বাল্যবিবাহের প্রকোপে ঝুঁকির মুখে মেঘনার মেয়েদের ভবিষ্যৎ

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),সাংবাদিক ইব্রাহীম মেঘনা থেকে, বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৫ ১৪৩১ :

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় বাল্যবিবাহের প্রকোপ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। স্থানীয় শিক্ষক ও সুশীল সমাজের দাবি, জন্ম নিবন্ধনে বয়স বাড়িয়ে কিশোরীদের বাল্যবিবাহে বাধ্য করছেন কিছু অভিভাবক। এতে ঝুঁকির মুখে পড়ছে মেয়েদের ভবিষ্যৎ।

Advertisement

মুজাফফর আলী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ খন্দকার আব্দুর রউফ বলেন, “আমাদের স্কুলেই এই বছর প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। এটি হতাশাজনক এবং সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই বাল্যবিবাহ বন্ধে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হ্যাপী দাসকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছি। পরে তিনি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে অভিভাবকদের সচেতন করতে একটি সমাবেশ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”
স্থানীয় সুশীল সমাজের মতে, বাল্যবিবাহের পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে সচেতনতার অভাব। মেয়েদের শিক্ষার গুরুত্ব ও ব্যক্তিগত উন্নয়নের চেয়ে অনেক পরিবার বিয়েকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এতে করে মেয়েদের শৈশব, শিক্ষার অধিকার এবং ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে শুধু তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। মেয়েদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি, শিক্ষার প্রতি পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। তাছাড়া বাল্যবিবাহ শুধু মেয়েদের শৈশব কেড়ে নেয় না, এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই প্রবণতা রোধে সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।
চিকিৎসকদের মতে, অল্প বয়সী কিশোরীদের বিয়ে দিলে তাদের শারীরিক ক্ষতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমুখী। তাদের শরীর সাধারণত সন্তান ধারণের জন্য প্রস্তুত থাকে না। গর্ভাশয় পূর্ণবিকশিত না হওয়ায় গর্ভধারণের সময় বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্ক মায়েদের মধ্যে প্রসবকালীন দীর্ঘ সময় চাপ পড়ার কারণে ফিস্টুলা (মূত্রথলি এবং যোনিপথের মধ্যে ছিদ্র) হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যানুসারে, ১৫-১৯ বছর বয়সী মায়েদের প্রসবকালীন মৃত্যু ঝুঁকি প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের তুলনায় অনেক বেশি।
এদিকে বাল্যবিবাহ বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষক ও সচেতন মহল। নিয়মিত নজরদারি এবং বাল্যবিবাহে জড়িত অভিভাবকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। পাশাপাশি স্কুল-কলেজগুলোতে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

Advertisement

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হ্যাপী দাস বলেন, “বাল্যবিবাহ রোধে আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। এই উপজেলায় আমি নতুন যোগদান করেছি, এখনো এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”