কারা ডেভিল? কাদের ধরতে চলছে অপারেশন ডেভিল হান্ট? (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি), বিশেষ   প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার   ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ৩০ ১৪৩১ :

সারা দেশে শুরু হয়েছে অপারেশন ডেভিল হান্ট। শুরুতেই প্রায় দেড় হাজার গ্রেপ্তারের পর, এই অপারেশন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ‍্যমে উঠেছে নানা প্রশ্ন। অনেকেই জানতে চেয়েছেন, কারা এই ডেভিল? এই অপারেশনের আওতায় কারা পড়বে?

Advertisement

ডেভিলের বাংলা প্রতিশব্দ শয়তান। যা অনেক সংস্কৃতি ও ধর্মে অশুভ শক্তির প্রতীক। মধ্যযুগীয় ইতিহাসের মার্কিন অধ্যাপক জেফরি বার্টন রাসেল ব্যাখ্যা করেছেন, কয়েকরূপে শয়তানকে চেনা যায়, যেখানে সে ঈশ্বর থেকে পৃথক মন্দ একটি শক্তি এবং মানুষের অন্যায়ের প্রতীক।

ডেভিল হান্ট প্রসঙ্গে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন অপারেশন সংশ্লিষ্টরা।

প্রশাসনের উধ্র্বতন অনেকেই এর ব্যাখাও দিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, যারা বেশি শয়তানি করবে তাদের আটক করা হবে, তারাই ডেভিল। কেউ আবার বলছেন, যে কোনও অপরাধীই ডেভিল। আর কেউ বলছেন, দুষ্কৃতিকারী, সমাজবিরোধী, সন্ত্রাসীরাই ডেভিল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, অপারেশন ডেভিল হান্টে মূলত নেতৃত্ব দিচ্ছে পুলিশ বাহিনী। আর তাদের সাহায্য করছে সেনাবাহিনী। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, সেইসব ডেভিলকে আটক করে আইনের আওতায় আনাই অপারেশনের মূল লক্ষ্য।

Advertisement

দেশের বিভিন্ন বিভাগের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও এ নিয়ে কথা বলেন। ডেভিল হান্ট নিয়ে তারা কী ভাবছেন জানান। তাদের কেউ কেউ বলছেন, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই হয়রানির শিকার হবেন না।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ডেভিল মানে শয়তান। যারা বেশি করে শায়তানি করবে, তাদের ধরতেই মূলত এই অভিযান।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ডেভিল হলো তারা, যারা এই সোসাইটির জন্য শত্রু। যে কোনও অপরাধীই ডেভিল। যারা অপরাধী, এই সমাজের জন্য ক্ষতিকর, সোসাইটির জন্য ক্ষতিকর এবং যারা সোসাইটির জন্য স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় তারাই ডেভিল।

সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে, ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার আলম বলেন, অপারেশন ডেভিল হান্টে দুষ্কৃতিকারী, সমাজবিরোধী, সন্ত্রাসী এবং যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, যারা চলমান শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার তৎপরতার সঙ্গে জড়িত। নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যে করেছে বা করবে, তারাই ডেভিল। তাদেরই ডেভিল হান্টের আওতায় আনা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এই অপারেশন নিয়ে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি। এতে যৌথভাবে সবাই মিলে একটা ফোকাসড ওয়েতে কাজ করবে বলে জানান। দেশকে অস্থিতিশীল করার যে চেষ্টা হচ্ছে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই অপারেশন চলবে বলেও আশ্বস্ত করেন। বলেন, এর জন্য আইনানুগ পদ্ধতিতে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সেটা নেওয়া হবে।

তবে উদ্দেশ্য কিংবা কার্যক্রম যেমনই হোক না কেন, এই অপারেশনের নাম নিয়েই আপত্তি তুলেছেন মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন। তার মতে, একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে তিনি মনে করেন, অপারেশন ডেভিল হান্ট অসম্ভব ভীতিকর এবং মানবাধিকার হরণ করার আশঙ্কা তৈরি করে- এমন একটি সামরিক ভাষা এবং অভিযান। বরেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমাদের ভাষায়, আমাদের চিন্তায় চেতনায়, এমন ভীতিকর সামরিক শব্দ ব্যবহার করাটা দুঃখজনক।

Advertisement

তিনি এই অপারেশন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, কারা শয়তান, কারা ভালো এবং কারা অপরাধী- তা নির্ণয় করবে কে এবং কারা? নির্ণয় করার অধিকারী হলো আইন এবং আদালত। নাগরিকদের ভয় হলো, আইন ও আদালতের অনুপস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই না নিজেরা আইন ও আদালত হয়ে ওঠেন?

ছবি: সংগৃহীত