প্যারিসের মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক

SHARE

প্যারিসে শুক্রবার রাতের গোলাগুলি শুরু হয় যখন তখন কাসা নস্ত্রা রেস্তোরাঁর পেছনের এক 6বারে কাজ করছিলেন সাফের। আমি কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বিস্ফোরণের শব্দ শুনলাম, প্রচণ্ড শব্দ। সবাই চিৎকার করতে শুরু করল। আমাদের উপর ঝুরঝুর করে কাঁচ ভেঙে পড়ল। আমাদের মুখে এসে কাচের টুকরো লাগছে। খুবই ভীতিকর লাগছিল, ওই সময়ের ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলছিলেন সাফের। আমি দেখলাম বারান্দায় দাঁড়ানো দুটি মহিলা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একজনের কবজিতে লেগেছে, আরেকজনের কাঁধে। প্রচ- রক্তপাত হচ্ছে। বিপদ হতে পারে জেনেও সাফের তাদের সাহায্য করবেন বলে মনস্থ করেন। তিনি গোলাগুলি একটু স্তিমিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, তারপর তাদের কাছে ছুটে যান।
আমি তাদের নিয়ে নিচতলায় ভূগর্ভস্থ প্রকোষ্ঠে নিয়ে গেলাম। তাদের পাশে বসলাম এবং রক্তপাত বন্ধে সচেষ্ট হলাম। গোলাগুলি থামার পর বাইরে এসে দেখলাম, ভয়াবহ পরিস্থিতি। রাস্তায় বহু মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। বহু মানুষ আহত’। বলছিলেন সাফের। এই কাসা নস্ত্রা রেস্তোরাটি যেখানে অবস্থিত সেখানে বহু মুসলিম এবং আরব বংশোদ্ভূত মানুষের বসবাস। এইটিন্থ অ্যারোডিসমেন্টে প্যারিসের মুসলিমদের অন্যতম একটি আবাসস্থল। এখানের মানুষ এখন আতঙ্ক বোধ করছে।
জামাল নামে ৪৪ বছর বয়স্ক এক বাসিন্দা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন এই হামলার পর মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর কি ধরনের প্রভাব এসে পড়বে সেটা নিয়ে। আমরা হামলাকারীদের মতো নই। তাদের সাথে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু ফরাসীরা আমাদের আর আপন করে নেবে না।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে শার্লি হেবদো পত্রিকায় চালানো হামলায় ফরাসী নাগরিকেরা জড়িত আছে এটা প্রতীয়মান হবার পর প্রশ্ন ওঠে ফ্রান্সে বসবাসরত তরুণ মুসলিমদের জীবনযাত্রায় এর কি প্রভাব নেমে আসবে সেটা নিয়ে। সাফেরের কাছে এর কোনো জবাব নেই। সে একজন আলজেরিয়া বংশোদ্ভূত মুসলিম। তার গল্পটা অনেকটাই লাসানা ব্যাথিলির সাথে মিলে যায়। মালির এই তরুণী অভিবাসী জানুয়ারি মাসে একটি সুপারমার্কেটে হামলা চলাকালে ভীত সন্ত্রস্ত্র ক্রেতাদের তার দোকানের ভেতর লুকিয়ে রেখেছিলেন।
সাফের এবং লাসানা দুজনেই মুসলিম। দুজনেই মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। কিন্তু এই মুসলিমদেরই একটি দল আবার সৃষ্টিকর্তার নামে মানুষ হত্যা করছে কেন? জানতে চাইলে সাফের বলেন, এর সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই’।
সত্যিকারের মুসলমানেরা কখনো মানুষ হত্যা করবে না। এরা অপরাধী। সূত্র : বিবিসি বাংলা