ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,২৪ এপ্রিল : হেফাজতে ইসলামকে হাতছাড়া করতে চায় না বিএনপিও। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, এ সংগঠনের অনুসারীরা তাদের সঙ্গে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।
তবে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে ঘটা করে আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক সখ্যের বিষয়টিকেও তারা খাটো করে দেখছেন না। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
কিন্তু এ নিয়ে বিএনপি মোটেই উদ্বিগ্ন নয়। বরং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে যে তাণ্ডবলীলা চালানো হয়েছিল, তা কোনোদিন তারা ভুলে যাবেন না।
হয়তো কৌশলগত কারণে সাময়িকভাবে এখন মনে হতে পারে, হেফাজত আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে গেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কয়েকজন যুগান্তরকে আরও জানান, শেষ পর্যন্ত বড়জোর এতটুকু হতে পারে ব্যক্তিস্বার্থের জন্য হেফাজতের কতিপয় নেতা নীতি-আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস করতে পারেন।
কিন্তু বড় অংশ ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে থাকবেই এবং আগামী নির্বাচনে তারা ব্যালটের মাধ্যমে শাপলা চত্বরের জবাব দেবেন।
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে হেফাজতের ভোটব্যাংক আওয়ামী লীগের পক্ষে আনতে এক বছর আগ থেকে সরকারি দলের কয়েকজন নেতা এ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেন।
ওই আলোচনায় কিছুটা গতি আসার পর সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয়। এতে হেফাজতে ইসলামের চেয়ারম্যান আল্লামা শফীর নেতৃত্বে সংগঠনটির সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বৈঠকের পর হেফাজতের দু’জন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। গোপন ওই বৈঠকে হেফাজতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিএনপি নেতারা যেন কোনোভাবে তাদের ভুল না বোঝেন।
কেননা কৌশলগত কিছু কারণে দাবি আদায়ে সরকারের সঙ্গে তারা সাময়িক সখ্য গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আদর্শিক বা মানসিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতের গভীর সম্পর্ক হওয়ার সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে হেফাজতের সঙ্গে পর্দার অন্তরালে সরকারের সমঝোতার নানা গুঞ্জন রয়েছে।
ভোটের রাজনীতিতে তারা এটা করতে পারে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি এখনও নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। নির্বাচনে গেলে ভোটের রাজনীতিতে অনেকের সঙ্গেই সম্পর্ক হতে পারে।
তাই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সে সময় এসব বিষয়ে প্রকৃত অবস্থা স্পষ্ট হবে।
হেফাজতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন বিএনপির এমন এক দায়িত্বশীল নেতা যুগান্তরকে বলেন, কওমি শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়াসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি নিয়ে সরকার অনেক দিন ধরেই হেফাজতের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করছে।
বিষয়টি তারা জানতেন। হেফাজতের পক্ষ থেকে তাদের আগেই জানানো হয়েছে। বলতে পারেন, আমরা পুরো প্রক্রিয়াটির আদ্যোপান্ত জানি।
তিনি বলেন, ইসলামপন্থী এ সংগঠনটির সঙ্গে সম্পর্ক বা সমঝোতা করে আসলে সরকার শেষমেশ লাভবান হতে পারবে না। বরং ভবিষ্যতে হেফাজতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতিবাচক কোনো বক্তব্য দেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেছে।
একই সঙ্গে হেফাজতকে ইঙ্গিত করে বিএনপি জঙ্গিবাদ ও উগ্রপন্থীদের ইন্ধন দেয় বলে ক্ষমতাসীনরা এতদিন যে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার বক্তব্য দিয়ে এসেছে তাও আর পারবে না।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলেই আওয়ামী লীগ এখন হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করছে।
তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের রাজনীতিতে হেফাজত বা ইসলামী দলগুলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে বলে মনে হয় না। অতীতেও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের চুক্তি হয়েছিল।
কিন্তু নির্বাচনের আগে ঠিকই তারা বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। তিনি বলেন, এ সখ্য কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না।
তাই হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক বা সমঝোতা নিয়ে আমরা ততটা উদ্বিগ্ন নই। বরং জাতির কাছে আওয়ামী লীগের আসল চেহারাটাই উন্মুচিত হয়েছে।
শাপলা চত্বরের ঘটনার পর বিএনপি-হেফাজত সম্পর্কে ফাটল ধরাতে নানা মাধ্যমে সরকার চেষ্টা চালাতে থাকে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।
এর অংশ হিসেবে বিএনপি জোট থেকে কৌশলে ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোটকে বের করে নেয়া হয়। আমিনীর সঙ্গে হেফাজত আমীরের সুসম্পর্ক ছিল। আমিনী চলে যাওয়ায় বিএনপির সঙ্গে হেফাজতের যোগাযোগের বড় একটি মাধ্যম সাময়িক সময়ের জন্য হাতছাড়া হয়।
বিএনপির সঙ্গে হেফাজতকে বিচ্ছিন্ন করার ক্ষমতাসীনদের কৌশল বুঝতে পেরে দলটির নীতিনির্ধারকরাও নড়েচড়ে বসেন। সংগঠনটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারে উদ্যোগ নেয়া হয়।
আমিনীর নেতৃত্বে ঐক্যজোট বেরিয়ে গেলে একটি অংশকে জোটে রাখা হয়। ওই অংশটি এখন বিএনপির হয়ে হেফাজতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।
একই সঙ্গে সরকারের সঙ্গে হেফাজতের যে অংশটির যোগাযোগ রয়েছে তাদের বিরোধী অংশকে কাছে টানা হয়। ঢাকা মহানগরে হেফাজতের মূল নেতৃত্বে থাকা আমিনীর ছেলে ও মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব কাজে লাগায় তারা।
ইসলামী ঐক্যজোট ২০ দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কাসেমীকে কাছে টানে বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎও করেন তিনি।
হেফাজত ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে থাকার প্রতিশ্র“তি দেন। এরপর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাসেমীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, যা এখনও অব্যাহত আছে। একই সঙ্গে হেফাজতের গুরুত্বপূর্ণ যেসব নেতা ২০ দলীয় জোটে আছেন তাদেরও কাজে লাগাচ্ছে দলটি।