২০ সেকেন্ডের কিলিং মিশনে অংশ নেয় ১৫ জন (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ৮ ১৪৩২ :

বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় ১৫ জন। হঠাৎ এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে ১৫-২০ সেকেন্ডের মধ্যেই রক্তাক্ত পারভেজ ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে জানিয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্টরা। এ হত্যাকাণ্ডে বেশ কয়েকজন বহিরাগত ও উচ্ছৃঙ্খল কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য অংশ নিয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, তুচ্ছ ঘটনার জেরে খুন হন পারভেজ। মেয়ে দেখে হাসাহাসিকে কেন্দ্র করে মূলত এ হত্যাকাণ্ড। দুর্বৃত্তদের একটি অংশ প্রথমে কড়াইল বস্তি থেকে এসেই পারভেজকে ধাওয়া দিয়ে ছুরিকাঘাত করে। প্রাণ বাঁচাতে পারভেজ প্রাইম এশিয়া ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকলেও শেষ রক্ষা হয়নি। এদিকে জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অন্তত ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। নিহতের চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবির গতকাল রোববার বনানী থানায় মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন থানার ওসি রাসেল সরোয়ার।

মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি ও ইংরেজি বিভাগের তিন ছাত্র মাহাথি, মেহেরাব, আবুজর গিফারী ছাড়া আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। মোট আসামি ৮ জন। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

পুলিশ বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের বেশ কয়েকজন সদস্য এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।  তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বনানী থানার ওসি রাসেল সরোয়ার জানান, সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হবে।

হত্যার ঘটনা ও সিসিটিভির ফুটেজের বর্ণনা দিয়ে ওসি বলেন, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ডের মধ্যে পারভেজকে হত্যা করা হয়। তবে এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, ২৪ বছর বয়সি পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায়। গত শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে নাস্তা করার সময় তার ওপর হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ওসি রাসেল বলেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র ও বহিরাগতরা হঠাৎ ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ওপর হামলা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শী প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল মামুন অপু রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, গত শনিবার সকাল ১০টার দিকে পারভেজ এবং আরও কয়েকজন ক্যাম্পাসে আড্ডা দিচ্ছিলেন, ঠিক তখন আরেক দল শিক্ষার্থী এসে বলেন, তারা নাকি নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে হাসাহাসি করছিলেন। এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সমাধান হয়।  তবে এর কয়েক ঘণ্টা পরেই জাহিদুল ছুরিকাঘাতে নিহত হন।

এ বিষয়ে পারভেজের চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমার ভাই শান্তশিষ্ট স্বভাবের ছিল। কখনো কোনো ঝগড়া-বিবাদে জড়াত না। আমরা বুঝতেই পারছি না, কেন তাকে হত্যা করা হলো। আমরা এর বিচার চাই।’

হাসাহাসিকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে হত্যা: প্রত্যক্ষদর্শীরা ও পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের ধারণা করছে, একেবারে সামান্য তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পারভেজকে হত্যা করা হয়। ইঙ্গিতপূর্ণ হাসাহাসিকে কেন্দ্র করে মূলত ঘটনাটি ঘটেছে, যেটা দুঃখজনক।

বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সরোয়ার বলেন, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিল পারভেজ। ঘটনার দিন বিকেলে ক্যাম্পাসের সামনে ছিল। এ সময় একদল যুবক পারভেজকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

Advertisement

শিক্ষার্থী পারভেজের মৃত্যুর কারণ কি?: শিক্ষার্থী পারভেজের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আল আমিন হোসাইন বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, ঘটনার আগে দুই নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ হাসাহাসির অভিযোগে একদল বিশৃঙ্খল যুবক তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।

শিঙাড়া খাওয়া কাল হলো পারভেজের: পারভেজের কাছের বন্ধু মাজহারুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসের সামনে পারভেজ ও তার দুই বন্ধুকে নিয়ে শিঙাড়া খাচ্ছিলেন। সেখানে আরও দুই নারী শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে ওই দুই নারী শিক্ষার্থীর মনে করে পারভেজ ও তার বন্ধুরা তাদের নিয়ে হাসাহাসি করছে। তারা এ বিষয়ে জানতে চাইলে পারভেজরা অস্বীকার করেন। পরে ওই দুই নারী শিক্ষার্থী গিয়ে বহিরাগত তিনজনকে ডেকে আনেন। ওই তিনজন এসে পারভেজের কাছে হাসাহাসির কারণ জানতে চাইলে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নজরে আসে। তারা বিষয়টি মিটমাট করে দেন। একপর্যায়ে বহিরাগত ওই তিন যুবক আশপাশের থাকা আরও কয়েকজনকে নিয়ে এসে ফটকের বাইরে অবস্থায় নেন।  পরে পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয় ফটক থেকে বের হতেই তারা তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই পারভেজ মারা যায়।

পারভেজ হত্যায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পাঁচজন জড়িত, হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত: এদিকে ছাত্রদল দাবি করছে, পারভেজ হত্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ নেতা দায়ী। সংগঠনটির দাবি-পারভেজের ওপর হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। পারভেজ হত্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মেহেরাজ ইসলামের সঙ্গে সংগঠনটির সোহান এবং তুষারও জড়িত।

এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ও প্রাইম এশিয়ার শিক্ষার্থী পারভেজকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা জড়িত এবং এটি পরিকল্পিত। সেটা না হলে সামান্য তুচ্ছ একটি ঘটনার জেরে একজন মেধাবী ছাত্রকে প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এভাবে হত্যা করা হতো না। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। অন্যথায় ছাত্রদল এসব বৈষম্য মেনে নিবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন।

পারভেজকে হত্যার ঘটনায় প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী মেহরাজ ইসলামকে প্রধান আসামি করে সংগঠনটির পাঁচজনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার বাকি আসামিরা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শোভহান নিয়াজ (তুষার), যুগ্ম সদস্যসচিব হৃদয় মিয়াজী, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির অপর দুই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা আবু জর গিফারি ও মাহাদী হাসান। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এসব নেতাকে চিহ্নিত করে পুলিশ মামলা নিয়েছে।’

Advertisement

পারভেজ হত্যার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনোভাবেই জড়িত নন: অন্যদিকে, গতকাল রোববার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ছাত্রদলের এমন অভিযোগের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এতে বলা হয়, শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজীকে দায়ী করছে ছাত্রদল। তারা হত্যার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন।