ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১৩ ফেব্রুয়ারি : বিএনপিকে এড়িয়ে চলছে জামায়াতে ইসলামী। উনিশ বছর ধরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে থাকা জামায়াত খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে চলমান আন্দোলন থেকেও দূরে রয়েছে। জোটের বৈঠকে দলটি আন্দোলনে অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও রাজপথে নামছে না।
জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র সমকালকে নিশ্চিত করেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে এখনই তারা আন্দোলনে নামছে না। কারণ, খালেদা জিয়ার সাজা বিএনপির দলীয় ইস্যু। বিএনপির ‘আন্দোলনে’ যোগ দিয়ে সরকারের সঙ্গে নতুন করে বিরোধে জড়াতে রাজি নয় কোণঠাসা জামায়াত।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল সোমবার সারাদেশে মানববন্ধন করে বিএনপি। গত রোববার ২০ দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জোটের ব্যানারে মানববন্ধন করা হবে। সব শরিক দল যোগ দেবে। বৈঠকে এ সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করলেও গতকাল জামায়াতের কোনো নেতাই পথে নামেননি। শুধু ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক খালেদ মাহমুদের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি দল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির মানববন্ধনে ২০ মিনিটের জন্য যোগ দিয়েছিল।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের জেল দেন। ওই দিনই বিবৃতির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সাজার নিন্দা করলেও বিএনপির নেতাকর্মীদের ‘ধরপাকড়ে’ মুখ খোলেনি জামায়াত। গত ২ ফেব্রুয়ারি সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জামায়াত নেতারা নিশ্চিত করেছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হলেও তারা প্রতিবাদমুখর হবেন না।
জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেছেন, জোট নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা সাজানো’ মামলায় ‘অন্যায়ভাবে’ সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করে বিবৃতি দিয়েছেন। মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। বক্তৃতা-বিবৃতির বাইরে আন্দোলনে .জামায়াত কোনো ভূমিকা রাখবে কি-না? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘জোটের কর্মসূচিতে জামায়াত অতীতেও অংশ নিয়েছে। ভবিষ্যতেও সামর্থ্য অনুযায়ী অংশ নেবে।’
তবে একাধিক জামায়াত নেতা সমকালকে বলেছেন, দেড় যুগের মিত্রতা থাকলেও জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে জোটের ইস্যু মনে করছেন না তারা। তা ছাড়া সরকারের ‘দমনপীড়নে’র কারণে জামায়াত দলীয় কর্মসূচিই পালন করতে পারছে না। দলীয় কার্যালয় খুলতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির সমর্থনে আন্দোলনে নামলে জামায়াতের বিরুদ্ধে ধরপাকড় জোরালো হবে। জোট মিত্রের জন্য আবারও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে নারাজ জামায়াত।
জামায়াত নেতাদের মতে, কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে, তা এখনও নিশ্চিত না হলেও এবার বিএনপি ভোটে অংশ নেবে। তাই এ সময়ে কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি। নির্বাচনমুখী জামায়াতও ভোটের আগে সরকারের সঙ্গে বিরোধ বাড়াতে চায় না।
বিএনপি-জামায়াত দুবার জোটবদ্ধ নির্বাচন করেছে, একবার সরকার পরিচালনা করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকেই তাদের সখ্য কমতে শুরু করে। তবে দু’দল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন একত্রে বর্জন করে। কিন্তু উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করেছে যে যার মতো। ২০১৫ সালে নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে টানা তিন মাস একত্রে আন্দোলন করলেও তাদের সম্পর্কের দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি।
গত অক্টোবরে জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ, সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ আট কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার হন। তারা এখনও কারাগারে। তাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকা হরতালের দিন দুপুরবেলায় সমর্থনের কথা জানায় বিএনপি। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতার ফাঁসি কার্যকরের পর কর্মসূচিতে বিএনপির সমর্থন ছিল না। একে জামায়াতের দলীয় ইস্যু বলে ‘এড়িয়ে যায়’ বিএনপি। খালেদা জিয়ার মামলার রায়কেও বিএনপির দলীয় ইস্যু হিসেবে দেখছে জামায়াত।
তবে জামায়াত নেতারা সমকালকে বলেছেন, অতীতে বিএনপির সমর্থন না পাওয়ার কারণে নয়, নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার জন্যই তারা কঠোর আন্দোলনে নারাজ। ২০১৩ ও ২০১৫ সালের ‘আন্দোলনে’ বিএনপিকে ‘সর্বাত্মক সমর্থন’ দিয়ে রাজপথে ছিল জামায়াত। তাদের হিসাবে, এ আন্দোলনে জড়িয়ে তাদের তিন লাখ ৬০ হাজার নেতাকর্মী মামলার আসামি হয়েছেন। শতাধিক নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে সংঘর্ষ-সহিংসতায়। আন্দোলনে নামলে আবারও একই অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কায় বিএনপির জন্য ঝুঁকি নিয়ে পথে নামতে আগ্রহী নয় জামায়াত।