‘জনপ্রতিনিধিদের প্রতি সম্মান দেখাতে ভ্যাট আইন স্থগিত’

SHARE

vcxdfgওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,সংসদ প্রতিনিধি,১৪ জুলাই :  জনগণের প্রতিনিধিদের মতামতের প্রতি সম্মান দেখাতে ভ্যাট আইন স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

গত ৩০ মে শুরু হওয়া এ অধিবেশনে ১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সরকারি ও বিরোধী দলসহ অন্যান্য দলের ২০৭ জন সংসদ সদস্য ৫৬ ঘণ্টা ১৪ মিনিট আলোচনা শেষে গত ২৯ জুন ৪ লাখ ৪০ হাজার ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়। বৃহস্পতিবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের সমাপ্তি-সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করার মধ্য দিয়ে অধিবেশনের ইতি টানেন।

এবারের বাজেট আলোচনায় সরকারের মন্ত্রী ও সরকারি-বিরোধী দলের সদস্যরা ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক, ভ্যাট আইন এবং সঞ্চয়পত্রে সুদ কমানো ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়ে সরব ছিলেন। অনেকেই অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেন। সে প্রসঙ্গ টেনে সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ যে সার্বভৌম এবং সংসদ সদস্যরা যে স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারেন, তা প্রমাণিত হয়েছে। বিরোধী দলের সদস্য সমালোচনা করবেন স্বাভাবিক। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছেন সরকারি দলের সদস্যরাই। তারা অর্থমন্ত্রী এবং সরকারেরও সমালোচনা করেছেন। তাদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বেশ কিছু সংশোধনী এনেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যরা জনপ্রতিনিধি। তারা স্বাধীনভাবে বক্তব্য রেখেছেন। কেউ বাধা দেয়নি। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট স্থগিত করা হয়েছে। এতে ক্ষতি কিন্তু হয়েছে। ভ্যাট আইন স্থগিত রাখায় চলতি অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হবে। এ জন্য হয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে, না হলে উন্নয়ন বাজেট কাটছাঁট করতে হবে। তারপরও জনগণের প্রতিনিধিদের মতামতের প্রতি সম্মান দেখাতে ভ্যাট আইন স্থগিত রাখা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জনগণকে কর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সামান্য ট্যাক্স দিলে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাবেন। বাজেটের ঘাটতি পূরণ হবে, দেশটারও উন্নয়ন হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সরকারের মূলনীতি বৈষম্য কমানো, গ্রামের অর্থনীতির উন্নয়ন করা। সরকার আয়বৈষম্য কমাতে পেরেছে। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিশ্বমন্দা থাকা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে, অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দের মধ্যে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এটা ইতিহাস। এর আগে কোনো সরকার এটা পারেনি। আওয়ামী লীগ পেরেছে। ভবিষ্যতেও পারবে। পত্রিকাগুলো শিরোনাম করার আগে দেখেনি যে কত কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট আর কত বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সাংসদদের নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ করা অর্থ যাতে যথাযথভাবে উন্নয়নের কাজে ব্যয় হয়, সেদিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্যের জের ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বৃষ্টি হলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পানি জমে যায়। পত্রিকায় লিখেছে ধানমন্ডি নদী। ধানমন্ডি একসময় ছিল ধানখেত। এখানে লেক ছিল, বিল ছিল। পান্থপথ রাস্তা ছিল খাল। এই খাল হয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতো। এসব খাল বন্ধ করে বক্স কালভার্ট করা হয়েছে। ফলে আশপাশের পানি নামার সুযোগ নেই। পানিনিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা করা হয়নি। সেগুনবাগিচা খাল, শান্তিনগর খালে বক্স কালভার্ট করা হয়েছে। মতিঝিল বন্ধ হয়ে গেছে। মতিঝিল এখন শুধু নামেই আছে। এখন কেউ জানবেও না এখানে ঝিল ছিল। ধোলাইখাল বন্ধ। প্রশ্ন হলো এসব বন্ধ করল কে? আওয়ামী লীগ বন্ধ করেনি। আইয়ুব খান শুরু করেছিলেন, এরপর জিয়াউর রহমান এসে পুকুর ভরাট করেন। পান্থপথ, সেগুনবাগিচা খাল- এগুলো এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় এসে বন্ধ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জলাধার সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ায় এবং ড্যাপ করায় কোনো কোনো পত্রিকা, টেলিভিশনের মালিক, বিশেষ করে যারা ‘ভূমিখেকো’ তারা এর বিরুদ্ধে বহু কিছু লিখেছিল। তখনকার প্রতিমন্ত্রী মান্নান খানকে চোর বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা যে চুরি করে বড়লোক হয়েছে, সেদিকে হুঁশ নেই।

বাজেট বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের বক্তব্যের জবাব না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এরশাদের উদ্দেশে বলেছিলেন পরে তার কথার জবাব দেবেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী)। আজ এরশাদ অধিবেশনে ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরশাদ সাহেব নেই। সামনাসামনি না হলে উত্তর দিয়ে মজাই থাকবে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেদিন এরশাদকে সামনে পাবেন, সেদিন বক্তব্যের জবাব দেবেন।