ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নওগাঁ প্রতিনিধি,০৮ মার্চ : ঘোড়ার পিঠে সওয়ারি ছোট্ট এক মেয়ে। এক হাতে লাগাম; অন্যহাতে চাবুক আর দুই চোখজুড়ে স্বপ্ন প্রথম হওয়ার। এরই মধ্যে ‘দ্য হর্স গার্ল’ খ্যাতি পেয়েছে তাসমিনা নামের এই ঘোড়সওয়ারি। আর এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। একের পর এক সেরা পুরস্কার ছিনিয়ে আনছে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার মাঠ থেকে। যেখানে চলে তাসমিনার ঘোড়দৌড়, সেখানেই নামে হাজারো মানুষের ঢল।
বাড়িতে ঘোড়া ছিল, তাই খেলার ছলেই ঘোড়ায় চড়া শেখা। সেই অবস্থা থেকে এখন তাসমিনা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশজুড়ে। সারাদেশে ঘোড়দৌড় খেলায় এখন এক উজ্জ্বল মুখ ১৩ বছর বয়সী তাসমিনা। হাজারো পুরুষ খেলোয়াড়কে পেছনে ফেলে শ্রেষ্ঠ স্থান দখল করে নেয় সে।
এদিকে ঘোড়সওয়ারি তাসমিনাকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘অশ্বারোহী তাসমিনা’ ‘অলিম্পিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ফর চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়াং পিপল’ এ স্থান পাওয়ার পর বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার পূর্ব-চকসুবল গ্রামের কৃষক ওবায়দুল হকের মেয়ে তাসমিনা। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও লাভ করেছে প্রামাণ্যচিত্রটি। এর মধ্যে রয়েছে ওমেনস ইন্টারন্যাশনাল এন্টারটেইনমেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার এবং ৫১তম প্রিজনেস ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ফেস্টিভ্যালে জেন্ডার ইক্যুইটি পুরস্কার। এ ছাড়া রোমানিয়ায় ট্রান্সসিলভানিয়া শর্টস ফিলাল্ম ফেস্টিভ্যাল, বার্লিনে কন্ট্রাভিশন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, যুক্তরাষ্ট্রের এল এ সিনে ফেস্ট এ অফিসিয়াল সিলেকশন ও অনারেবল মেনশন পুরস্কার জিতেছে।
এ ছাড়া পুরস্কৃত হয়েছে গ্রিসের অলিম্পিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ফর চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়াং পিপলসহ আর্জেন্টিনার ফানচিলি চলচ্চিত্র উৎসব, ইন্দোনেশিয়ার রাকায়েত ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। তবে তাসমিনার বাস্তব জীবন সিনেমার চেয়ে অনেক কঠিন। বিভিন্ন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে যে অর্থ পায়, তাসমিনার পরিবার চলে অনেকটা সে অর্থেই। উপজেলার শংকরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তাসমিনার পক্ষে তাই চাইলেও লেখাপড়ার পেছনে বেশি সময় দেওয়া সম্ভব হয় না।
তাসমিনার মা তহুরা বেগম বলেন, তাসমিনা এ পথ ধরে যেতে চায় আরও বহুদূর। তাসমিনাকে আত্মপ্রত্যয়ী ও সাহসী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন তারা। মেয়েকে ঘিরে তারা এখন স্বপ্ন দেখে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। তাসমিনাকে উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন থাকলেও দারিদ্র্যের কারণে তা সম্ভব হবে কি-না, সেটিই এখন তার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা।
তাসমিনার বাবা কৃষক ওবায়দুল হক বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে একমুঠো ভাত খেয়ে ঘোড়ার পিঠে ওঠে মেয়ে। দুপুরে এসে দুটো খেয়ে আবার ঘোড়া নিয়ে বের হয়। সারাদিন ঘোড়ার পিঠেই থাকে। তার একটা বড় ঘোড়া চাই। আমরা গরিব। এই ঘরটুকু ছাড়া কিছু নেই। এজন্য প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাই। সেখানে মেয়ে অন্য মানুষের বড় ঘোড়া চালায়।’
তবে আত্মবিশ্বাসী তাসমিনা জানায়, তার স্বপ্ন বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার। এ জন্য বড় হয়ে সে পুলিশের চাকরি করতে চায়। কারণ, সেখানে ঘোড়সওয়ারির পদ রয়েছে।
শংকরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘একটু সহায়তা পেলে তাসমিনার লেখাপড়াটা আরও ভালোভাবে এগিয়ে যাবে। তাসমিনার প্রত্যয় আর পরিশ্রমই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার মতো জীবনেও প্রথম হওয়ার সাফল্য এনে দেবে তাকে।’