ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,রাজনৈতিক ভাষ্যকার,০৯ জুন : যে কোনো পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে থাকবে বিএনপি। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে এমন আভাসই পাওয়া গেছে। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সংকটসহ নানা কারণে এখন নির্বাচনমুখী নেতা-কর্মীরা। বিএনপি নেতা-কর্মীদের আগ্রহ ও অপেক্ষা শুধু একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য। জেল-জুলুম, হামলা-মামলা যাই হোক, তা নিয়ে ভাবছে না দলটি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য হচ্ছে : ‘আর কোনো জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে গোল করার সুযোগ দেওয়া হবে না। ’ বিএনপি কেন ভোটে যাবে— এমন প্রশ্নে সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছেন। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাসী দল বিএনপি। তা ছাড়া বিএনপি সামনে নির্বাচনে না গেলে দলের রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিলের উটকো ঝামেলা তো আছেই। এ নিয়ে সরকার বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ মুখে যাই বলুক, তারা বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতাদের ‘সাজা’ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। তাই নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে থাকবে বিএনপি।
বিএনপির বড় একটি অংশই এখন মনে করছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। যে ভুলের খেসারত এখন দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা দিচ্ছেন। দলের একটি অংশ অতিগোপনীয়তার সঙ্গে নির্বাচন বর্জনে বিএনপি-প্রধানকে ভুল বার্তা দিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। সেটাও প্রতিবেশী একটি প্রভাবশালী রাষ্ট্রের পরিকল্পনার অংশ ছিল বলেও মনে করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। তাদের আশঙ্কা, আগামী নির্বাচনেও তারা ওই মিশন নিয়ে কাজ করতে পারে। জানা যায়, বিএনপি-প্রধান এ নিয়ে এখন বেশ সতর্ক। সামনে যেন বেগম জিয়াকে কোনো মহল আর ভুল বার্তা না দিতে পারে তা নিয়েও সজাগ দৃষ্টি রাখছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এরই মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার আভাস দিয়েছেন খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনকেও দিয়েছেন কিছু পরামর্শ। সম্প্রতি এক ইফতার মাহফিলে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই সরকার আপনাদের কাছে যা কিছু আবদার করবে, আপনারা তা বাস্তবায়ন করবেন না। আপনারা জনগণের মতামত নেবেন। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে যে মতামত পাবেন, তার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করবেন। ’ সর্বশেষ গত মঙ্গলবার নির্বাচনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে এক ইফতার মাহফিলে বেগম জিয়া বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ ২০১৮ সাল হবে জনগণের বছর। ২০১৮ সাল দেশের মানুষের বছর হবে এবং দেশ থেকে সব অত্যাচার বিদায় নেবে। ’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, ‘ঈদের পর সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য “সহায়ক” সরকার ঘোষণা করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ নিয়ে সরকারকে চাপে রেখে দাবি আদায়ের কৌশলে থাকবে বিএনপি। সরকার এতে নমনীয় না হলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো “বিকল্প পথ” বের করার চেষ্টা করা হবে। তবে সমানতালে যোগাযোগ থাকবে দেশি-বিদেশি কূটনৈতিক মহলেও। ’ সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিতে অতিগোপনে চলছে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন খালেদা জিয়া নিজেই। মাঠে তিন স্তরের প্রার্থী প্রস্তুত করার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে মামলায় কারও সাজা হলে বা অন্য কোনো কারণে নির্বাচনে যেতে না পারলে দ্বিতীয় স্তর থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনিও কোনো কারণে বাদ পড়লে ‘বিকল্প’ হিসেবে তৃতীয় জনকে বেছে নেওয়া হবে। ৩০০ আসনে সহস্রাধিক প্রার্থী প্রস্তুত বলে জানান বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা।
এদিকে ভোটের জন্য এখনই কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও তৃণমূল নেতা-কর্মীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নিজের নামে পোস্টার, রমজানের শুভেচ্ছাসহ নানা প্রচারণার মাধ্যমে ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সংসদীয় এলাকাগুলোয় সম্ভাব্য প্রার্থীকে ঘিরে চলছে শোডাউন। প্রতিটি জেলায় একাধিক প্রার্থী রয়েছে দলটির। সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রত্যেকেরই আলাদা বলয় রয়েছে। নেতা-কর্মীরাও কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন। জানা যায়, ঈদুল ফিতরের পর বিএনপি চেয়ারপারসন যাবেন লন্ডন। সেখানে পায়ের চিকিৎসাসহ শারীরিক চেকআপের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নিয়ে বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলবেন। দলীয় প্রার্থী করার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের মতামতও গুরুত্ব পাবে। এরপর দেশে ফিরেই সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন বিএনপি-প্রধান। এ নিয়ে সরকার ও কূটনীতিকদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবে দলটি। পর্যায়ক্রমে নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে, যদি সহায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন দেয়, তাতে সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে জনগণ যে জবাব দেবে, কোনো দিনই তারা ৩০টার বেশি আসন পাবে না। নির্বাচন দিলেই দেখা যাবে, তারা কোথায় অবস্থান করছে। ’ গুলশান কার্যালয় সূত্র জানায়, সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই এরই মধ্যে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। নির্বাচনে প্রস্তুত হওয়ার জন্য একটি অংশকে সবুজ সংকেতও দিয়েছেন তিনি। দলের জেলা কমিটি করার ক্ষেত্রেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আসা সাবেক এক ছাত্রনেতাকে ডেকে বিএনপি চেয়ারপারসন সম্প্রতি বলেছেন, ‘তোমাকে জেলার দায়িত্ব দিয়েছি। সেখানে অমুক নেতা নির্বাচন করবে। তাকে সহযোগিতা করো। ’ এরই মধ্যে সাবেক মন্ত্রী-এমপির কয়েকজনকে নির্বাচনে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একঝাঁক সাবেক ছাত্রদল নেতার তালিকাও রয়েছে বিএনপি-প্রধানের হাতে। তাদের অনেকেই সবুজ সংকেত নিয়ে মাঠে নেমেছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে পিছিয়ে থাকা ও বিতর্কিত নেতাদের স্থলে এসব ছাত্রনেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। জানা যায়, আগামী নির্বাচনকে লক্ষ্যে রেখেই দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর এই প্রথম তৃণমূল সফর করলেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সফরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব আসে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল থেকে শুরু করে সিনিয়র ৫১ জন নেতা এতে যোগ দেন। নির্বাচনের সামগ্রিক প্রস্তুতি সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনে আমরা যেতেও চাই। তবে এজন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হলে যে কোনো সময় নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত বিএনপি। ’
সৌজন্যে : দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন।