কম শুল্কে চাল আমদানি; কমবে দাম

SHARE

imagesওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,২৩ জুন : আমদানি করা চালের ব্যয় কম হওয়ায় সেগুলো খুচরা বাজারে এলে দামের ঊর্ধ্বগতি কমে আসবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ২৩ জুন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে চাল আসা শুরু করেছে।

হাওরে অকাল বন্যা ও ব্লাস্ট রোগের কারণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে দেশে ধানের উৎপাদন ঘাটতি দেখা দেয়। এসব কারণে দিনের পর দিন চালের দাম বাড়তে থাকে।

অবশেষে সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শুল্ক বেশি থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে দ্বিধায় ছিলেন। অবশেষে সরকার শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩ শতাংশ পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়। এ ছাড়া বিনা জামানতে বা শূন্য মার্জিনে ঋণপত্র খোলার সুযোগ দেওয়া হয় আমদানিকারকদের।

এখন ব্যবসায়ীরা মাত্র ১০ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানির সুযোগ পাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত এসআরও জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থলবন্দরগুলোতে এই এসআরও কপি পৌঁছালে কম শুল্কে চালের চালান ছাড়করণের কাজ শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, অনেক ব্যবসায়ীই পাশের দেশ থেকে আমদানি করা চাল বন্দরে মজুদ রাখেন। কিন্তু শুল্ক কমানোর সম্ভাবনা থাকায় চাল ছাড় করে দেশে আনছিলেন না। শুল্ক কমানোর আদেশ পাওয়ার পরপরই গতকাল থেকে স্থলবন্দরে অপেক্ষমাণ চালের ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করে।

কম শুল্কে আমদানি করা প্রতি কেজি চালে ছয় টাকা খরচ কম হচ্ছে বলে জানান আমদানিকারকরা। তারা বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশের বাজারে চালের দাম দ্রুতই কমবে। এদিকে, সরকারি পর্যায়ে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা চাল আগামী ১৫ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে আসবে। ফলে চালের ঘাটতি আর থাকবে না বলে মনে করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা আশা করছেন, অচিরেই চালের দাম অনেকটা কমে আসবে।

বাংলাদেশ চাল আমদানিকারক সমিতির সদস্য বিপ্লব কুমার জানান, শুল্ক কমানোর ঘোষণায় আমদানিকারকরা আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন হিলি, সোনামসজিদ, বুড়িমারী, ভোমরা, বেনাপোলসহ বিভিন্ন বন্দর দিয়ে দ্রুত চাল আসবে। আগে প্রত্যেক আমদানিকারক ৫০ থেকে ১০০ টন চাল আমদানি করতেন। এখন এক হাজার থেকে দুই হাজার টন চাল আমদানির এলসি বা ঋণপত্র খুলছেন। এ চাল ঈদের পর বাজারে পৌঁছাবে। আগে থেকেই বন্দরে আনা ট্রাকবোঝাই চাল এখন বাংলাদেশে ঢুকছে।

বিপ্লব কুমার আরও জানান, গতকাল হিলি বন্দর দিয়ে তারা চাল আমদানি শুরু করেছেন। কিন্তু ঈদের ছুটির কারণে পাইকারদের চাহিদা না থাকায় বাজারে ছাড়তে পারছেন না। পাইকারি ব্যবসায়ীরা যেমন অর্ডার দেবেন, তেমনিভাবে আমাদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হবে বলে তিনি জানালেন। তার মতে, তবে যে পরিমাণ চাল আমদানির প্রক্রিয়া চলছে, তাতে ঈদের পর বাজারে দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা কমে যাবে।

রাজধানীর পাইকারি চালের আড়ৎ বাদামতলীর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, আমদানি করা চাল এখনও ঢাকার বাজারে আসেনি। ঢাকায় চাল এলে দাম অবশ্যই কমবে। তবে এখন ঈদের ছুটির কারণে বাজারে চালের বেচাকেনা কম হচ্ছে। এ কারণে আগের বেশি দামে কেনা চাল এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বেচাকেনা বাড়লে কম দামের চাল আনা হবে। তখন চালের দাম কমবে।

তিনি বলেন, আমদানি করা মোটা চালের দাম কমলে তখন দেশি মিল মালিকরা চালের দাম একই হারে কমিয়ে দেবেন বলে তার বিশ্বাস।

এদিকে, খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, চালের বাজারে আগে থেকে নজরদারি না থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। এ জন্য সরকারে চালের মজুদ তলানিতে পৌঁছে। বর্তমানে এক লাখ ৮০ হাজার টন চাল সরকারের গুদামে মজুদ রয়েছে। এ কারণে গত দুই মাস ধরে চালের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। ফলে চাল কিনতে চড়া দাম দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, শুধু ভারত থেকে চাল এলেই দাম কমবে না। আমদানিকারকরা ভারতে দাম বৃদ্ধির অজুহাত তুলে চড়া দামে বিক্রি করতে পারেন। এ জন্য সরকারি পর্যায়ে আমদানি করা চালের সরবরাহও বাজারে বাড়াতে হবে। এ ছাড়াও চালের বাজার দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন তারা। নতুবা মিল মালিক ও আমদানিকারকরা কারসাজির সুযোগ নিতে পারেন।

বর্তমানে রাজধানীর বাজারে সর্বনিম্ন দামে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। মাঝারি মানের চাল বিআর আটাশ ও লতা ৫১ থেকে ৫২ টাকা ও পাইজাম ৫০ থেকে ৫১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরু চাল মিনিকেট ও নাজিরশাইলের কেজি এখন ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা। তবে ভালো মানের নাজির ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আতপ চালের কেজি ৫০ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। সরু চালের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ।