ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,২০ মার্চ : আগামী মাসে নয়াদিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের পরিকল্পনা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে মমতাকে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার আমন্ত্রণ জানাতে পারে বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের ভোটের পরে কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতার যে বার্তা মমতা দিয়েছেন, তা মেনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসলে এই সফর বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে যাবে বলে মনে করছেন দুই দেশের কূটনীতিকরা।
উল্লেখ্য, তিস্তা চুক্তির জট ছাড়াতে তিস্তা চুক্তির প্রত্যাশার চাপ নিয়েই আগামী ৭ এপ্রিল ভারত সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ই তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে মমতার আপত্তির কারণে তা আটকে যায়। এরপর ভারতে ক্ষমতার পালাবদলের পর বিজেপি নেতা মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ২০১৫ সালে ঢাকা সফরে এলেও তার সুরাহা হয়নি। তিস্তা চুক্তি না হওয়ার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের আপত্তিকে বাধা হিসেবে দেখিয়ে আসছে। এনিয়ে বিজেপিবিরোধী নেত্রী মমতার সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনাই ফলপ্রসূ হয়নি।
এবারের সফরে শেখ হাসিনা বিরল সম্মান নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে নয়া দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকবেন। সেখানেই শেখ হাসিনা ও মমতাকে একসঙ্গে বসানোর পরিকল্পনা চলছে বলে জানা গেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর এখনই তিস্তা চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ঠিকই, কিন্তু দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করা হবে। পাশাপাশি এই চুক্তিতে এত দিন দেওয়াল তুলে রাখা মমতা হাসিনার মুখোমুখি বসলে অনেকটাই ইতিবাচক বার্তা দেওয়া যাবে। এর আগে ২০১০ সালে হাসিনার দিল্লি সফরের সময়েও মমতা দিল্লিতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। উপহারের শাড়ি সঙ্গে নিয়ে দেখা করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। দিদি সম্বোধন করেছিলেন হাসিনাকে। পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও ৭ বছর আগের সেই ছবিরই পুনরাবৃত্তি দেখতে চাইছে দিল্লি।
কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে বলছে, শেখ হাসিনার সফরে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পাঁচটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নয়াদিল্লিতে আমন্ত্রণ জানাবে নরেন্দ্র মোদি সরকার। এ তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও রয়েছে মেঘালয়, অাসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা-মমতার সম্ভাব্য বৈঠকটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। উত্তরপ্রদেশে বিপুল জয়ের পরে নরেন্দ্র মোদি এখন অনেক বলীয়ান। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ইস্যুতে মমতাকে নরম করার একটা সুযোগও তৈরি হয়েছে। এই কারণে ঢাকার প্রত্যাশাও বেড়েছে বহুগুণ।
তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই আমন্ত্রণ স্বীকার করে শেষ পর্যন্ত দিল্লি আসবেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, হাসিনার সফরের এখনও খানিকটা দেরি রয়েছে। আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণও এখনও আসেনি। ফলে এখনই এ নিয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি। তবে অনেকে বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লি এসে হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করার সুযোগকে কৌশলগত ভাবে কাজে লাগাতে পারেন তৃণমূল নেত্রী। যেহেতু রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় শেখ হাসিনাকে আতিথ্য দিচ্ছেন, তাই মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণও তিনিই জানাতে পারেন। কূটনীতিকরা মনে করছেন, এর ফলে আমন্ত্রণ স্বীকার করাটা মমতার পক্ষে সহজ হবে।