ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি,রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ || পৌষ ৭ ১৪৩১ :
গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপির দুই কার্যালয় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। জেলা শহরে মাত্র ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দুটি ব্যক্তিগত অফিস খুলে জেলা বিএনপির কার্যালয় দাবি করা হচ্ছে। আর দুটি কার্যালয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন বহিষ্কৃত ও পদত্যাগকারী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও এম এইচ খান মঞ্জু।
Advertisement
এ ছাড়া জেলা বিএনপি ৫ ভাগে বিভক্ত হয়েছে পড়েছে। এতে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব পড়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলা বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠন জেলা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। এতে জনমনে সৃষ্টি হচ্ছে বিভ্রান্তির। আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করায় ওই দুই নেতার রাজনীতি সমর্থন করে না নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর থেকে সেই আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে গোপালগঞ্জ জেলার বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। আর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই গোপালগঞ্জ থেকে বিএনপির অফিস বিলুপ্ত হয়েছিল।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারে পতনের পর রাজনীতিতে আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বহিষ্কৃত নেতা এম এইচ খান মঞ্জু। গোপালগঞ্জ জেলা শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের লঞ্চঘাট এলাকায় তার তিনতলা বিশিষ্ট ভবনকে জেলা কার্যালয় দাবি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। আর ১৭ বছর পর গোপালগঞ্জ জেলা শহরের গেটপাড়ায় একটি টিনের ঘরে বিএনপি জেলা কার্যালয় দাবী করে অফিস উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। আর এই দুইটি কার্যালয়ের মাঝখানের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার।
এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জেলা বিএনপির বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস.এম জিলানী বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জু, সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সাবেক সভাপতি এম এইচ শরফু্জামান জাহাঙ্গীর অপর চারটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভেদ।
Advertisement
গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা কার্যালয় হচ্ছে সেটি যেখানে সভাপতিসহ কমিটির সবাই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। কিন্তু তারা দুজনই ৫ তারিখের পর গোপালগঞ্জ এসে অফিস দুটি খুলে বিএনপির জেলা কার্যালয় দাবি করছে। তাদের এই দাবি আমরা সমর্থন করি না এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
গোপালগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজন সিকদার বলেন, ৫ আগস্টের আগে যেসব নেতাকর্মী রাজপথে ছিলাম তারা কেউই ওই দুই নেতার রাজনীতি সমর্থন করি না। তারা যে কার্যালয় খুলে বসেছেন, সেখানে আমরা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেউ যাই না। এক কথায় বলা যায় তারা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই ব্যক্তিগত অফিস খুলে জেলা বিএনপির কার্যালয় দাবি করছেন।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন হিরা বলেন, জেলা বিএনপির সাবেক সাপতি এম এইচ খান মঞ্জু ও সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ দলের বহিষ্কৃত নেতা। আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৭ বছরে তারা বিশেষ সুযোগ সুবিধা নিয়েছে। বহিষ্কৃত নেতা হওয়ায় তারা দলের কেউ না। জেলা কার্যালয় হতে গেলে দলের আহ্বায়কসহ অন্যান্য নেতাদের থাকতে হবে। ফলে তারা যে অফিস খুলেছে এগুলো বিএনপির জেলা কার্যালয় নয়।
তিনি আরও বলেন, দলের মধ্যে কোনো গ্রুপিং নেই। তবে কারো ব্যক্তিগত পছন্দ থাকতে পারে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম ও কেন্দ্রীয় সেচ্ছাস্বেক দলের সভাপতি এস.এম জিলানীর নেতৃত্বে বিএনপি এক ও ভিন্ন। তাদের নেতৃত্বে বিএনপি এগিয়ে যাবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট তৌফিকুল ইসলাম তৌফিক বলেন, তারা যে অফিস খুলে বসেছে এটা বিএনপির কোনো কার্যালয় নয়, এটা তাদের ব্যক্তিগত অফিস। এটাকে তারা জেলা বিএনপির কার্যালয় দাবী করলে তা হয়ে যাবে না। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনায় জেলা বিএনপির কার্যালয় নেয়া হবে।
দলীয় গ্রুপিং এর বিষয়ে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে কোন গ্রুপিং বা কোন্দল নেই। এখানে আহবায়ক কমিটি রয়েছে। এ কমিটির নির্দেশনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। কেউ যদি বলে থাকে তিনি একটি গ্রুপ পরিচালনা করছে তবে সেটা ভুল।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জুর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে জেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, আমি বিগত দুইবারের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলাম। জেলা বিএনপির সভাপতিও ছিলাম। তবে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি আমার পছন্দ হয়নি, যার কারণে আমি ওই কমিটি নিয়ে অনাস্থা দিয়েছি। তবে পদত্যাগ করিনি। আর বিগত কয়েক বছরে মামলা হামলার জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপির কোনো কার্যালয় রাখা সম্ভব হয়নি। গত ১৬ বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছে। এই কার্যালয় উদ্বোধনের মাধ্যমে গোপালগঞ্জে বিএনপির দলীয় কর্মকাণ্ড আরও বেগবান হয়েছে। আগামী দিনে আবারো আমি সভাপতি হবো। এটি দলের হাইকমান্ড থেকে আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। তখন আর এ অফিস নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকবে না।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, ওই দুই নেতা বিগত সরকারের নানা সুবিধা নিয়েছে। তারা উভয়ই আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের সঙ্গে লুকিয়ে দেখা করতেন। গত কয়েক বছরে বিএনপির বিভাগীয় কোনো প্রোগ্রামে তাদের পাওয়া যায়নি। এখন তারা দলের সুবিধা নিতে ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসিত করতেই বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করে তারা ব্যক্তিগত অফিস খুলে জেলা কার্যালয় দাবি করছে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হলে আহ্বায়ক কমিটি সেখান থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। কিন্তু সেখানে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি বা জেলা বিএনপির সহযোগী কোনো সংগঠন যায় না। তাহলে কীভাবে ওই দুইটি ব্যক্তিগত অফিস জেলা কার্যালয় হয়? তারা তাদের ব্যক্তিগত অফিস খুলে যদি জেলা কার্যালয় দাবি করে, তাহলে সেটি জেলা বিএনপি ঘৃণ্যভাবে প্রত্যাখ্যান করে। এবং তাদের এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
ছবি: সংগৃহীত