মাত্র ৩০০ মিটার খননেই ফিরতে পারে মেঘনার হারানো সবুজ

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),মো. ইব্রাহীম খলিল মোল্লা, মেঘনা (কুমিল্লা) থেকে,বুধবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ  ১০ ১৪৩২  :

একটা সময় ছিল, যখন খাল মানেই ছিল প্রাণের প্রবাহ। পানির স্রোতের সঙ্গে বয়ে যেত কৃষকের স্বস্তি, জমির উর্বরতা আর গ্রামীণ জীবনের সহজ-সরল গল্প। কিন্তু সেই চিরচেনা চিত্র এখন কেবল স্মৃতি। জলবায়ু পরিবর্তন, অনিয়মিত বৃষ্টি, অপরিকল্পিত ভূমি ব্যবহার আর প্রশাসনিক উদাসীনতায় দেশের বহু খাল আজ প্রায় মৃতপ্রায়। অথচ খুব অল্প উদ্যোগেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব সেই প্রাণ। তেমনই একটি বাস্তব চিত্র দেখা যাচ্ছে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামে।

Advertisement

বিনোদপুর গ্রামের পাশ দিয়ে করিমাবাদ-হিজলতলী-দক্ষিণকান্দি হয়ে সেননগর বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল একটি প্রাকৃতিক খাল। কাঠালিয়া নদীর শাখা থেকে প্রবাহিত এই খাল একসময় কৃষি জমিতে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করত। বর্ষার পানি ধরে রাখার পাশাপাশি শুকনো মৌসুমে নদী থেকে ধীরে ধীরে পানি সরবরাহ করে কৃষিকে রাখত সজীব। খালটির ওপর নির্ভরশীল ছিল দক্ষিণকান্দি ও দড়িকান্দি গ্রামের মধ্যবর্তী ঐতিহ্যবাহী বিলটি। শুধু সেচ নয়, খালটি ছিল প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদেরও আশ্রয়স্থল।

তবে আশার কথা হচ্ছে, স্থানীয় কৃষক বাচ্চু মিয়াসহ একাধিক কৃষক নিজেরা খালটি পরিদর্শন করে জানিয়েছেন- মাত্র ৩০০ মিটার পুনঃখনন করলেই পানি প্রবাহ পুনরায় সচল হতে পারে। এর ফলে শুধুমাত্র সেচ সুবিধাই নয়, বরং প্রতি বছর আবাদযোগ্য জমির পরিমাণও বাড়বে, ফিরবে দেশীয় মাছ, সৃষ্টি হবে একটি প্রাকৃতিক জলাধার, যা জলাবদ্ধতা রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Advertisement

মেঘনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহে আলম বলেন, খাল খননের ফলে কৃষকরা সেচ সুবিধা পাবে, যার মাধ্যমে চাষাবাদের ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। এতে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং সামগ্রিকভাবে কৃষি কার্যক্রমে গতি আসবে।

মেঘনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হ্যাপী দাস সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, স্থানীয় কৃষকদের এই বাস্তব সমস্যাটিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং মাঠপর্যায়ে কৃষিকাজে পানির ঘাটতি নিয়ে বাস্তব চিত্র তুলে ধরবেন। যদি প্রাপ্ত তথ্যে খাল পুনঃখননের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত হয়, তবে দ্রুতই প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Advertisement

এই ধরনের বাস্তব ও প্রয়োগযোগ্য উদ্যোগ বাস্তবায়নে বড় কোনো প্রকল্প বা অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ যৌথভাবে একটি ক্ষুদ্র প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে উপকৃত হবেন শত শত কৃষক পরিবার, প্রাণ ফিরে পাবে একটি জনপদ। কারণ, সবুজ ফেরানো মানে শুধু ধান ফলানো নয়। এটি মাটির টানে গড়ে ওঠা মানুষের সম্মান, টিকে থাকা আর ভবিষ্যতের প্রশ্ন।