মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের জবাব দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজনীতি প্রতিনিধি,শুক্রবার   ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ১০ ১৪৩১ :

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন ছাত্র উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতারা। অভিযোগ করেন, ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করতেই নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ওয়ান-ইলেভেন এর পাঁয়তারা করছে বিএনপি। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পেজে দেয়া স্ট্যাটাসে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আরেকটা ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে।

Advertisement

বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্য ঘিরে প্রতিবাদমুখর ছাত্র জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সম্মুখসারির শিক্ষার্থীরা। যার শুরুটা করেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে দাবি করেন, ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করতেই নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ এর পায়তারা করছে বিএনপি।

নাহিদের অভিযোগ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর জাতীয় সরকার গঠনে রাজি হয়নি দলটি। বরং রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণাপত্রসহ সব ইস্যুতেই বিরোধী অবস্থান নেয় বিএনপি। হুঁশিয়ারি দেন, গণতন্ত্র ও অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিরোধী কোনো পরিকল্পনা হলে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেবে না ছাত্ররা। পোস্টটি এরপর শেয়ার করেন সারজিস আলম।

অনেকটা একই সুরে পোস্ট দেন আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। বলেন, সরকারে থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংস্লিষ্টতার বিরুদ্ধে তারাও। কেউ রাজনীতি করতে চাইলে সরকারি দায়িত্ব ছেড়েই করবে।

আসিফ মাহমুদ চ্যানেল 24 কে আরও বলেন, আমাদের স্থানটাও স্পষ্ট যে, কেউ যদি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয় তাহলে তার সরকারে থাকাটা নৈতিক জায়গা থেকে উচিত না। এটা আমিও মনে করি। যেহেতু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা নাগরিক কমিটি দল গঠনের চিন্তা করছে সরকারে যে তিনজন ছাত্র উপদেষ্টা আছেন তারা যদি এর সঙ্গে না থাকেন তাহলে তো কোনো বাধা নেই। কিন্তু তিনি (ফখরুল) ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছাড়া নিরপেক্ষ সরকারের যে নির্দেশ দিয়েছেন এটা তো মূলত ১/১১’র সরকারের মতো।

ক্রীড়া উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা দেখেছি কিভাবে ১/১১’র সরকার আওয়ামী লীগকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আনার জন্য পাটাতনটা তৈরি করেছে। বিএনপির সেই সরকার নিয়ে সেইম অভিযোগটা আছে যে,  ১/১১’র সরকার আওয়ামী লীগকে আনার জন্য পাটাতনটা তৈরি করে দিয়েছে শেষ মুহূর্তে গিয়ে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, সংস্কার শেষে ফেয়ার নির্বাচন আয়োজন করাটাই এই সরকারে মূল উদ্দেশ্য। একই সঙ্গে যখন বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন, তখন উনারও মনে রাখা উচিত যে, বিএনপিও নানা সময়ে সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ, রাষ্ট্রীয় পদে নিয়োগ কিংবা পদোন্নতির ব্যাপারে সরকারকে নানাভাবে তদবির করা কিংবা চাপ প্রয়োগ করা এবং আইজি প্রত্যাবর্তন করার সময় এক ধরণের চাপ প্রয়োগ করার মতো পরিবেশ তৈরি করেছে। সরকারকেও কাজ করার স্বাধীনতাটা দেয়া আসলে প্রয়োজন।

জনগণের কারো কারো কথা যখন আমরা শুনি তাদের মধ্যে দেখি অনেকেই মনে করেন যে এটা বিএনপি সরকার। কেননা স্থানীয় পর্যায়ে অনেক স্থানে যারা সরকারি পর্যায়ে দায়িত্বরত থাকেন তাদেরকে চাপ দিয়ে নানা ধরণের সুযোগ সুবিধা বিএনপি নিচ্ছে। সে জায়গা থেকে এ ধরণের একটা অভিযোগ তো জনগণের কাছ থেকেও আসছে।

তিনি আরও বলেন, ৮ আগস্ট সরকার গঠনের আগেই বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, যেটা আমরা পরে জানতে পেরেছি পুলিশের আইজি নিয়োগ দিয়েছেন এবং বিএনপির মানবসম্পদ বিভাগ সম্পাদককে অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও আরও বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে যখন বিএনপির লোকজনকে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে যখন সরকারে তদবির করা ও চাপ দিয়ে নিয়োগ দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। সেটা তো আসলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য শঙ্কার বিষয়।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কিভাবে সম্ভব হবে এমন প্রশ্ন রেখে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, যদি একটা দলের প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজনে কিংবা যারা নির্বাচন আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশনে থাকে তাহলে সেটা কিভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে। এ শঙ্কাটাও আছে এবং সরকারের দিক থেকে আমরা চাই একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে। সেক্ষেত্রে এখনও আমরা এটাই চাই যে, সকল রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে সহযোগিতা করবে। গণঅভ্যুত্থানে এত এত মানুষের জীবনের বিনিময়ে যে সংস্কারের মাধ্যমে একটা নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাচ্ছি, বাংলাদেশের মানুষ চাচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যমতে একটা সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে যদি আমরা একটা সুন্দর নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। সেক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতাও চাই।

Advertisement

এদিকে বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহও তার ফেসবুক পোস্টে চরম সমালোচনা করেন বিএনপি’র। বলেন, দেশ পুনর্গঠনের সুযোগকে অবমূল্যায়ন করে ১/১১ সরকারের ফর্মূলা নিয়ে হাজির হয়েছে দলটি। তাদের কেউ কেউ পায়তারা করছে আওয়ামী পুনর্বাসনের। ছাত্র-জনতার সম্মিলনে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের উত্থান দলটি দেখতে চায় না।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ছবি: সংগৃহীত