ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১৫ অক্টোবর : হোমনা ও তিতাস উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-২ আসন। সংসদ নির্বাচনে আরো এক বছরের বেশি সময় বাকি থাকলেও এ আসনে মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি দলীয় কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় হচ্ছেন। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রঙ-বেরঙের ব্যানার, পোস্টার সাটিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা, পুজা উপলক্ষে দান-খয়রাতসহ বিভিন্ন উপহার দিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজস্ব কর্মীবাহিনী নিয়ে কর্মসূচি পালন করে যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন।
আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী এমকে আনোয়ার হবেন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি যতবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ততবারই ভোটাররা তাকে বিমুখ করেনি। তিনি এ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকার সুবাদে এলাকার যথেষ্ট উন্নয়ন করেছেন। ফলে ১/১১ পরবর্তী সময়ে বিএনপির ভরাডুবি হলেও নবম সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বয়কট করলে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আমির হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তবে বার্ধক্যের কারণে এমকে আনোয়ার আগের মতো এলাকায় সময় দিতে না পারলেও এ আসনে তার কোনো বিকল্প নেই। তাকে সামনে রেখেই নির্বাচনী তৎপরতা ও ঘর গুছাতে শুরু করেছে বিএনপি।
বিগত সময়ের সাফল্য ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। এমকে আনোয়ারও ঈদ পুনর্মিলনীর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। তার পক্ষে নেতাকর্মীরা এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন করে প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। তবে সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি বড় অংশ দলে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
কুমিল্লা-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমির হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বিগত নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আশাবাদী জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হলে এবারও তিনি জোটের প্রার্থী থাকবেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোনো কোন্দল নেই। পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বলেন, এ সরকারের আমলে হোমনা এবং তিতাস উপজেলায় যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। ব্রিজ কালভার্ট, সড়ক সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন, হোমনা ডিগ্রি কলেজ জাতীয়করণ, রামকৃষ্ণপুর ডিগ্রি কলেজে অনার্স কোর্স চালু করার ক্ষেত্রে রয়েছে তার অবদান। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণে খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছে জাতীয় পার্টি।
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া। দলীয় কোন্দলের কারণে সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভালো ফলাফল করতে পারেনি দলটি। তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপির ঘাঁটিতে হানা দিতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। এ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে হাফডজন নেতা দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। তারা হলেন হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ, নিটল-নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান, ওমেন্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা সেলিমা আহমাদ মেরি (সিআইপি), হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম সিদ্দিকুর রহমান আবুল, ব্যবসায়ী এনামুল হক ইমন, তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকার, কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বাবু, বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহম্মদ বাবু প্রমুখ। তবে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার এ আসন থেকে দুবার নির্বাচন করেছেন। তিনিও এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া মহাজোটের আরেক শরিক দল ন্যাপ (মোজাফর)-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সফিক আহম্মদ খান এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দলীয় মনোনয়ন পেতে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রার্থীরা তাদের কর্মী-সমর্থক নিয়ে এলাকায় শোডাউন করছেন। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রুপিং এমন পর্যায়ে গেছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে।
হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে নবম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপির প্রার্থী এমকে আনোয়ারের কাছে প্রায় ১২ হাজার ভোটে হেরে যান। এরপর দশম নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পান। কিনু্ত দলের বৃহত্তর স্বার্থে মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। তার কর্মী-সমর্থকদের দাবি আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়নের দাবিদার। সংসদ নির্বাচনে হেরে গিয়ে তিনি গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৮ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আবুল কাশেমের পক্ষে নির্বাচন না করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করায় দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়। গ্রুপিংয়ের কারণে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার স্ত্রী রেহেনা বেগম একক প্রার্থী হয়েও বিপুল ভোটে পরাজিত হন। এ ছাড়া ২০০৪ সালে থেকে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি। কোন্দলের কারণে এ বছর পৃথক পৃথকভাবে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষে আলাদাভাবে গাড়ি বহর নিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
এ দিকে সভাপতি ব্যবসায়িক কাজে বেশির ভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করায় দলের নেতৃত্ব চলে যায় সাধারণ সম্পাদক একেএম সিদ্দিকুর রহমান আবুলের হাতে। তিনি দলের মধ্যে একক আধিপত্য বিস্তার করে কৌশলে তার অনুসারী নেতাকর্মীদের দলের গুরত্বপূর্ণ পদে বহাল করেছেন। তিনি বলেন, অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই মাঠে আসেন। কিছু টাকাপয়সা খরচ করে দলের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে। দল কীভাবে চলে তার কোনো খবর রাখেন না, নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে আমি থাকি। দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী আমার সঙ্গে রয়েছেন। আমার বিশ্বাস, আগামী নির্বাচনে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।
তিনিও ঈদের পরদিন থেকে আলাদা গাড়ি বহর নিয়ে প্রতিটি ইউনিয়নে মতবিনিময় সভা করেছেন। এতে ইউনিয়নের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে নিটল-নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান, ওমেন্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা সেলিমা আহমাদ মেরীর দলীয় কোনো পদপদবি না থাকলেও এলাকায় আওয়ামী লীগের পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন এবং এালকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফুটবল টুর্নামেন্টসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন। ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে তিনি ৪০টি স্পটে কাঙালিভোজের আয়োজন্ করেন। এ ঈদে তার বাসভবনে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী করেছেন। এতে দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তিনি হোমনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য এমু্বলেন্স কিনে দিয়ে বেশ আলোচনায় রয়েছেন। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নারী ভোটার তার পক্ষে থাকবেন- এমন প্রত্যাশা তার ভক্তদের। তাদের দাবি, সেলিমা আহমাদ মেরী মনোনয়ন পেলে দীর্ঘদিনের কোন্দলের অবসান হবে এবং এ আসন উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
অপরদিকে এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী এনামুল হক ইমন। তিনি ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে দুই দিনব্যাপী মিলাদ মাহফিল, কুরআন খতমের আয়োজন করে আলোচনায় আছেন। এ ঈদে তার বাসভবনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন- এমন প্রত্যাশা করছেন তিনি। তবে আগামী নির্বাচনে যেই দলের মনোনয়ন পাবেন গ্রুপিং বন্ধ করে তার পক্ষে কাজ করার আহ্বান এনামুল হক ইমনের।
অপরদিকে তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকারদলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, দলীয় বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দেবে এমন বিশ্বাস তার।
কুমিল্লা (উ.) জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বাবু। তার রয়েছে বিশাল কর্মীবাহিনী তিনিও মনোনয়নযুদ্ধে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বী।
কুমিল্লা (উ.) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার এ আসন থেকে দুবার নির্বাচন করার কারণে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দল তাকে মনোনয়ন দেবে এমনটা মনে করেন তার ভক্তরা।
বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহম্মদের রয়েছে ক্লিন ইমেজ। তার বাবা মরহুম ইঞ্জিনিয়ার সাইফউদ্দিন আহম্মদের এলাকায় বেশ পরিচিতি। এ ছাড়া দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী তার বন্ধু। সে কারণে তিনি মনোনয়ন চাইলে দলের সহহানুভূতি পেতে পারেন এমন ধারণা তার সমর্থকদের।
সূত্র: মানব জমিন