বগুড়ায় ‘মা’ হত্যায় নতুন মোড়, নারীসহ গ্রেপ্তার ৩ (ভিডিও)

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বগুড়ার দুপচাঁচিয়া প্রতিনিধি,শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১ ১৪৩১ :

বগুড়ার গৃহবধূ উম্মে সালমাকে হত্যার পর ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনায় নতুন মোড় নিয়েছে। ওই গৃহবধূ‌কে হত্যার সা‌থে জ‌ড়িত এক নারীসহ তিন‌জন‌কে গ্রেপ্তার ক‌রে‌ছে পুলিশ। গো‌য়েন্দা তথ‌্য ও প্রযু‌ক্তির ব‌্যবহার ক‌রে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতভর অভিযান চালি‌য়ে তা‌দেরকে গ্রেপ্ত‌ার করা হয়।

Advertisement

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নিহত উম্মে সালমার বাসার চারতলার ভাড়াটিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের উত্তর সাজাপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী মাবিয়া বেগম (৫০), তার সহযোগী গুনাহার ইউনিয়নের তালুচ পশ্চিমপাড়ার আব্দুর রহিমের ছেলে মোসলেম উদ্দিন (২৬) ও একই এলাকার নিখিল রবিদাসের ছেলে ভ্যান চালক সুমন রবি দাস (২৮)।

এদি‌কে, ওই গৃহবধূ‌কে হত‌্যার দা‌য়ে গ্রেপ্তার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান পুলিশী রিমা‌ন্ডে হত‌্যায় জ‌ড়িত থাকার কথা অস্বীকার ক‌রে‌ছেন।

দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের সময় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ওয়াইফাই রাউটার এবং মোবাইলের সূত্র ধরে তারা প্রথমে আটক করেন বাসার ভাড়াটিয়া মাবিয়া আক্তারকে। মাবিয়া পুলিশকে জানান, চার মাস আগে উম্মে সালমার ওই বাসা ভাড়া নিয়ে তিনি এখানে মাদক ও অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

বিষয়টি টের পাওয়ার পর উম্মে সালমা ও তার স্বামী আজিজুর রহমান ভাড়াটিয়া মাবিয়া আক্তারকে এক মাস ধরে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলছিলেন। তার কাছে দুই মাসের ভাড়াও পাওনা ছিল। বিষয়গুলো নিয়ে মাবিয়া বাড়ির গৃহকর্ত্রী উম্মে সালমার উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই তিনি তার সহযোগী ও মাদক ব্যবসায়ী সুমন চন্দ্র সরকার এবং মুসলিমকে নিয়ে গেল শনিবার উম্মে সালমা কে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

Advertisement

ওসি আরও জানান, পরিকল্পনা মতো ঘটনার সময় মাবিয়া প্রথমে ওই বাসায় প্রবেশ করেন। পরে মোবাইল ফোনে ডেকে নেন দুই সহযোগী সুমন ও মুসলিমকে। তারা দুজন বাসায় ঢুকেই চেতনানাশক স্প্রে করে উম্মে সালমাকে অচেতন করেন। এরপর তার নাক মুখ ও হাত বেঁধে বাসার ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে তারা তিনজন সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।

ওসি ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘আটকের পর মাবিয়া সুমন ও মুসলিম উম্মে সালমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার পুরো বিবরণ দিয়েছে। পরে তাদের দেখানো জায়গা থেকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া জিনিসপত্রগুলো উদ্ধার করে। বিকেলে তাদের তিন জনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দে‌খি‌য়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নেওয়ার জন্য বগুড়ার আদালতে নিয়েছে পুলিশ।’

এদি‌কে, গত ১১ ন‌ভেম্বর গৃহবধূ উম্মে সালমা হত‌্যাক‌া‌ণ্ডের সা‌থে জ‌ড়িত থাকার অভিযোগে তার ছে‌লে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে (১৯) গ্রেপ্তার ক‌রে। প‌রদিন ১২ ন‌ভেম্বর দুপু‌রে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-১২ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর এহতেশামুল হক খান সাংবা‌দিক‌দের বিষয়‌টি জানান।

 

মেজর এহতেশামুল হক খান ব‌লেন, ‘তথ‌্য প্রযু‌ক্তির সহ‌যো‌গিতায় নিহ‌তের স্বামী আজিজুর রহমান, ছে‌লে সাদ বিন আজিজুর রহমানসহ আরেও একজন‌কে জিজ্ঞাসাবাদের জন‌্য র‌্যাব অফি‌সে ডা‌কা হয়। জিজ্ঞাসাবা‌দের এক পর্যা‌য়ে সাদ তার মা‌কে হত‌্যার কথা স্বীকার ক‌রে। হত‌্যার কারণ হি‌সে‌বে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা সাংবা‌দিক‌দের জানান, প্রাথ‌মিকভা‌বে প্রেম ঘ‌টিত বিষয় এবং হাত খরচের টাকার জন্য সাদ তার মা‌কে হত‌্যা ক‌রে‌ছে ব‌লে জান‌তে পে‌রেছি।’

বগুড়া জেলা পু‌লি‌শের মুখপাত্র অতিরিক্ত পু‌লিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার ব‌লেন, ‘কিছু তথ‌্য প্রমা‌ণের ভি‌ত্তি‌তে আমরা তিন জন‌কে গ্রেপ্তার ক‌রে‌ছি। প্রাথ‌মিক জিজ্ঞাসাবা‌দে তারা কিছু তথ‌্য আমা‌দেরকে দি‌য়ে‌ছে সেগু‌লো আমরা যাচাই কর‌ছি। তাদের‌কে কো‌র্টে প্রেরণ করা হ‌য়ে‌ছে। তারা যেসব কথা বল‌বে, যেসব তথ‌্য আমরা যাচাই কর‌ব। বিষয়‌টি এখনও তদন্তাধীন র‌য়ে‌ছে।’

 

ঘটনার সা‌থে নিহ‌তের ছে‌লে জ‌ড়িত থাকার প্রস‌ঙ্গে তি‌নি ব‌লেন, ‘এমন কোনো প্রমাণ এখনও আমা‌দের কা‌ছে নেই। সে র‌্যা‌বের কা‌ছে স্বীকার কর‌লেও আদাল‌তে ১৬৪ ধারায় স্বীকা‌রো‌ক্তিমূলক জবানব‌ন্দি দেয়‌নি। এরপ‌রে তা‌কে আমরা প্রাথ‌মিক জিজ্ঞাসাবা‌দের জন‌্য রিমা‌ন্ডে নিই। সে এখনও রিমা‌ন্ডেই আছে।’

মাবিয়া বেগম (৫০),মোসলেম উদ্দিন (২৬),সুমন রবি দাস (২৮)