ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,রাজশাহী প্রতিনিধি, ২২ ফেব্রুয়ারি : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনব্যাপী সফরে আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী সফরে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর অফিস সূত্র জানিয়েছে, সফরকালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ষষ্ঠ কোরের পুনর্মিলনীতে যোগদান এবং ২১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
এরপর বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর মাদ্রাসা ময়দানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নিতে রাজশাহী এখন প্রস্তুত। শুধু রাজশাহী মহানগরী নয়, আশপাশের গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে এই উৎসবের আমেজ। অবশ্যই, শেখ হাসিনাও খালি হাতে আসছেন না। বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি। দুপুরে যোগ দেবেন রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায়। সেখানে রাজশাহীবাসীর জন্যে আনা উপহার ঘোষণা করবেন এবং সরকারি মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। জনসভাকে সফল করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে সড়কগুলো সংস্কার কাজ চলছে। পাশাপাশি চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। কোথাও কোথাও সড়কের দুই পাশে চলছে দেয়াললিখন। এছাড়া চলছে মাইকিংও। জনসভায় বিপুল লোক সমাগম করতে কাজ করছেন দলীয় নেতারা।
দুপুরের পর শেখ হাসিনা মাদ্রাসা ময়দান থেকে ২১টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ১২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করবেন।
যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী-
বোয়ালিয়ায় বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের চারতলা বিশিষ্ট ও এএইচ কামারুজ্জামান ডিগ্রি কলেজের পাঁচতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, পবায় দামুকুরা হাট কলেজের চাতলা একাডেমিক ভবন, বাঘায় আড়ানি ডিগ্রি কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, তানোরে আবদুল করিম সরকারি ডিগ্রি কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, বাঘমারায় বাঘমারা ডিগ্রি কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, পুঠিয়ায় বিড়ালদহ কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, চন্দ্রিমা থানা, কাশিয়াডাঙ্গা থানা, কাটাখালি থানা, পবা থানা, কর্ণহার থানা, দামকুড়া থানা, বেলপুকুর থানা, বারনই নদীতে রাবার ড্যাম, রাজশাহী (উত্তর) ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, রাজশাহী নওহাটা ফায়ার স্টেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড সার্ভে ইনস্টিটিউট, গোদাগাড়ি উপজেলা কমপ্লেক্সের প্রশাসন ভবন ও হলরুমের সম্প্রসারণ এবং বিভাগীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কার্যালয় নির্মাণ।
যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী- রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের ছয়তলা বিশিষ্ট মহিলা ডরমেটরি, কাশিয়াডাঙ্গা ৩৩/১১ কেভি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, মেহেরচন্ডী ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন, রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে ৩২৪.৫০ মিটার ফ্লাইওভার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, চারঘাট উপজেলায় বড়াল নদীতে ৯৬ মিটার পিএসসি গির্ডার ব্রিজ, গোদাগাড়ি উপজেলায় বড়গাছি ও রাজাবাড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, চারঘাট উপজেলায় চারঘাট ও নন্দনগাছি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, দুর্গাপুর উপজেলায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং বেসরকারি শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন।
এদিকে শহর ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় শোভা পাচ্ছে নৌকা প্রতীক সম্বলিত বিশাল বিশাল তোরণ। জনসভাস্থল ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানের আশপাশের এলাকায় তোরণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর বাইরে পুরো নগরীর বিভিন্ন সড়কগুলোতে একটু পর পরই তোরণ নির্মাণ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এসব তোরণে সাঁটানো হয়েছে বিভিন্ন ব্যানার। স্থানীয় এমপি, আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা তাদের ছবি দিয়ে এসব ব্যানার লাগিয়েছেন। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও শরিক হয়েছে এই প্রচারণার কাজে।
জনসভার জন্য মাঠ প্রস্তুতের কাজও এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। মাঠজুড়ে বসানো হয়েছে মাইক। আশপাশে বসেছে সিসি ক্যামেরা। নৌকার আদলে করা হয়েছে সভামঞ্চ। রঙিন কালিতে মাঠের চারপাশে শোভা পাচ্ছে দেয়াললিখন। ইতোমধ্যে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠ পরিদর্শন করেছেন। তারা প্রস্তুতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলছেন, সব আয়োজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য। দলের নেতাকর্মীরা স্বতস্ফূর্তভাবে এসব তোরণ নির্মাণ করেছেন। আমাদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে জনসভায় অংশগ্রহণ করানো। এ জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আগমনের খবর সাধারণ মানুষকে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মাইকিং তো চলছেই। সব মিলে নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে রাজশাহীতে। চলতি মেয়াদে এটি প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় সফর।
জানা গেছে, সাত বছর আগে এই মাদ্রাসা ময়দানেই এক জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার জনসভায় বক্তব্য দেয়ার আগে তিনি রাজশাহীর ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। জেলার আরও উন্নয়নের স্থার্থে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হবে আরও ৯টি। এছাড়া ব্যবসায়ী ও সামাজিক সংগঠনের নেতারাও আলাদা আলাদাভাবে তাদের দাবিনামা প্রস্তুত করেছেন।
দলীয় প্রধানের এই সফরে স্থানীয় নেতাকর্মীরাও উচ্ছ্বসিত বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু শহর নয়, জেলার প্রতিটি পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়নকে সাজিয়ে তুলেছেন নেতাকর্মীরা। তাদের এই উদ্দীপনা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে সহায়ক হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বাগমারা ও ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চারঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেন তিনি। সর্বশেষ গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর পবায় দলীয় জনসভায় হাজির হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তখনও নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছিল। সেজে উঠেছিল পুরো রাজশাহী।’
আগামী সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলছেন, জনসভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্য আরও সুসংহত হবে, যা আগামী নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখবে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, রাজশাহী এবং সিরাজগঞ্জ জেলা ও এসব জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন।