ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,২৬ জুলাই : কুমিল্লা জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের যাবতীয় দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ড ফাঁস করলেন মেঘনা উপজেলার শিক্ষা অফিসার। মেঘনা উপজেলা শিক্ষা অফিসার আরিফুল ইসলাম জানান যে, টিএ বিল দীর্ঘ ৩ মাস মঞ্জুরীর জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পড়ে থাকলেও টাকা না দেয়ায় বিল পাশ করছিলেন না ডিপিইও মোঃ নূরুল ইসলাম। এক পর্যায়ে মেঘনা উপজেলা শিক্ষা অফিসার আরিফুল ইসলামকে উকিল নোটিশ দেবার হুমকি দেন। অধীনস্ত কর্মকর্তার এরূপ আচরনে ডিপিইও নূরুল ইসলাম ক্ষুদ্ধ হন। তিনি একের পর এক শোকজ পত্র জারি করতে থাকেন। তিনি মেঘনা উপজেলার শিক্ষকদেরকে টিইও এর বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন। টিইও এন্টি-গ্রুপের কিছু দুষ্কৃতকারী শিক্ষককে তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে উস্কানী দেন। অভিযোগের কোনরকম তদন্ত না করেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মেঘনার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়। এতে করে সাধারন শিক্ষকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাঁরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর এই বদলীর আদেশ স্থগিত করবার জন্য আবেদন করেন। মেঘনা উপজেলার সকল ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানগণও একযোগে বদলীর আদেশ স্থগিত করবার জন্য আলাদা একটা আবেদন মন্ত্রনালয়ে দাখিল করেন। এত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে মেঘনা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বদলীর আদেশ স্থগিত হয়। এবার মেঘনার সংক্ষুব্ধ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিজে বাদী হয়ে জেলা কর্মকর্তা নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরেন। বিভিন্ন অভিযোগপত্রে এবং কৈফিয়তের জবাবে তিনি ডিপিইও এর দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। সূত্র মতে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কয়েকটি উপজেলায় শিক্ষক প্রতিনিধি মনোনয়ন করে তাঁদের মাধ্যমে বদলী, পদায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতি করে আসছিলেন। তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের নিকট হতে বিভিন্ন কাজে চাঁদা নিয়ে থাকেন। আবার শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনুকূলে বিভিন্ন বাজেট বরাদ্দ থাকলেও তা না দিয়ে প্রাপ্তিস্বীকারে ঠিকই স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এ বিষয়ে মেঘনার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ডিপিইও মহোদয় আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তাঁর দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় বিপদে আছি।” তিনি আরো জানান, “ডিপিইও অফিসে টাকা ছাড়া শিক্ষকদের কোন কাজ হয় না। আবার উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হলে শিক্ষকরা টাকা দিয়ে তা বন্ধ করে দেয়। মেঘনা উপজেলার ৩২নং নোয়াগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক তানিয়া আক্তার ২৫/০১/২০১৬ তারিখ থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তিনি স্বামীর সাথে বিদেশে অবস্থান করছেন বলেও জানা গেছে। তাঁর চাকুরী অবসায়নের জন্য বারবার জেলা অফিসে লেখা হলেও কোন কাজ হচ্ছে না। ডিপিইওকে টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করে রেখেছে। আবার একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপবৃত্তির টাকা বিতরনে অনিয়মের অভিযোগে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি তদন্ত করে তাঁকে বদলী করবার জন্য সুপারিশ প্রেরন করা হয়। এখানেও অভিযুক্ত পক্ষ ডিপিইওকে ম্যানেজ করে ফেলে। এসব কারণে কুমিল্লার মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষার কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে।” কুমিল্লা জেলার ১৬টা উপজেলা হতে বিভিন্ন সূত্রে একই চিত্র পাওয়া যায়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার দুষ্কৃতকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন না করে তাঁদেরকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল ইসলামের এহেন কর্মকান্ডে কুমিল্লা জেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা আজ হুমকির সম্মুখিন। ডিপিইও মোঃ নূরুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।