পল্লবীতে তদন্তে গিয়ে সেই তিন পুলিশ সদস্য রোষানলে পড়ার অভিযোগ (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজধানীর পল্লবী প্রতিনিধি,সোমবার   ১০ মার্চ ২০২৫ ||  ফাল্গুন ২৫ ১৪৩১ :

রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকার বাসিন্দা এক ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম (৩৫)। সম্প্রতি তিনি পল্লবী থানার দুই এসআই ও এক এএসআইসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে টর্চার সেলে নির্যাতন করার কথা উল্লেখ করেন তিনি এবং একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পর ছেড়ে দেন বলে অভিযোগ করেন। রহিম পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছেও এসব অভিযোগ দাখিল করেন।

Advertisement

ওই পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন পল্লবী থানার এসআই শুভ, এসআই জিতু ও এএসআই ফয়সাল। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, আব্দুর রহিমের নামে গত ছয় মাসে অর্থ ও স্বর্ণালংকার আত্মসাতের ঘটনায় পল্লবী থানায় অনন্ত চারটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী। অভিযোগ তদন্ত করতে গেলে তাদের হয়রানি করতেই এই মামলা করেছেন মামলার অভিযুক্ত বিবাদী।

’এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার পর ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে অভিযোগকারী কোনো অপরাধে জড়িত রয়েছেন কি না, বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’আব্দুর রহিমের পরিচিত জিয়াউল হক নামের এক ব্যক্তির সাথে ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর দুবাই ঘুরতে যান। পরে ২৩ নভেম্বর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করলে আব্দুর রহিম তার লাগেজ নিয়ে আগে বের হয়ে বাসায় চলে যান।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জিয়াউল হক বলেন, ‘ওর কাছে সর্বমোট ১১ লাখের বেশি টাকা পাই। গত ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত  তিনবার থানায় অভিযোগ করেছি। এরপর টাকা দেবে দেবে বলে দিচ্ছিল না। থানা পুলিশের কাছেও তাকে ডাকলে যাচ্ছিল না। অবশেষে পুলিশ নিয়ে তার বাসায় যাই, যেন সে এ বিষয়ে কিছু একটা সমাধান করে। সে পুলিশ ও আমার সাথে থানায় আসে এবং প্রতিশ্রুতি দেয় টাকা পরিশোধ করবে। কিন্তু থানা থেকে বেরিয়ে টাকা যাতে না দিতে হয় এ জন্য বিষয়টি অন্য খাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ নির্যাতন করেছে বলে এ ধরনের রটনা রটাচ্ছে।’

Advertisement

মিরপুর-১০ নম্বরের আরফান উদ্দিন চৌধুরী শিমুল নামের এক ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০১৮ সাল থেকে ৩৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৪৩ টাকার ইলেকট্রনিক পণ্য বাকি এনে অদ্যাবধি মূল্য পরিশোধ করেননি আব্দুর রহিম। বরং এই টাকা চাইতে গেলে বিভিন্ন লোকজন নিয়ে দোকানে গিয়ে হুমকিও প্রদান করেন মর্মে অভিযোগ দিয়েছেন এক বাদী। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পল্লবী থানায় অভিযোগ দাখিল করেছেন তিনি।

ভুক্তভোগী শিমুল বলেন, ‘তার কাছে থেকে ২০২০ সাল থেকে এসব টাকা পাই। একাধিকবার চেয়েও পাইনি। অবশেষে আমি জিডি করি।’

জিডির তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই মিরাজ খান বলেন, ‘জিডি তদন্তে আদালতর অনুমতি চেয়েছি। অনুমতি পেলেই তদন্ত শুরু করব।’

অন্যদিকে মিরপুর-৭ নম্বরে ওয়ালটন কম্পানির হোমএপিলিয়েন্স ডিলার মো. জামালের সঙ্গে রহিমের শোরুম থেকে পণ্য এনে বিক্রির সুবাদে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে ব্যাংক থেকে লোন তুলে দেওয়ার কথা বলে এনআইডি, ব্যাংক চেক, ছবিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেন আব্দুর রহিম। পরে চারটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে চারটি অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে জামালকে দেখিয়ে চারটি ব্যাংক থেকে ২৫ লাখ টাকার ক্রেডিট কার্ড নেন। পরে সেই ক্রেডিট কার্ড ফেরত চাইলে তার সাথে বিরোধ হয়। চলতি বছরের ২০ মার্চ এ বিষয়ে জামালকে হুমকি প্রদান করলে ২৫ মার্চ ক্ষিপ্ত হয়ে লোকজন নিয়ে জামালের শোরুম বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রহিমের বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর আব্দুর রহিমসহ তিনজনের নামে ওয়ালটন পণ্য এনে ৩৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৮ টাকা পরিশোধ না করায় জিডি করেছেন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেডের অ্যাডিশনাল অপারেটিভ ডিরেক্টর টি এম আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে আব্দুর রহিমকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে স্থানীয় সূত্র জানায়, আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্ত করতে গেলে বরাবরই পুলিশ সদস্যদের হয়রানির চেষ্টা করা হতো।

Advertisement

আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ওসি অপূর্ব হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উনার (আব্দুর রহিম) বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ হয়েছে। যেহেতু পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এখন তিনি অভিযোগ করেছেন, তাই এখন এসব অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে না। তবে আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে, অনুমতি পেলে আব্দুর রহিমের নামে করা এসব অভিযোগ তদন্ত করা হবে।’