জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত করার চিন্তা করছে সরকার। ২০১৩ সালে একই উদ্যোগ নিয়ে পিছিয়ে গেলেও এবার সরকারের সবুজ সংকেতে কঠোর অবস্থানে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, ২০১৩ গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠালাভের পর দাবির মুখে এই উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতিতে আবার বিষয়টি সামনে এসেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে আইনের চূলচেরা বিশ্লেষণ করছে। কিভাবে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে আনা যায় সেটি দেখা হচ্ছে। তাছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত করার সুযোগ নেয়া যায় কিনা সেটিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে একটি নির্দেশনা পেয়েছি। সেটি বিবেচনায় নিয়ে কাজ চলছে। শিগগিরই এর অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, তাকাফুল ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স এই তালিকায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই ইসলামী ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারিতে রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বলেছেন।
জানা যায়, ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর পর গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে জামায়াত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ওঠে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এমএম আকাশ জাগো নিউজকে বলেন, জামায়াত নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি তালিকা করে সরকারের উচিত এগুলোর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়া।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির জাগো নিউজকে বলেন, জামায়াতের বিনিয়োগ ও তাদের পরিচালিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেয়া উচিত।
অবশ্য আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ এসব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় মালিকানায় আনার দাবি জানিয়েছেন। এসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয়ের পরামর্শও এসেছে।
সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকের আগের মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা আবু নাসের মোহাম্মাদ আব্দুজ জাহের মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম এলাকায় আল বদর বাহিনীর নেতা ছিলেন বলে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতাদের দাবি।
সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতামূলক ঘটনার পেছনে কারা অর্থ-সহায়তা করছে, তা অনুসন্ধান করতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়। ওই নির্দেশে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন বা নাশকতার আর্থিক মদতদাতাদের চিহ্নিত করতে বলা হয়। এটি খুঁজতে গিয়ে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্টতার সন্ধান মেলে।
জানতে চাইলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসলাম আলম জাগো নিউজকে বলেন, আইন মোতাবেক এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।