হাসিনা সরকারের সহকারী অ্যাটর্নি রত্না এখন ‘পীর’ (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজধানীর খিলবাড়ীর টেক প্রতিনিধি,শুক্রবার   ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ||  ফাল্গুন ৮ ১৪৩১ :

সৈয়দা জাহিদা সুলতানা রত্না। পেশায় ছিলেন একজন আইনজীবী। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের আমলে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ পান রত্না। তবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে খোদ স্বজনদের ওপরই অত্যাচার চালিয়েছেন সাবেক এ আইনজীবী। তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে করেছেন ঘরছাড়া। তাদের সম্পদও আত্মসাৎ করেছেন। তার অত্যাচারে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন স্বজনরা। এমনকি আইনের দ্বারস্থ হয়েও কোনো সহায়তা পাননি ভুক্তভোগীরা। তবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর এখন পীর সেজে শুরু করেছেন ভণ্ডামি। উদ্দেশ্য—শ্বশুর-শাশুড়ির রেখে যাওয়া সব সম্পদ আত্মসাৎ করা।

Advertisement

তার শাশুড়ির বাড়িটি রাজধানীর খিলবাড়ীর টেক এলাকায়। ওই বাড়িটি বছরের পর বছর দখলে রেখেছেন। বর্তমানে দখলদারিত্ব বজায় রাখতে সেখানে মাজার ব্যবসা, মাদক কারবার, বিদেশিদের আনাগোনাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে মাজারের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে সম্প্রতি এলাকাবাসী ভাটারা থানায় অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের পর থেকে বাড়িটিকে নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ।

রত্না নিজের ননদকে পৈতৃক ভিটা (৯৬৩ খিলবাড়ীর টেক, ৩০ একর বিজয়পথ) ছাড়া করে রেখেছেন গত ২৫ বছর ধরে। ননদের টাকায় একসময়ে পড়াশোনা শেষ করেও এখন তার ভয়েই তটস্থ থাকতে হয় ভুক্তভোগীদের। ৮০ বছরের বৃদ্ধা শাশুড়ি নিজের ঘর থেকেও বের হতে পারতেন না পুত্রবধূর পাঠানো সন্ত্রাসীদের হামলার ভয়ে। রত্নার শ্বশুরবাড়ির ভুক্তভোগী, পুলিশ ও আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে শাশুড়ির দেওয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারেও রত্নার জুলুম-জালিয়াতির বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

জানা গেছে, প্রথমে এক ভাড়াটিয়ার আশ্রিতা হিসেবে বর্তমান শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন রত্না। ওই ভাড়াটিয়ার অনুরোধে বাড়ির মালিক দোহার কলেজের সাবেক ইংরেজি প্রভাষক শামসুন্নাহার রেণু রত্নার উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। এ সময় ভাড়াটিয়ার বাসায় বেশ নম্র-ভদ্র দেখে নিজের ভাই রেজা সারোয়ারের সঙ্গে রত্নার বিয়ে দেন রেণু। কিন্তু বিয়ের তিন মাসের মধ্যেই খসে পড়ে রত্নার মুখোশ। শুরু করেন শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া। পরে আলাদা বাসা ভাড়া করে দেওয়া হয় রত্না ও রেজাকে। সেখান থেকেই দোহার সরকারি কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন। ননদ শামসুন্নাহার রেণু নিজের খরচে রত্নাকে স্নাতকোত্তর পাস করান।

এরপর ননদের কাছে আর্জি জানান আইন কলেজে পড়বেন রত্না। ভর্তির টাকাসহ সব খরচ দেন রেণু। পড়াশোনার জন্যই তাকে ঢাকায় খিলবাড়ীর টেক বাসায় পাঠিয়ে দেন। কিন্তু শাশুড়ির নামে থাকা ওই বাড়িতে ঢুকেই ননদ-শাশুড়ির জন্য বাড়িতে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেন রত্না। পরবর্তী সময়ে যখনই ননদেরা বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন, তখনই সন্ত্রাসী হামলার ভুয়া অভিযোগে থানায়-আদালতে দফায় দফায় মামলা করেন তাদের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে আদালত মামলাগুলো খারিজ করে দেয়।

Advertisement

এর মধ্যে মা তার এক ছেলে ও চার মেয়ের নামে হেবা দলিল করে সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে যান। ননদেরা সম্পত্তি বুঝে নিতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে আবারও মামলা দায়ের করা হয়। কোনোভাবেই বাড়িতে ঢুকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ননদরা রত্নার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত করে পুলিশ অপরাধ তদন্ত ব্যুরো (পিবিআই)। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদালত শাশুড়িকে মাসে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেখানেও আদালতের নির্দেশ অমান্য করেন রত্না। এমনকি প্রতিবেদনে রত্নার জুলুম-নির্যাতন, জাল-জালিয়াতির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। এমনকি শাশুড়ি রত্নাকে নোটারি করে জমি লিখে দিয়েছেন—বললেও তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ পায়নি পিবিআই।

গোয়েন্দা সংস্থাটি বলেছে, তারা রত্নার শাশুড়ি শহরবানুর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সেখানে শহরবানু স্পষ্ট করে বলেছেন, তার ছেলে ও বউ তাকে ভরণপোষণ দিতো না। এমনকি আদালতের নির্দেশও তারা মান্য করেনি। তখন তিনি মেয়েদের সেবায় খুশি হয়ে মেয়েদের নামে জায়গা হেবা দলিল করে লিখে দিয়েছেন। এ ছাড়া রত্নার নোটারি করা কাগজে কোনো টিপসই বা স্বাক্ষর শহরবানু দেননি। রত্না নিজের নোটারির কাগজপত্র সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করেছেন বলেও জানানো হয়।

এদিকে রত্না নোটারির কাগজপত্র নিয়ে দুই দফা জজকোর্টে যান। আদালত দুই দফাই সেটি খারিজ করে দেয়। এরপর রত্না আবার সেই মামলা রিট করান হাইকোর্ট ডিভিশনে। হাইকোর্ট স্টে অর্ডার দেয়। কিন্তু স্টে অর্ডার ছিল রত্নার স্বামী রেজা সারোয়ার নামে। রেজা ২০২২ সালে ৮ মার্চ মারা যান। কিন্তু সে বিষয়টিও হাইকোর্ট ডিভিশনকে জানাননি রত্না।

স্বামীর কবরকে মাজার বানিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড

আইনজীবী রত্নার স্বামী মারা গেলে তাকে ঘরের মধ্যে দাফনের চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ ও এলাকাবাসীর বাধায় লাশ ফ্রিজে রাখেন। পরের দিন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জমি কিনে সেখানে দাফন করা হয়। সেটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে মাজার ব্যবসা। কবিরাজি ঝাড়ফুঁক তো চলেই সেই সঙ্গে নিজের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য রাতে মাইক বাজিয়ে গানবাজনা ও নাচসহ চলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ভেঙে দেয় মাজার। মাজার ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় গ্রামের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দেন রত্না। মামলায় পুরো গ্রাম পুরুষশূন্য হয়। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর আবারও সেখানে রত্নার মাজার ব্যবসা বন্ধ করতে হয়। কিন্তু এবার রূপগঞ্জ থেকে মাজার-কবিরাজি চলে আসে সেই খিলবাড়ীর টেকের বাসায়।

Advertisement

ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে শামসুন্নাহার রেণু বলেন, ‘বাড়িটা মা আমাদের নামে লিখে দিয়েছেন। রত্না তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের বাড়ি দখলে নিয়েছে। আমরা ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে চাই। এই নারীর অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে চাই।’ এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দা জাহিদা সুলতানা রত্নাকে বারবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।