ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,রাজনীতি প্রতিনিধি,০৬ জুলাই : ৭ জুলাই থেকে পাল্টে যেতে পারে বিশ্ব রাজনীতির চেহারা।
এদিন জার্মানির হামবুর্গে আয়োজিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হবেন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়াও এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন আরেক ক্ষমতাধর পুরুষ তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান।
বিশেষজ্ঞ মহলের আশা, এর ফলে ঘুচে যেতে পারে সবচেয়ে প্রভাবশালী রাশিয়া ও আমেরিকার এতদিনকার বৈরী সম্পর্ক, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্বে। তবে আপাতদৃষ্টে দুই দেশের কূটনীতিকরাই বড় কিছু আশা করছেন না।
ওয়াশিংটনের অভিজাত রাজনৈতিক মহল বরাবরই ‘রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু’ এবং পুতিনকে ‘খলনায়ক’ হিসেবে তুলে ধরে। তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ট্রাম্প-পুতিন আঁতাতের কথাও দেশটির রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর ব্যাপক চাপ রয়েছে। জোর তদন্ত চলছে তাদের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে ট্রাম্পের একাধিক উপদেষ্টাকে হোয়াইট হাউস ছাড়তে হয়েছে।
ঠিক এমন সময় ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে প্রথম বৈঠকটি হতে যাচ্ছে। তাই এই বৈঠক নিয়ে বিশ্বের রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে। আশার কথা, ট্রাম্প-পুতিন বরাবরই পরস্পরের প্রশংসা করে আসছেন। বিশ্ব রাজনীতিতে স্থিতিশীলতার পক্ষে দুই দেশের সুসম্পর্কের ওপর জোর দিয়ে আসছেন দুই নেতা।
বিশেষজ্ঞ মহল আশা করছে, দৃশ্যমান এই সুসম্পর্ক অচিরেই রুশ-মার্কিন বৈরিতার অবসান ঘটাতে পারে। দুই নেতার এই সাক্ষাতে পাল্টে যেতে পারে বিশ্ব রাজনীতি, ভূরাজনৈতিক কৌশল। তবে দুই নেতারই মধ্যে কে কাকে ছাড়িয়ে যাবেন এ ধরনের মনোভাব রয়েছে, যা যে কোনো মঞ্চেই তাদের কাছে আসার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক বাধা হয়ে উঠতে পারে।
পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, ইউক্রেন সংকট, সিরিয়া পরিস্থিতিসহ আন্তর্জাতিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন দুই নেতা। জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে পুতিন ৯ দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। আর ১০ দেশের নেতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন ট্রাম্প।
হামবুর্গে আয়োজিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতিত্বের দায়িত্বে বর্তমানে রয়েছে জার্মানি। বিশ্বের বিশটি ধনী এবং উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
হামবুর্গের এই সম্মেলনেটি জার্মানের চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। ম্যার্কেল নিজেই স্বীকার করেছেন সেকথা। তিনি বলেন, ‘চলতি বছর বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে জি-টোয়েন্টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ আমি এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর কথা বলবো: সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন, সংরক্ষণবাদ। এসবই আমাদের অ্যাজেন্ডায় রয়েছে। বিশ্ব বর্তমানে এক অস্থির অবস্থার মধ্যে রয়েছে, ঐক্যের অভাব স্পষ্ট।’
বিশ্বে ঐক্যের অভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এবং তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান। আর এই তিন নেতাই জি-টোয়েন্টি বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন এবং এটাও পরিষ্কার যে, তিন নেতাই বৈঠকে নিজেদের অ্যাজেন্ডা এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন। এর্দোয়ান চাচ্ছেন হামবুর্গে জি-টোয়েন্টির পাশাপাশি তুর্কিদের সঙ্গে সমাবেশ করতে, যা জার্মানি ইতোমধ্যে ‘না’ করে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি অন্য কোনোভাবে সমাবেশের আয়োজন করেন কিনা তা দেখার বিষয় রয়েছে।
জি-টোয়েন্টি সামিটে ট্রাম্পের কাছে আলোচনার অবশ্য আরো বিষয় রয়েছে৷ স্টিলের বাড়াবাড়ি রকমের উৎপাদনের বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন তিনি, এমনকি এজন্য নিষেধাজ্ঞার দিকেও যেতে পারেন। আর এটাও পরিষ্কার যে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার যে ঘোষণা ট্রাম্প দিয়েছেন, তার নড়চড় হবে না। ম্যার্কেল এই প্রসঙ্গে বলেছেন যে, ‘যেহেতু প্যারিস চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সেহেতু আমরা হামবুর্গে আলোচনা সহজ হবে আশা করতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ব্যবধান স্পষ্ট এবং সেটা আমি লুকাতে গেলে তা অসততা হবে৷ আমি সেটা করবো না। কেউ যদি মনে করে যে, বিচ্ছিন্নতাবাদ আর সংরক্ষণবাদের মাধ্যমে এই সমস্যার (জলবায়ু পরির্বতন) মোকাবিলা করা যাবে, তাহলে সে বড় ভুল করবে।’
জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথ লড়াই, নারী নীতি এবং স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আলোচনা হবে সম্মেলনে। এসব বিষয়ে অবশ্য ঐক্মত্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে আশাবাদী ম্যার্কেল। শরণার্থী নীতি নিয়ে আলোচনাতেও মতবিরোধ তেমন একটা হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি মুক্তবাণিজ্য নিয়েও জোটের একটি শক্ত অবস্থান চান ম্যার্কেল।
যদিও সম্মেলনে আফ্রিকার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে নেই, তবে আলোচনায় থাকছে আফ্রিকাও। আফ্রিকায় উন্নয়ন সহায়তা অব্যাহত রেখেই বিভিন্ন খাতে সরকারি এবং বেসরকারী তরফ থেকে বিনিয়োগ বাড়ানোর পক্ষে জি-টোয়েন্টির সভাপতিত্বকারী দেশ জার্মানি। এটা সম্ভব হলে ইউরোপের উপর শরণার্থীদের চাপ কমবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, হামবুর্গ সম্মেলন কভার করতে বিশ্বের ৬৫টি দেশের প্রায় পাঁচ হাজার সাংবাদিক অ্যাক্রেডিটেশন সম্পন্ন করেছেন। এই সম্মেলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেও শহরটিতে হাজির হচ্ছেন বেশ কয়েক হাজার প্রতিবাদকারী। আর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে বিশ হাজারের মতো পুলিশ সদস্য। সবমিলিয়ে সপ্তাহান্তে এই বৈঠকের দিকেই নজর থাকবে গোটা বিশ্বের।