ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি, বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪ || কার্তিক ২২ ১৪৩১ :
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বনাশ ডেকে আনছেন তরুণরা। কেউ রূপের মোহে পড়ে বিবাহিত নারীকে বিয়ে করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। আবার অনেকে প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে ব্ল্যাক মেইল হচ্ছেন। সম্প্রতি এরকম দুটি ঘটনার শিকার হয়েছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক তরুণ ও কুমিল্লার আরেক তরুণ।
Advertisement
ঘটনা-১ : অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মাইনুল ইসলাম। নারায়ণগঞ্জের এ বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাস করছেন। সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় একই এলাকার তরুণী শিউলির (ছদ্মানম) সঙ্গে। প্রবাসী জীবন তারপর একই এলাকার তরুণী হওয়াতে ঘনিষ্টতা বাড়াতে চায় মাইনুল। মাইনুলের চাওয়াতে সাড়া দেয় শিউলিও। এভাবেই কিছুদিন চলতে থাকে তাদের। একপর্যায়ে ঘনিষ্টতা বেড়ে যায় দুজনেরই। সুন্দরী হওয়ার সুবাদে মাইনুলের আগ্রহ ছিল শিউলির চেয়ে একটু বেশি। ঘনিষ্টতা এত বেশি বেড়ে যায় ভার্চুয়াল দেখা আর কথা বলা ভালো লাগে না মাইনুলের। চলে আসেন বাংলাদেশে। আর দেশে এসে সামনা-সামনি দেখাতে মুগ্ধ হয় সে। অপেক্ষার পালা শেষ করতেই দিয়ে দেন বিয়ের প্রস্তাব। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয় শিউলিও। প্রবাসী মাইনুলের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে বিয়ের কাবিন ধার্য করা হয় দশ লাখ টাকা। ঘরোয়া আয়োজনেই বিয়ে হয় মাইনুল ও শিউলির।
বিয়ের সপ্তাহ না পেরুতেই মাইনুলের সন্দেহ হয় শিউলিকে। একপর্যায়ে মাইনুল বুঝতে পারেন তিনি এক ফাঁদে পড়ে গেছেন। বিয়ের আগে শিউলি নিজেকে অবিবাহিত বললেও মাইনুল জেনে যায় সে এর আগেও একইভাবে আরেকজনকে বিয়ে করেছিল। সেই সংসারে তার এক ছেলে সন্তানও রয়েছে। আর সে বিয়েটাও একই কায়দায়। এরপর শিউলিকে ডিভোর্স দিয়ে দেয় মাইনুল। পরে দুই পরিবারের মধ্যে সমঝোতায় ৮ লাখ টাকায় রফা হয়।
জানা যায়, শিউলি এর আগেও একই কায়দায় আরেক প্রবাসীকে বিয়ে করেন। এছাড়াও কেয়েকজন তরুণ ব্যবসায়ীকে তিনি এভাবে ফাঁদে ফেলে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ভালো লাগার মানুষের এমন চরিত্রহীন একের পর এক সংবাদে মাইনুল আবারও অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে চলে যান।
ঘটনা-২ কুমিল্লার তরুণ ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন আহমেদ। ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমে পড়ে যান নারায়ণগঞ্জের লুবনার (ছদ্মনাম) সঙ্গে । ঘনিষ্টতা বাড়তে থাকে দুজনের। একপর্যায়ে তাদের দেখা হয়। দেখাদেখির মধ্যেই লুবনার এক প্রস্তাবে রাজি হয় সালাউদ্দিন। চলে আসেন নারায়ণগঞ্জে। যখন লুবনা সালাউদ্দিন এক রুমে তখন-ই বুঝতে পারেন সালাউদ্দিন যে সে এক পাতানো ফাঁদে ধরা পড়েছেন। প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে পাতানো ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসেন সালাউদ্দিন।
শুধু এ দুটো ঘটনাই নয়, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুন্দরী তরুণীরা এক ধরনের প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে। আর এ ফাঁদের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। চক্রটি টার্গেট করে প্রবাসী বা দেশের তরুণ ব্যবসায়ীদের। প্রথমে এক ধরনের সখ্যতার মাধ্যমে তারা অন্য সম্পর্কে জড়ানোর অফারের মাধ্যমে মূলত এ কাজটি করছেন। আর যারাই এ ফাঁদে পা দিচ্ছেন তারাই সর্বশান্ত হচ্ছেন। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বড় বড় শহরগুলোতেও এ ধরনের ফাঁদ পেতেছে চক্রটি।
Advertisement
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এ ধরনের কয়েকজন নারী প্রতারককে আটক করেন। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মেলে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে আটক দোলা নামে এক তরুণী জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, বিভিন্ন বিত্তশালী ব্যক্তিকে টার্গেট করে মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে পাশাপাশি তাদের ফেসবুকে আইডি নিয়ে রিকোয়েস্ট পাঠানো হয় । পরে তাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে কৌশলে একটি সুনির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে নিয়ে এসে ফাঁদে ফেলেন। আর অন্তরঙ্গ মুহূর্তে এ চক্রের অন্য সদস্যরা রুমে প্রবেশ করেন।
দোলা জানায়, তাদের এ চক্রে ভুয়া পুলিশ এমনকি ভুয়া সাংবাদিকও থাকেন। তারা অন্তরঙ্গ সময়ে রুমে ঢোকে টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে জোরপূর্বক আপত্তিকর ছবি তোলেন। আর ওই ছবি পত্রিকায় প্রকাশের ভয় দেখিয়ে মামলার হুমকি দেওয়া হয় ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে। পরে ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেনদরবারের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা আদায় করা হয়। এর আগে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে আটক হয় রোজি আক্তার তানহা নামের আরেক তরুণী।
বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন তিনি। একপর্যায়ে তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে তার সহযোগীদের নিয়ে আটকে দেয়। পরে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। আর শেষে ১০ লাখ টাকায় সমঝোতা হয়। এ ঘটনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পেরে সুন্দরী তরুণী তানহাসহ ওই চক্রের পাঁচজনকে আটক করে।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, সম্প্রতি আমাদের কাছে এ ধরনের অভিযোগ আসছে। এরই মধ্যে এ চক্রের অন্যতম একটি গ্রুপকে আমরা আটক করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, এ চক্রটি একটি কাজ করার পর ২/৩ মাস গা ঢাকা দিয়ে থাকে। এরপর আবার তারা মধ্যবয়সী বিত্তবান ব্যক্তিদের টার্গেট করে আবার প্রতারণার কাজটি চালায়। তিনি বলেন, মূলত নারীদের দিয়ে রূপের ফাঁদে ফেলেন। আর এ ফাঁদে পা দিয়ে ভুক্তভোগীরা সর্বস্ব হারান। এসব ঘটনায় প্রতারিত হয়ে কেউ যদি অভিযোগ করে তবে আমরা ব্যবস্থা নেব।
Advertisement
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পূর্ব) ইকবাল হোছাইন বলেন, নারীদের ব্যবহার করে প্রতারণা নতুন বিষয় না হলেও বর্তমানে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ কিছু কিছু চক্রকে শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতারও করেছে। আমাদের কাছে এ ধরনের অভিযোগও রয়েছে। আমরা তা নিয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছি।