মসজিদের ১০ বিঘা জমি দখল, জামাল সরকার বাহিনীর বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও দখলবাজি (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,বুধবার   ২৬ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ১৩ ১৪৩১ :

স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাভারের মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে জড়িত হাজী জামাল সরকার ও তার ভাতিজা শাওন সরকার। চাঁদবাজি, জাল দলিল তৈরি করে মানুষের জায়গা-জমি দখল, মার্কেট দখল, ফ্যাক্টরি দখল, বাসস্ট্যান্ড দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

এছাড়াও জামাল সরকারের পরিবারের বিরুদ্ধে নদীর প্রায় ১০০ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে রাখার অভিযোগও রয়েছে। জামাল সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মামলা থেকে বাঁচতে ও নিজের অবৈধ সম্পদ রক্ষা করতে তার ভাতিজিকে বিয়ে দেন আওয়ামী লীগ নেতা রাজিব সমরের ফুফাত ভাই আরেক আওয়ামী লীগ নেতা নাজিম উদ্দীনের ছেলের সাথে। শুধু তাই নয়, প্রত্যেক মাসে রাজিবকে মোটা অংকের মাসোহারা দিতেন জামাল সরকার।

এলাকাবাসী জানান. জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য, গুলি কেনার জন্য ৬ লাখ টাকা আওয়ামী লীগ নেতা রাজিবের হাতে তুলে দেন জামাল সরকার। ৫ আগস্ট পরবর্তী ভোল পাল্টে তিনি বনে যান বিএনপি নেতা। যদিও বিএনপির দুঃসময়ে কেন দলীয় প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেননি জামাল সরকার ও তার পরিবার। সাধারণ কর্মীরা তাদের কাছে সাহায্যের জন্য দ্বারস্থ হলে বলতেন আমি বিএনপি করি-না, তোমরা তারেক রহমানের সাথে যোগাযোগ করো। বর্তমানে বিএনপির একজন বড় নেতার সহায়তায় তারা সাভার থানা দখলে নিয়ে রমরমা মামলা ও তদবির বাণিজ্য চালাচ্ছেন। সাভার থানার সকল ছাত্র হত্যা মামলায় তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের আসামিদের লিস্ট করেছে সে ও তার ভাতিজা শাওন সরকার। পরবর্তীতে লিস্ট অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মামলা থেকে বাদ দিয়েছেন তারা।

কে এই জামাল সরকার?

ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা জামাল সরকার ও তার অপর দুই ভাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা এলাকায় রাজাকারদের সহায়তা করলেও এরশাদের আমলে শ্যামপুরের চাঞ্চল্যকর মইহা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত। তিন ভাই হত্যা মামলায় সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার জন্য বিপুল অর্থের বিনিময়ে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট তৈরি করেন এবং জেল থেকে বের হন। পরবর্তীতে সেই সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাই করে ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায়, বাতিল হওয়ায় তার উচ্চ আদালতে মামলা করেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নে খুন, হত্যা, রাহজানির জনক: জামাল সরকার স্বাধীনতা পরবর্তী চরমপন্থী নেতা হিসেবে জাসদ লাল পতাকায় যোগদান করেন। পরবর্তীকালে শ্যামপুরের মইহা কে তারা তিন ভাই প্রকাশ্যে, দিবালোকে জবাই করে হত্যা করে; সেই মামলায় তাদের তিন ভাইয়ের যাবজ্জীবন জেল হয়। পরবর্তীকালে এরশাদের আমলে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট তৈরি করে এরশাদের সাধারণ ক্ষমা লাভ করেন।

মসজিদের জমি জোরপূর্বক দখল: হেমায়েতপুরে পূর্বহাটি গ্রামের মসজিদের ১০ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে জামাল সরকারের ছোট ভাই আমান সরকার ও ভাতিজা শাওন সরকার। সরেজমিনে দেখা যায়, সেই জমিতে গরুর ফার্ম ও গরুর ঘাস বপন করে ব্যবসা করছে তারা। কেউ এবিষয়ে প্রতিবাদ করলে তাদেরকে নিজেদের লঠিয়াল বাহিনী দিয়ে টর্চার করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়।

Advertisement

জাল দলিলের মাস্টার মাইন্ড: তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নে জাল দলিল তৈরি করে সরকারি জমি আত্মসাতের হোতা আমান উল্লাহ সরকার ও তার ছেলে শাওন সরকার। তাদের একাজে সহায়তা করেন শ্যামপুর এলাকার বাবুল ও চান্দুলিয়া এলাকার কামরুল। তাদের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে থানায় বিভিন্ন অভিযোগ করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ হতে অজানা কারণে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের শ্যামপুর, পূর্বহাটি ঋষিপাড়া, নগরচর ফুলবাড়িয়া এলাকায় জাল দলিল তৈরি করে অসহায় হিন্দুদের জমি দখল করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছে আমান উল্লাহ সরকার ও শাওন সরকার।

