন জানিয়ে গত মার্চে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু এর মধ্যে ২০ শতাংশও এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকটি চেকপোস্টে হামলাকে কেন্দ্র করে দেশটির রাখাইন রাজ্যে যুগ যুগ ধরে বসবাসরত সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে বার্মিজ আর্মি। ভয়াবহ ওই সহিংসতার শিকার হয়ে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তারা এখন কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করছে।
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ওই অভিযানকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে। কিন্তু মিয়ানমার বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে।