‘সাক্ষী দিতে আসা জয়কে গাড়িতে তুলে দিতে এসেছিলেন বিচারক, কি লজ্জার!’

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আইন আদালত  প্রতিনিধি,শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩২  :

অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা প্রশ্নে রুলের ওপর দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) শুনানি শেষে বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

Advertisement

আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। অ্যামিকাস কিউরি সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড.শরীফ ভূইঁয়া।

শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনিরের কাছে আদালত জানতে চান- কেন পৃথক সচিবালয় দরকার। তার জবাবে আইনজীবী শিশির মনির অধস্তন আদালতের বিচারকদের ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন খবরদারির তথ্য তুলে ধরেন। এছাড়া অধস্তন আদালতের বিচারকদেরও বিভিন্ন অনিয়ম উল্লেখ করেন তিনি।

সংবিধানের ২২, ১০৭ ও ১০৯ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ২২ অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগের পৃথকরণের কথা বলা হয়েছে। আদালতসমূহের উপর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে ১০৯ অনুচ্ছেদে। আর ১০৭ অনুচ্ছেদে রয়েছে আদালতের রীতি ও পদ্ধতি-নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধিসমূহ প্রণয়ন করবার ক্ষমতা। সব সময় সুপ্রিম কোর্টের সুপারভিশনে প্র্যাকটিস ডাইরেকশন জারি করা হয়।

‘যেমন- আইনজীবীদের পোশাক পরিবর্তন করা হয়। এটা কিভাবে হয়? এটা ১০৭ অনুচ্ছেদের অধীনে করা হয়। এরপর হাইকোর্টের বিচারপতিদের ভাগ করে দেয়া হয়েছে, কে কোন বিভাগে যাবে (অধস্তন আদালত মনিটরিং)। এটা ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে হয়।’

অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শিশির মনির বলেন, মাঝে মাঝে আমাদের প্রধান বিচারপতি বলেন যে- আমরা দ্বৈত শাসনের মধ্যে আছি। এ দ্বৈত শাসনটা কেমন? আপনারা (হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) অধস্তন আদালত ভিজিট করে অনিয়ম নিয়ম দেখার সুযোগ পাচ্ছেন, এসে রিপোর্ট করছেন, কিন্তু আপনারা কোনো ডিসিপ্লিনারি প্রসিডিংস ইস্যু করতে পারছেন না। কারণ ডিসিপ্লিনারি প্রসিডিংস ইস্যু করতে যেতে হবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের (আইন মন্ত্রণালয়) কাছে। সুপ্রিম কোর্ট এটা (ডিসিপ্লিনারি প্রসিডিংস) ইনিশিয়েট করতে পারে না। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের কাছে পরামর্শের জন্য পাঠায়। অথচ অধস্তন আদালতের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের। সে জায়াগায় শুধুমাত্র সার্কুলার ইস্যু করে তাদের (অধস্তন আদালতের) দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করছে সুপ্রিম কোর্ট।’

Advertisement

শুনানির এক পর্যায়ে এ বিষয়ে শিশির মনির আরও বলেন, ‘অনিয়ম-দুর্নীতি দেখার পর আর সুপ্রিম কোর্ট কিছু করতে পারছে না। তখন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ (আইন মন্ত্রণালয়) দরকার। যখন বদিল করতে চায় ,(তখন সুপ্রিম কোর্ট বদলি করতে) পারছে না। যখন পদোন্নতি দিতে চায় তখন পারছে না। যখন ডিসিপ্লিারি অ্যাকশন নিতে চায়, তখন পারছে না। প্রধান বিচারপতি বলছেন, দিস ইস, হোয়াট ইজ এ দ্বৈত শাসন। এক শাসন প্রধান বিচারপতির হাতে। আরেক শাসন আইন মন্ত্রণালয়ে। যাবে কোথায়? সংবিধান অনুসারে সব করে দিচ্ছি। কিন্তু বদলিও করতে পারিনা পদোন্নতিও দিতে পারি না। ডিসিপ্লিানির অ্যাকশনও নিতে পারি না!’

অধস্তন আদালতের বিচারকদের ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের খবরদারি প্রশ্নে শিশির মনির বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের বাজেট থেকে বাঁচিয়ে নিম্ন আদালতে কম্পিউটার কিনে দিতে হচ্ছে। কারণ সুপ্রিম কোর্ট দেখলেন তারা (অধস্তন আদালতের বিচারক) হাতে সাক্ষী লিখছেন। হাইকোর্ট সারাদেশে মনিটরিং করে দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় সেটা করে না। তারা ফোন কল করে ভয় দেখায়। তারা ফোন করে বলে কাকে জামিন দিতে হবে কাকে জামিন দেয়া যাবে না। সিএমএমকে (মূখ্য মহানগর হাকিম) এসব নির্দেশনা দেন। সিএমএম এটা অন্যদের জানিয়ে দেয়। এটা আরেক ধরণের নিয়ন্ত্রণ।’

অধস্তন আদালতের ১৫ বিচারক নিয়ে দুদকের চিঠি নিয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘গতকাল একটা খবর বেরিয়েছে। অধস্তন আদালতের ১৫ জন বিচারক নিয়ে দুদক চিঠি ইস্যু করেছে। আনফরচুনেটলি এরা অনেকে ঢাকার সিএমএমএ ছিলো। আপনি যদি একজন পেশকারকে জিজ্ঞাসা করেন- ওমুকের নামে এটা হয়েছে তারা বলবে স্যার ঠিক আছে। এটা এমনে এমনে হয়নি। তাদের দিয়ে রাজা বাদশার ক্ষমতা এক্সারসাইজ করা হয়েছে। তাদের কলিগরা (অন্য বিচারকরা) তাদের দ্বারা নির্যাতিত। বিকজ অফ অদৃশ্য হাত। তাদের মাধ্যমে বাকীদের নিয়ন্ত্রণ করতো। এমনকি বদলির জন্য মন্ত্রণালয়ে দরখাস্ত দিলে বলতো আগে অমুকের সঙ্গে আলাপ করো।’

Advertisement

ঢাকার আদালতে একজন সাক্ষীকে সাক্ষ্য শেষে বিচারক এজলাস থেকে নেমে বিদায় দেয়া প্রশ্নে শিশির মনির বলেন, ‘একজন সাক্ষী দিতে গেছিলো নিম্ন আদালতে। সাক্ষী দেয়ার পর বিচারক সাহেব এজলাস থেকে নেমে এসে সাক্ষীর মান যেন ক্ষুন্ন না হয়, তাকে গাড়ি পর্যন্ত আগাই দিয়ে গেছে। কারণ হি  ইজ এ বিরাট সাক্ষী। পত্র পত্রিকায় এটা প্রচার হয়েছে। আল্লাহ না করুন, আবার যদি তিনি নাখোশ হয়ে যান। এই ১৫ জনের ভেতর তিনিও (বিচারক) আছেন। কত কনফিডেন্স লস করলো এরা (বিচারক)। সাক্ষী দিতে আসা জয়কে গাড়িতে তুলে দিতে এসেছিলেন বিচারক; কি লজ্জার! অথচ এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের মধ্যে বাছাই করা ১০০ জনের একজন।’

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির: ফাইল ছবি