শ্যামপুরের রইসা হত্যা ও সিংগাইরের বাস্তা এলাকায় মনোয়ার হত্যার আসামি: হাজী জামাল উদ্দিন সরকার অবৈধভাবে ধলেশ্বরী নদীর বালু বিক্রি করার প্রতিবাদ করায় বিগত বিএনপি সরকারের আমলে তার আপন ভাতিজা লালন সরকার নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে শ্যামপুর মেইটকা এলাকার রইসাকে। ৫ আগস্টের পরে লালন সরকার চাঁদার দাবিতে অটোচালক মনোয়ারকে আপহরণ করে লালন টাওয়ার-২ এ তার টর্চার সেলে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে লালন সরকার। পরবর্তী কালো টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি রফাদফা করে জামাল সরকার।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল আলম সমরকে নির্বাচিত করার কারিগর: ২০১৬ ও ২০২২ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজিব ও সমরের সাথে আঁতাত করে নিজে প্রার্থী না হয়ে, এমনকি বিএনপি থেকেও যারা প্রার্থী হতে চেয়েছেন তাদেরকে মামলা ও সমর রাজিবকে দিয়ে নির্যাতন করিয়ে পরপর দুটি নির্বাচনে সমরকে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন এই জামাল সরকার।

হলমার্কের মামলায় দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি: বিগত সময় চেয়ারম্যান থাকাকালে মোটা অর্থের বিনিময়ে ভুয়া কোম্পানি খুলে, সেই কোম্পানির নামে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করে, দুদকের দুটি মামলায় প্রায় ০৭ বছর সাজাপ্রাপ্ত আসামি এই জামাল সরকার বর্তমানে সেই মামলায় জামিনে আছেন।

আওয়ামী লীগের আশ্রয়দাতা: বর্তমানে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভরসা স্থল হয়ে দাড়িয়েছে সরকার পরিবার। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে শাওন সরকারে অফিসে বসে আড্ডা। সেই আড্ডায় প্রতিদিন উপস্থিত থাকেন রাজিবের বন্ধু ও ০৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লুতফর খান, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এরজু মেম্বার, যুবলীগ নেতা সমন, রমিজ, মনির ০৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মকবুল, ০২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা অতুল ০৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা সাওার মেম্বার সহ অনেকেই।

মধুমতি মডেল টাউনে চাঁদাবাজি: 
০৫ আগস্ট পরবর্তী আমিন বাজার মধুমতি মডেল টাউনে অবস্থিত ০৯ টি রিসোর্টে তালা লাগিয়ে দেন শাওন ও লালন সরকার। পরবর্তীতে জামাল সরকারের মধ্যস্থতায় সব রিসোর্ট মালিকেরা নিজেরা চাঁদা তুলে সর্বোমোট ৫৬ লক্ষ টাকা জামাল সরকারের হাতে তুলে দেন।

বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার মুন্নীর জমি দখল: সাভারের গেন্ডা এলাকায় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও টকশো আলোচক ব্যারিস্টার মুন্নীর জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়েছে শাওন ও লালন সরকার। এবিষয়ে সাভার থানায় অভিযোগ করা হলেও প্রশাসন নির্বিকার।

ধলেশ্বরী নদী দখল করে বালু ব্যবসা: তেঁতুলঝোড়ায় ধলেশ্বরী নদীর প্রবাহ বন্ধ করে, ব্রীজের দুপাশে নদীর জমি দখল করে, ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে রমরমা বালু ব্যবসা করছে জামাল সরকার। এতে ব্রিজের পিলারের নিচে বালু সরে গিয়ে ব্রিজ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়: সাভারের হেমায়েতপুরে ডিবি পরিচয়ে ব্যবসায়ীদের তুলে নিয়ে সাদা ও কালে রঙের দুটি হায়েস গাড়িতে করে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা বর্তমানে লালন ও শাওন সরকারের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন আগে হেমায়েতপুরের জয়নাবাড়ি এলাকায় পরিবহন ব্যবসায়ী মমিন, কুরবান সহ চার জনকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে লালন, শাওন ও সোহাগ। পরবর্তীতে ৬০ হাজর টাকা দিয়ে মুক্তি মেলে তাদের। এ ব্যপারে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে।

ট্যানারী শিল্প এলাকা ও বিভিন্ন গার্মেন্টসের মালামাল ছিনতাই: সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরা এলাকায় ট্যানারীর ট্রাক ভর্তি বিভিন্ন ড্রাম ছিনতাই লুটতরাজ শাওন সরকারের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এবিষয়ে অভিযোগের ভিক্তিতে তাকে ট্যানারী আর্মি ফাঁড়ির আর্মিরা  থেকে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে জামাল সরকার মুছলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। তাছাড়া হেমায়েতপুরের আলেয়া গার্মেন্টসের ৪২ লক্ষ টাকার মালামাল লুট, ডাড গার্মেন্টসের ২ কোটি টাকার মালামাল ও মেশিনারি জিনিস লুটের অভিযোগ রয়েছে শাওন সরকারের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সাভারের হেমায়েতপুরের বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি: সাভারের হেমায়েতপুরে ফুটপাত, অটোস্ট্যান্ড ও সিএনজি থেকে দৈনিক ৩০ হাজার টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে শাওন সরকারের বিরুদ্ধে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তার উপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। তার এসব কিছু দেখভাল করেন স্থানীয় চাঁদাবাজ আওয়ামী লীগ নেতা লুতফর বাহিনী।