ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,ফুলতলা (খুলনা) প্রতিনিধি,০৪ জুলাই : ঢাকা থেকে নিখোঁজ ফরহাদ মজহারকে যশোরে উদ্ধারের পুলিশ ধারণা করছে, স্বেচ্ছায় ভ্রমণে বের হয়ে এই কবি-প্রাবন্ধিক অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। সোমবার মধ্যরাতে খুলনার ফুলতলা থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই ধারণার কথা জানান পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ।
ডিআইজি তার এই ধারণা পোষণ করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, ‘কেননা, একজন সুস্থ মানুষ যেভাবে জার্নি করে, সেভাবেই তিনি ছিলেন। তার সঙ্গে একটি ব্যাগ ছিল, গেঞ্জি ছিল। কিছু টাকাও ছিল। এমনকি মোবাইল চার্জার নিতেও ভোলেননি তিনি।’
র্যাব অপহরণেরে কোনো ইঙ্গিত পায়নি জানিয়ে ডিআইজি দিদার বলেন, ‘একজন সুস্থ মানুষ যেভাবে জার্নি করে সেভাবেই উনাকে আমরা পেয়েছি। এতে করে অপহরণের বিষয়টি প্রমাণ হয় না। মনে হয় না এটা অপহরণ।’
সেক্ষেত্রে ফরহাদ মজহার অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন বলে মনে করেন কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তাই মনে হয। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বা পারিপার্শ্বিকতায় এটাই প্রমাণ করে যে উনি স্বেচ্ছায় ঘর থেকে বের হয়েছেন। তবে আরও তদন্ত করতে হবে।’
সুস্থ হলেও ৭০ বছর বয়সী ফরহাদ মজহার ক্লান্ত বলে তাকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে বলে ডিআইজি জানান। তাকে ঢাকার পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে খবর পাওয়ার পর র্যাব-পুলিশ সম্মিলিতভাবে কাজ করে ফরহাদ মজহারের হদিস বের করে বলে জানান ডিআইজি।
সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি’র সঙ্গে র্যাব-৬ এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলামও ছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ফরহাদ মজহারকে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায়ই পেয়েছেন তারা।
এর আগে, সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় যশোরে পাওয়ার তিন ঘণ্টা আগে ফরহাদ মজহারকে খুলনায় নিজের রেস্তোরাঁয় দেখার দাবি করেছিলেন ‘নিউ গ্রীল হাউস’র মালিক আব্দুল মান্নান। খুলনার নিউ মার্কেটের সামনে এই রেস্তোরাঁটি। মান্নানের কাছে খবর পাওয়ার পর র্যাব জোর অনুসন্ধান শুরু করে।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র্যাব-৬ এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, “গ্রীল হাউজের ওখানে তিনি খেয়েছেন, এ তথ্য পাওয়ার পর আমাদের মাথায় আসে উনি হয়ত ঢাকায় যেতে পারেন। পরে আমরা খোঁজখবর করে তাকে ফলো করে নোয়াপাড়ায় এসে তাকে পাই।”
খুলনা থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব।
প্রসঙ্গত, সোমবার ভোর চারটার দিকে ফরহাদ মজহার একজন পরিচিত ব্যক্তির ফোন পেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়।এরপর থেকে আর তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর সকাল ১০টার দিকে ফরহাদ মজহারের এক আত্মীয় আদাবর থানায় গিয়ে মৌখিক অভিযোগ জানানোর পর পুলিশ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামে।
পরে ফরহাদ মজহারের মোবাইল ফোনের অবস্থানের কথা জানতে পেরে সোমবার বিকাল ৪টা থেকে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ইবরাহিম মিয়া সড়কের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালায় আইনশৃংখলা বাহিনী। র্যাব ট্র্যাকিং করে ওই সড়কে এ অভিযান শুরু করে। ওই সড়ক থেকে একটি পরিত্যক্ত মাইক্রোবাস উদ্ধার করে র্যাব। এরপর রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত র্যাব-৬ এর নেতৃত্বে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা পাঁচটি বাড়িতে তল্লাশি সম্পন্ন করে। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিখোঁজের সাড়ে ১৮ ঘণ্টা পর নোয়াপাড়া থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের তরফ থেকে জানানো হয়, রাত ৯টা ২৫ মিনিটে খুলনার শিববাড়ি মোড়স্থ হানিফ পরিবহনের একটি বাসে (৫০৫ নম্বর কোচের আই-৩ সিটে) করে খুলনা থেকে ঢাকা ফিরছিলেন ফরহাদ মজহার।