ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,মাদারিপুর প্রতিনিধি,০৯ মে : মাদারীপুরের শিবচরের উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেছেন ধর্ষিতার মা শিবচর। ‘শিক্ষকের কাণ্ড : ধর্ষণের ভিডিও করে ৩ বছর ধরে ব্ল্যাকমেইল’-এ শিরোনামে গত রবিবার ও ‘তদন্ত কমিটি বিচারের আশ্বাস’-এ শিরোনামে সোমবার কালের কণ্ঠ পত্রিকার শেষ পাতায় সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে মামলাটি দায়ের করা হয়।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে একই বিদ্যালয়ের গরীব মেধাবী ছাত্রীদের আর্থিক সহযোগিতার নাম করে এবং পড়া দেখানোর নাম করে নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে জোর করে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে রাখা অভিযোগ উঠেছে। পরে ব্ল্যাকমেইলিং করে ভিডিও অন্যদের দেখানোর ভয় দেখিয়ে ওইসব ছাত্রীদের ধর্ষণ করে আসছিল। কিন্তু ওইসব ছাত্রীরা ভয়ে, লজ্জায় আর সম্মানের কথা ভেবে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। দীর্ঘদিন এমন অপকর্ম করে গেলেও অবশেষে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী উপায়ান্তর না দেখে বাধ্য হয়ে ওই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে গত ১৩ মার্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করে। অভিযোগের পরদিন ১৪ মার্চ শিক্ষক রবিউল কাউকে কিছু না বলে ছুটি না নিয়ে বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যায়। এর পরই বের হয়ে আসে শিক্ষক রবিউলের আরো নানা অপকর্মের তথ্য। ফাঁস হয়ে যায় একাধিক ছাত্রীর সাথে আপত্তিকর ছবি এবং অডিও রেকর্ডিং।
এ নিয়ে কালের কণ্ঠে সংবাদ প্রচার হলে নড়ে চড়ে উঠে প্রশাসন ও পুলিশ। গত ২ দিন পুলিশ বিভিন্নভাবে অনুসন্ধানের পর এ ঘটনার সত্যতা পায়। পরে গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে শিক্ষক রবিউলকে আসামি করে শিবচর থানায় মামলা করেন নির্যাতিত দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর মা।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিবচর থানার ওসি জাকির হোসেন, পরিদর্শক (তদন্ত) শাজাহান মিয়া, পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আনোয়ার হোসেন দীর্ঘ সময় ওই ছাত্রীকে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। তারা দোষীকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির আশ্বাস দেন। তবুও মেয়েটির চোখে বইছিল অশ্রুধারা।
এ প্রসঙ্গে শিবচর থানার ওসি মো. জাকির হোসেন বলেন, এই মেয়েটি যে তথ্য দিয়েছে তা লোমহর্ষকর। প্রেমের ফাদে ফেলে ধর্ষণের ভিডিও করে অসংখ্যবার তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এছাড়াও আরো ঘটনাও রয়েছে। মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তাররে জোড়ালো অভিযান শুরু হয়েছে।
এদিকে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী বলেন, পুলিশ নিজে থেকেই আমাদের বাড়ি ও স্কুলে গিয়ে ঘটনার খোঁজ-খবর নিয়েছে। আমি ওই শিক্ষকের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার চাই। যাতে করে ওই শিক্ষক যেন আর কোন মেয়ের জীবন নষ্ট করতে না পারে।
মামলার বাদী ছাত্রীর মা বলেন, সে আমার মেয়েসহ অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। ওকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক।
এ ব্যাপারে উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রোকনুজ্জামান বলেন, সংবাদটি প্রকাশের পর পুলিশ নিজে থেকেই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের তৎপরতাতেই দরিদ্র ছাত্রীর মা মামলা করার সাহস পেয়েছে। এই শিক্ষক রবিউলের জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কলুসিত হয়েছে। দ্রুত ওকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।