ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫ || চৈত্র ৫ ১৪৩১ :
অবশেষে ধরা পড়লেন চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বুড়ির নাতি সাজ্জাদ ওরফে ছোট সাজ্জাদ (২৭)। একাধিক খুন, পুলিশের হামলাসহ ১৭ মামলার আসামি এই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে ঘোরাঘুুরি করছিলেন এক সহযোগীসহ। খবর পেয়ে লোকজনের সহযোগীতায় শনিবার রাত ১০টার দিকে তাকে পাকড়াও করে পুলিশ। রাতেই কড়া নিরাপত্তায় গ্রেফতারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কর্তৃক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষিত এই টপ টেররকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।
Advertisement
ফেসবুক লাইভে এসে ওসিকে নগ্ন করে পেটানোর হুমকিদাতা সাজ্জাদকে গ্রেফতারের অভিযান বিষয়ে গতকাল রোববার সিএসপিতে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। তালিকাভূক্ত এই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার পুলিশের বড় সাফল্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাকে গ্রেফতারে দীর্ঘদিন থেকে প্রচেষ্টা চলছিল। অবেশেষে পুলিশ সফল হয়েছে তাকে গ্রেফতার করা গেছে। সাজ্জাদকে গ্রেফতারের ফলে নগরীর বায়েজিদ. পাঁচলাইশসহ বিশাল এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বন্ধ হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলামের নেতৃত্বে এডিসি মোঃ জাহাঙ্গীর আলমসহ সিএমপির একটি বিশেষ টিম শনিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাদা পোশাকে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমেপ্লেক্স এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বুড়ির নাতি সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বরে নগরীর অক্সিজেন মোড় এলাকায় ছোট সাজ্জাদকে ধরতে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে বায়েজিদ বোস্তামী থানা, পাঁচলাইশ থানা ও চান্দগাঁও থানা পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। তখন সে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। এসময় তার গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চার জন গুলিবিদ্ধ হন। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি উক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে সিএমপি কমিশনার অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা করেছিলেন।
পুলিশ জানায়, সে ভারতে অবস্থানরত আট হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি বড় সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে চট্টগ্রামে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। ছোট সাজ্জাদ নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিল্ডিং নির্মাণকারী বাড়ির মালিক, ঠিকাদার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছ থেকে বিপুল অংকের চাঁদা দাবি করে, কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের বাড়িতে এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে গুলি ছুড়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। কথায় কথায় গুলি ছোড়ার অনেকগুলো ভিডিও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কিছুদিন আগে সে ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে হত্যার হুমকি দেয়। পুলিশ জানায়, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১৭টি মামলা রয়েছে। গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবরে আনিস, কায়সার ও আফতাব উদ্দিন নামের তিন বালু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার মামলার আসামি সাজ্জাদ।
Advertisement
জানা গেছে, গত বছরের ১৭ জুলাই নগরীর চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। পরের মাসের শুরুতে সে জামিনে বেরিয়ে আসে। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ, এলাকায় সে বুড়ির নাতি হিসাবেও বেশ পরিচিত। ৫ জানুয়ারি পুলিশের উপর গুলি বর্ষণ করে পালিয়ে যাওয়ার পর ২৯ জানুায়রি ফেসবুক লাইভে এসে সাজ্জাদ বায়েজিদ থানার ওসি আরিফুর রহমানকে নগ্ন করে পেটানোর হুমকি দেয়।
ওসিকে হুমকি দিয়ে সাজ্জাদ বলেন, ওসি আরিফ দেশের যেখানেই থাকুক না কেন, তাকে আমি ধরে ন্যাংটা করে পেটাব। ওসি আরিফ থানায় দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আমার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সে আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। আমার স্ত্রীকে আটক করে জেলে নিয়ে গেছে। তাকে আমি ছাড়ব না। পুলিশ না হলে তাকে আমি অনেক আগেই মারধর করতাম। পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা করি বলেই চুপ করে আছি। এ ঘটনায় ওসি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত কয়েক মাস ধরে সাজ্জাদকে গ্রেফতারে মরিয়া হয়ে ওঠে নগর পুলিশ। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর বায়েজিদ থানার কালারপোল এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেন সাজ্জাদ।
ওই ঘটনার একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি ডাকাতির প্রস্তুতির সময় তার ছয় সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শিবির সাজ্জাদ হিসাবে পরিচিত বড় সাজ্জাদের অনুসারি এই ছোট সাজ্জাদ জেল থেকে বের হওয়ার পর এলাকায় যুবদলের নামে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে আসছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাকে গ্রেফতারের পর স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে। তবে তার বাহিনীর অন্য ক্যাডারদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে নগরীর চান্দগাঁও থানার তাহসিন হত্যা মামলায় সাজ্জাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. মফিজ উদ্দীন বলেন, তাহসিন হত্যা মামলায় সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর বিকালে চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় দোকানে বসে চা পান করার সময় তাহসিন নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে কালো রংয়ের একটি গাড়িতে করে আসা লোকজন। ওই ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় তাহসিনের বাবার দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছিল পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে।
Advertisement
টাকার বান্ডিলে ছাড়িয়ে আনার ঘোষণা স্ত্রীর : বান্ডিলে বান্ডিলে টাকা খরচ করে স্বামী ছোট সাজ্জাদকে ছাড়িয়ে আনার ঘোষণা দিলেন স্ত্রী শারমিন। ফেসবুক লাইভে এসে দেয়ার তার এ ঘোষণা এখন ভাইরাল। সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনকে গ্রেফতারের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তার স্ত্রী তামান্না শারমিনের বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে তামান্না শারমিনকে বলতে শোনা যায়, আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে (স্বামী) নিয়ে আসব। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। ভিডিওতে ১৭ মামলার আসামি সাজ্জাদ হোসেনকে ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে জামিনে ছাড়িয়ে আনবেন বলে জানান স্ত্রী তামান্না শারমিন। তিনি বলেন, আমার জামাই শনিবার রাতে গ্রেফতার হয়েছে, এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মামলা যখন আছে, গ্রেফতার হবেই। আপনারা যারা ভাবতেছেন, আর কোনো দিন বের হবে না, তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা।’ প্রতিপক্ষকে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, এত দিন আমরা পলাতক ছিলাম, এখন তোমাদের পলাতক থাকার পালা শুরু। খেলা শুরু হবে এখন। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ভিডিও তারা দেখেছেন। সাজ্জাদ যাতে সহজে মুক্তি না পায় সে ব্যাপারে তারা আইনগত লড়াই চালিয়ে যাবেন।