ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, মঙ্গলবার ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ || অগ্রহায়ণ ১৮ ১৪৩১ :
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় শাহিদা আক্তার (২২) নামে সেই তরুণীকে গুলি করে হত্যা করেছে প্রেমিক। গতকাল ভোরে ভোলার ইলিশা থেকে মনপুরা পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়কে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটিও উদ্ধার করা হয়। এর আগে শনিবার দুপুর ১২টায় উপজেলায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের সমসপুর এলাকার দোগাছী সার্ভিস সড়ক থেকে ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
Advertisement
তন্ময় রাজধানীর ওয়ারীর বনগ্রাম এলাকার প্রয়াত শফিক শাহর ছেলে। শনিবার রাত ১২টার পর নিহতের মা জরিনা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলাটি করেন। রোববার সকালে সে মামলায় একমাত্র নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। নিহতের শরীরে আটটি গুলির ছিদ্র ছিল। সে সময় লাশের পাশে কয়েকটি গুলির খোসাও পড়ে ছিল। এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. আজাদ বলেন, শাহিদাকে হত্যার পর থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে তৌহিদকে গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের একাধিক দল কাজ করছিল। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি তৌহিদ ভোলা রয়েছে। রোববার রাতে আমাদের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। সেখান থেকে তৌহিদকে গ্রেপ্তার করে। পরে তৌহিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে যে অস্ত্র দিয়ে শাহিদাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সেটি কেরানীগঞ্জের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
হত্যার ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, তৌহিদ আমাদের জানিয়েছে, শাহিদার সঙ্গে তৌহিদের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমের সম্পর্ক থেকে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে। এর মধ্যে তৌহিদ অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিষয়টি শাহিদা জানতে পারে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে একাধিকবার ঝগড়াঝাঁটি হয়। তাদের সম্পর্কের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তবে গত শুক্রবার রাতে তৌহিদ শাহিদাকে মুঠোফোনের মাধ্যমে ওয়ারীর বাড়ি থেকে মাওয়ায় ইলিশ খাওয়ার কথা বলে ডেকে আনে। তারা সারারাত এক্সপ্রেসওয়েতে ঘোরাঘুরি করে। শনিবার ভোরে তারা শ্রীনগর দোগাছী এলাকায় হাঁটাহাঁটি করছিল। এ সময় শাহিদা বিয়ের জন্য চাপ দেন। তৌহিদ বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে তৌহিদের সঙ্গে থাকা পিস্তল দিয়ে শাহিদাকে গুলি করে হত্যা করে। যে পিস্তলটি দিয়ে শাহিদাকে হত্যা করা হয়েছে এটি গত ৫ আগস্ট ওয়ারী থানা থেকে লুট করেছিল তৌহিদ।
Advertisement
নিহত শাহিদা ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার বেগুনবাড়ীর বরিবয়ান এলাকার প্রয়াত আবদুল মোতালেবের মেয়ে। তিনি ঢাকার ওয়ারী এলাকায় ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। গত শনিবার ভোরে শাহিদা ও তৌহিদকে সার্ভিস লেনে হাঁটতে দেখেছেন পথচারীরা। কিছুক্ষণ পর অন্য পথচারীরা শাহিদার রক্তাক্ত লাশ সড়কে পড়ে থাকতে দেখেন। তার পিঠে একাধিক গুলির চিহ্ন ছিল। পরে তারা বিষয়টি পুলিশকে জানান। শাহিদার মা জরিনা বেগম বলেন, ৬ বছর ধরে তার মেয়ের সঙ্গে প্রেম করছিল তৌহিদ। বিষয়টি তৌহিদের পরিবারের লোকজন জানত। তিন মাস আগে শহিদা ও তৌহিদা সবার অজান্তে চাঁদপুরে ঘুরতে গিয়েছিল। সেখানে তৌহিদ আমার মেয়েকে মারধর করে। পরে পুলিশ এসে দু’জনকে ধরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে তৌহিদের পরিবারের লোকজন। তখন থেকে প্রেমের বিষয়টি আমি জানতে পারি। এরপর তৌহিদের বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ-খবর নেই। জানতে পারি তৌহিদ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ছেলে হিসেবেও ভালো না।
Advertisement
পরে আমরা মেয়েকে ওই ছেলের সঙ্গে মেলামেশা করতে নিষেধ করি। তৌহিদ বিভিন্ন সময় আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যেত। প্রেমের অপরাধে তৌহিদের মা আমার মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। আমি মেয়েকে বাড়ি থেকে বের হতে দিতাম না। শুক্রবার শাহিদাকে ফুসলিয়ে ফোনের মাধ্যমে বাড়ি থেকে বের করে নেয়। শেষপর্যন্ত আমার মেয়েটাকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।