https://youtu.be/VtL-x_rT-QU?si=3bK3aFXKZ4XWheIl
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আইন আদালত, মঙ্গলবার ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ || অগ্রহায়ণ ১৮ ১৪৩১ :
তোমরা ভালো থেকো, ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করিও- এ কথা বলেই দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে আদালতে কান্না শুরু করেন পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। এসময় তার দুই সন্তানও বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিব শুনানি শেষে বাবুল আক্তারের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শুনানি শেষে তাকে নেওয়া হচ্ছিল হাজতখানায়। এসময় আদালতেই বাবুল আক্তার তার দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকেন। দুই সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। সন্তানদের আদর করতে থাকেন। এ দৃশ্য দেখে অনেকের চোখেই পানি চলে আসে। কান্না করতে থাকেন উপস্থিত অনেকে।
এদিন বাবুল আক্তারের সাতদিনের রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে বাবুলের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তাকে আদালতে হাজির করে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমাম।
শুনানিতে বাবুল আক্তারের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হয়েছে। মিতু হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন। মিতু হত্যা মামলায় জোর করে তার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। পিবিআই অফিসে তাকে ৫৩ ঘণ্টা আটকে রেখে জবানবন্দি দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি নির্দোষ। তার রিমান্ড বাতিল চাই।
অন্যদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রবিউল ইসলাম মামলার সুষ্ঠু তদন্তসহ তিন কারণে বাবুলকে রিমান্ডে নিতে যুক্তি দেখান। তিনি বলেন, তাকে রিমান্ডে নিলে ভয়েস রেকর্ড কীভাবে বিদেশে ইলিয়াসের কাছে পাচার করেছেন তা জানা যাবে। এছাড়া এ ভিডিও ধারণ করতে তাকে কারা সহযোগিতা করেছেন তা জানা যাবে।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হেমায়েত উদ্দিন হিরোন আসামি বাবুলকে রিমান্ডে দিতে শুনানি করেন।
Advertisement
যে তিন কারণে বাবুলের রিমান্ড মঞ্জুর
১. বাবুল আক্তারকে জেলা কারাগারে থাকাকালীন কীভাবে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য-উপাত্ত বিদেশে থাকা আসামি ইলিয়াসের কাছে সরবরাহ করেছেন এবং কার কার সঙ্গে কথা বলেছেন তা জানার জন্য।
২. বাবুল আক্তার কার প্ররোচনায় মিতু হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচারকার্য ব্যাহত করার জন্য ভিডিও প্রকাশে সহযোগিতা করেছেন, উক্ত প্ররোচনাকারী ব্যক্তির নাম, ঠিকানা সংগ্রহসহ গ্রেফতারের জন্য।
৩. বাবুল আক্তার কারাগারে থাকাকালীন সময়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে বাদীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মানহানিকর ভয়েস রেকর্ড প্রস্তুত করেছেন কি না, ভিডিওতে থাকা ভয়েস রেকর্ডে বাবুল আক্তার বাদী বনজ কুমারের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন মর্মে শোনা যায়। সেই ভয়েস রেকর্ডে থাকা কণ্ঠস্বর বাবুল আক্তারের কি না বা ভয়েস রেকর্ডের অপর প্রান্তে কে ছিলেন তা জানা প্রয়োজন। মামলাটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে অত্র মামলার এজাহারনামীয় আসামি মো. বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখিয়ে সাতদিনের রিমান্ড প্রদানের আদেশদানে মর্জি হয়।
এর আগে বুধবার (৯ নভেম্বর) তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম। আদালত তার উপস্থিতিতে এ বিষয় শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দিন ধার্য করেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন ও পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগ আনা হয়। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন বাবুল আক্তারের ভাই মো. হাবিবুর রহমান লাবু (৪৫) ও বাবা মো. আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া (৭২)। মামলাটির তদন্ত চলছে।
বনজ কুমার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তার নেতৃত্বাধীন তদন্ত সংস্থা পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রো দেশের চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলা তদন্তাধীন থাকাকালে প্রধান আসামি হিসেবে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের নাম বেরিয়ে এলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্ত ভিন্ন খাতে নিতে এবং বাংলাদেশ পুলিশ ও পিবিআইয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে জেলে থাকা বাবুল আক্তার এবং অপর আসামিরা দেশে ও বিদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক বিভিন্ন অপকৌশল-ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাবুল আক্তার ও অন্য আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় কথিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন ৩ সেপ্টেম্বর বিদেশে পলাতক থাকা অবস্থায় তার ফেসবুক আইডি থেকে ইউটিউব অ্যাকাউন্টে ‘স্ত্রী খুন স্বামী জেলে, খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে একটি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে তদন্তাধীন মিতু হত্যা মামলার তদন্তকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে উল্লেখিত ভিডিও প্রচার করেন। আসামি ইলিয়াস হোসাইনের ভিডিওতে প্রচারিত বক্তব্যে দেশের ভাবমূর্তি এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উসকানি, বাংলাদেশ পুলিশ এবং পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই ও বিশেষ করে বাদীর (বনজ কুমার মজুমদার) মান-সম্মান ও সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছে, যা দেশের মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে।
এজাহারে ওই ভিডিওতে প্রচারিত বিভিন্ন অভিযোগ খণ্ডন করে বলা হয়, আসামি ইলিয়াসের বক্তব্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্তসহ রাষ্ট্রের মুসলিম-হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা-বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালিয়েছে।
Advertisement
শুধু মিতু হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচারকাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ২ নম্বর আসামি মো. হাবিবুর রহমান লাবু, ৩ নম্বর আসামি আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ও ৪ নম্বর আসামি বাবুল আক্তারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় এবং সার্বিক সহযোগিতায় ১ নম্বর আসামি ইলিয়াস হোসাইন অসৎ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ পুলিশ ও বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই এবং বাদীর মান-সম্মান চরমভাবে ক্ষুণ্ন করার জন্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্য সহকারে ফেসবুক আইডি ও ইউটিউব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন।
আদালতে কাঁদলেন বাবুল আক্তার