ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বগুড়ার দুপচাঁচিয়া প্রতিনিধি, শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪ || অগ্রহায়ণ ১ ১৪৩১ :
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গৃহবধূকে হত্যার পর ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনাটি নতুন মোড় নিয়েছে। পুলিশ বলছে, নিহতের ছেলে নয়, বাড়ির ভাড়াটিয়াই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
Advertisement
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে দুপচাঁচিয়া থানার পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের সময় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া মোবাইল ও ওয়াইফাই রাউটারের সূত্র ধরে সেই বাসার ভাড়াটিয়া মাবিয়া আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে মাবিয়া স্বীকার করেন, চার মাস আগে উম্মে সালমার (৫০) বাসা ভাড়া নিয়ে মাদক ও অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বিষয়টি টের পেলে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেন উম্মে সালমা। ভাড়ার পাওনা টাকাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ক্ষুব্ধ হন মাবিয়া। এর জেরে দুই সহযোগী মুসলিম ও সুমন চন্দ্র সরকারকে নিয়ে হত্যার পর মরদেহ ফ্রিজে রেখে বেরিয়ে যান তারা।
এর আগে, রোববার (১০ নভেম্বর) দুপচাঁচিয়ায় বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন ‘আজিজয়া মঞ্জিল’ বাড়িতে খুন হন উম্মে সালমা। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেসময় র্যাব জানিয়েছিল, হাতখরচের টাকার জন্য মাকে হত্যা করেছিল তার ছেলে। পরে মরদেহ ডিপ ফ্রিজে রেখে দেন।
Advertisement
ছেলে নয়, গৃহবধুকে হত্যা করেছেন নারী ভাড়াটিয়া
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার জয়পুরপাড়ায় গৃহবধু উম্মে সালমা খাতুনকে হত্যার পর মৃতদেহ ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনার তদন্ত নাটকীয় মোড় নিয়েছে। অনৈতিক কাজ করতে নিষেধ করায় বাড়ির নারী ভাড়াটিয়া ও তার দুইজন সহযোগী মিলে উম্মে সালমাকে হত্যা করে মৃতদেহ হাত-পা বেঁধে ফ্রিজে রেখে দেন।
এদিকে, রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ছেলে সাদ বিন আজিজুর র্যাবের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তি অস্বীকার করে নতুন তথ্য দিয়েছেন।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে থানা ও ডিবি পুলিশ হত্যায় জড়িত ওই নারীসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুব্রত সিং এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তার ৩ জন হলেন, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের ইসলামপুর উত্তর সাজাপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী মাবিয়া সুলতানা হাসি (৪১), উপজেলার গুনাহার ইউনিয়নের তালুচ পশ্চিমপাড়ার আবদুর রহিমের ছেলে মোসলেম উদ্দিন (২৮) ও তালুচ বাজার এলাকার নারায়ণ রবিদাসের ছেলে সুমন রবিদাস (৩০)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুপচাঁচিয়া থানার এসআই সুব্রত সিং জানান, গ্রেপ্তার ৩ আসামিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি রেকর্ডের জন্য শুক্রবার বিকেলে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়েছে।
রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন সাদ বিন আজিজুর র্যাবের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তি অস্বীকার করে। সাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ডিবি ও দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে উম্মে সালমা খাতুনের খোয়া যাওয়া দুটি মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে হত্যা রহস্য উন্মোচন ও ঘাতকদের শনাক্ত করে।
বৃহস্পতিবার রাতভর পুলিশ ও ডিবি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। প্রথমে নিহতের বাড়ির চতুর্থ তলা থেকে মাবিয়া সুলতানা হাসিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী উপজেলার চালুচ গ্রাম থেকে মোসলেম উদ্দিন ও সুমন রবিদাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে পুলিশ শুক্রবার নিহত উম্মে সালমার দুটি মোবাইল ফোন, তাদের বাড়ির ইন্টারনেট রাউটার ও একটি চাবি উদ্ধার করেছে।
ডিবি ও থানা পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা গৃহবধু উম্মে সালমা খাতুনকে হত্যা, ফ্রিজে মৃতদেহ গুম ও বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ এবং আলমিরাতে কুড়ালের আঘাত করার কথা স্বীকার করে। হত্যার কারণ হিসেবে তাদের অনৈতিক কাজে বাধা দেওয়ার কথা জানায়।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সুমন রঞ্জন সরকার ও অন্যরা জানান, মাবিয়া সুলতানা হাসি প্রায় ৭ মাস আগে দুপচাঁচিয়া উপজেলার জয়পুরপাড়া এলাকায় উপাধ্যক্ষ মাওলানা আজিজুর রহমানের আজিজিয়া ভবনের চতুর্থ তলা ভাড়া নেন। হাসি ও অপর দু’জন বাড়িতে অনৈতিক কাজ করেন। তারা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতারণা, ছিনতাই ও বিভিন্ন অপরাধও করে আসছেন। বিষয়টি জানতে পেরে উম্মে সালমা তাদের নিষেধ করেন ও বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন।
প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে, এই কারণে মাবিয়া অন্য দু’জনের সহযোগিতায় উম্মে সালমাকে শ্বাসরোধে হত্যা ও মৃতদেহ ফ্রিজে রেখে পালিয়ে যান। যাওয়ার আগে নিহতের দুটি মোবাইল ফোন, বাড়ির ইন্টারনেট রাউটার ও দরজার চাবি নিয়ে যান। গ্রেপ্তার ৩ জনের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্ত শেষ হলে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের সবকিছু নিশ্চিত হওয়া যাবে। তদন্তে নিহতের ছেলে সাদ বিন আজিজুরের সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ যাবে।
উল্লেখ্য, গত ১০ নভেম্বর বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গৃহবধু উম্মে সালমা খাতুনের (৫০) হাত-পা বাঁধা মৃতদেহ ডিপ ফ্রিজ থেকে উদ্ধার করা হয়।
সোমবার মধ্য রাতে র্যাব ১২ বগুড়া কোম্পানির সদস্যরা মা’কে হত্যার অভিযোগে সাদ বিন আজিজুরকে গ্রেপ্তার করে। তাকে পার্শ্ববর্তী কাহালু উপজেলার পাঁচপীর আড়োবাড়ি এলাকায় দাদা রমজান মোল্লার বাড়ি থেকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
সোমবার র্যাব জানায়, বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ডাকাত নয়, হাত খরচের টাকা নিয়ে বিরোধে ছোট ছেলে মাদ্রাসা ছাত্র সাদ বিন আজিজুর (১৯) তার মা উম্মে সালমা খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে লাশ বাড়ির ডিপ ফ্রিজে রাখেন। নিজেকে বাঁচাতে হত্যাকাণ্ডের দায় ডাকাতের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন। এজন্য কুড়াল দিয়ে ঘরের আলমিরাতে আঘাত করেন তিনি।
Advertisement
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গৃহবধু হত্যার অভিযোগে তিনজন গ্রেপ্তার : ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)