ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিনিধি,রোববার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ || মাঘ ৫ ১৪৩১ :
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত ওয়ার্ড বয়দের দাবিকৃত ৫শ’ টাকা না দেয়ায় রোগীকে নিয়ে হেনস্তা ও অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। এছাড়া ওই রোগীর স্বজনদের মারধরও করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রোগীর স্বজনরা।
Advertisement
রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া রোগী স্বপ্না বালা (৩২) জেলার ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের বিশোরীকান্দি গ্রামের প্রাণকৃষ্ণ বালার মেয়ে এবং পাশের মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার খালিয়া গ্রামের রমেন হালদারের স্ত্রী। তার ছোট দুই শিশু সন্তান রয়েছে।
অসুস্থ মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন মা মিনি বালা দাস। ওয়ার্ড বয়দের দাবিকৃত ৫শ’ টাকা না দেয়ায় তাদের অবহেলায় মেয়েকে সুস্থ করে বাড়ি নেওয়া হলো না তার, মেয়ের মরদেহ নিয়ে বাড়িতে যেতে হচ্ছে তাকে। মেয়ের এমন মৃত্যুতে মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে স্বপ্না বালার বুকে ব্যথা হলে রাত ৯ টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে এনে ভর্তি করা হয়। হাসপাতলের চিকিৎসকরা চিকিৎসা দেয়ায় অনেকটা সুস্থ্যও হয়ে উঠেছিলেন।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকালে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় আনোয়ার মোল্যা ও সুইপার সমেস মিয়া এসে ৫শ’ টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় জোর করে অন্য একটি বেডে নিয়ে রোগীকে ওই বেডে ফেলে দেয়। তখন তার ক্যানুলা দিয়ে রক্ত উঠে যায় এবং অক্সিজেনও ঠিকমতো লাগিয়ে না দেয়ায় দুই মিনিটের মধ্যেই মারা যায় স্বপ্না বালা। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে রোগীর স্বজনদের কিল-ঘুষিও মারেন ওই দুই কর্মচারী।
বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রোগীর স্বজনরা।
সরেজমিনে হাসপাতালটির কার্ডিওলজি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের মরদেহের পাশে বসে আহাজারি করছেন মা মিনি বালা। এ সময় তার সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এবং জড়িতদের বিচার চান।
কান্নারত মিনি বালা বলেন, ‘আমার মেয়েকে ঠাস করে এনে এই বেডে ফেলে দিয়ে যায়। তখন আমার ছেলেকেও টেনে নিয়ে মারে ওরা। আমার বুকের সন্তানকে কেড়ে নিয়ে গেছে দুইড্যা লোক। ওদের বিচার না হলে ওরা আরও মায়ের বুক খালি করে দিবে।’
Advertisement
মারা যাওয়া স্বপ্না বালার স্বামী রমেন হালদার বলেন, ‘সকালে হাসপাতালের দুই জন কর্মচারী এসে ৫শ’ টাকা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় জোর করে অন্য একটি বেডে দিয়ে দেয়। তখন তার ক্যানুলা দিয়ে রক্ত উঠে যায় এবং অক্সিজেনও ঠিকমতো লাগিয়ে দেয়নি। ওই সময় স্বপ্না বলছিল, তার বুকে বেশি ব্যথা হচ্ছে। এর দুই মিনিটের মধ্যেই মারা যায়। আমি এর বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময় আমার শ্যালক আকাশ ও মামা শ্বশুর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে তাদের কলার ধরে নিয়ে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যায় এবং সেখানে নিয়ে তাদের কিল-ঘুষি দেয়া হয়।’
এ ঘটনার পর হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুমায়ূন কবীরের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন অভিমুন্য নামে মারা যাওয়া রোগীর এক স্বজন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, তাদের এসে বলেন, এই বেডে রোগীকে রাখা যাবে না। তখন পাঁচ মিনিট সময় চাইলে জোর করে ওই রোগীকে অন্য বেডে নিয়ে যায় এবং ভালো বেড দেয়ার জন্য ৫শ’ টাকা দাবি করেন। ওই টাকা না দেয়ায় অভিযোগকারীর গায়ে হাত দেন তারা এবং ওই বেডে নেয়ার দুই মিনিটের মধ্যে মারা যায় বলে উল্লেখ করেন।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো: হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘গতকাল রাতে স্বপ্না বালাকে মুমূর্ষু অবস্থায় আনা হয় এবং তাকে অবজারভেশন বেডে রেখে যথেষ্ট চিকিৎসা দেয়া হয়, আমাদের চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি ছিল না।
তিনি আরও বলেন, ‘আজ সকালে ওই রোগীকে অবজারভেশন বেড থেকে অন্য একটি বেডে নেয়া হয়। ওয়ার্ড বয়দের টাকা না দেওয়ায় জোর করে ওই বেডে নেয়ার পরে রোগী মারা যায় বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। ওয়ার্ড বয় আনোয়ার এবং সুইপার সমেস মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করব, স্বজনরা সময় চাওয়ার পরেও কেন তাকে বিছানা পরিবর্তন করা হলো। ওরা দুই জন যদি এ ধরনের অন্যায় করে থাকে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’