প্রিন্সিপাল কামাল উদ্দিন সরকার, অন্টারিও সার্টিফাইড টিচার, লিড টিচার, হেংশুয়ে কলেজ, চীন : এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফল দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে কুমিল্লা বোর্ডের ইংরেজী প্ৰশ্নপত্রটি অস্বাভাবিক বা মারাত্মক কঠিন হয়েছে। আমি যতদূর জানি, এক বোর্ডের শিক্ষকগণ অন্য বোর্ডের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন কঠিন বা সহজ হল কিনা তার সাথে শিক্ষকের নিজস্ব কোন স্বার্থ জড়িত থাকে না। তবে দেশের দশটি বোর্ডের দশজন প্রশ্নকর্তা একই মনের কিংবা একই মানের হতে পারেন না। কারিকুলাম এক হওয়া সত্বেও প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে শিক্ষকের নিজস্ব প্রকৃতি বা ব্যক্তিগত চিন্তাশক্তির তারতম্যের বিষয়টা সব বোর্ডে একই মানসম্পন্ন প্রশ্ন প্রণয়নে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্ন প্রণয়নে এ ধরণের প্রভাব ছিল বলেই বোর্ডের শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশী পরীক্ষার্থীর সাজানো স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে গেছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, উত্তরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়নের কারণে পাশের হার কমে গেছে। আমরা সবাই তা বিশ্বাস করি। কিন্তু কুমিল্লা বোর্ডের পাশের হার কমে যাওয়ার পেছনে উত্তরপত্র মূল্যায়নের সঠিকতার কারণটি ঠিক নয়। নিঃসন্দেহে এ বোর্ডে ইংরেজী বিষয়ে স্বাভাবিক প্রশ্নের চেয়েও অধিক কঠিন প্রশ্ন হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় এ বোর্ডের পাশের হার কমে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেন নি। দেশে বিদেশে শিক্ষকতায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে একটি কথা না বলে পারছি না – বাংলাদেশে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতি অনেক দূর্বল। তার উপর আবার সময়ে সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় দেশব্যাপী শিক্ষার্থীরা বিড়ম্বনার শিকার হন। এই দুর্বল পদ্ধতির কারণেই এবারের ফলাফলে কেউ হাসছে আর কেউ কাঁদছে।
আগামীতে এসব সমস্যা সমাধানে সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করি। প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পারলে সকল বোর্ডে একই প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া উত্তম। না পারলে অন্তত আবশ্যিক বিষয়গুলোর প্রশ্ন এক হলেও ফলাফলে বড় রকমের তারতম্য হবে না। সেক্ষেত্রে এক বোর্ডে পাশের হার ৮০% এবং অন্য বোর্ডে তা ৪৯% হবে না। সেই সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষা বিভাগকে বিবেকের তাড়নায় ভূগতে হবে না। সবচেয়ে বড় কথা সারাদেশের শিক্ষার্থীদের সমভাবে মূল্যায়ণ করা যাবে।