ঢাকা: ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক তরুণ ও যুবক নিখোঁজ থাকার ধারণা থাকলেও অন্তত ৭৭ জনের পাক্কা খবর এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এদের মধ্যে ১০ জনের পাসপোর্ট নম্বরসহ যাবতীয় তথ্যও মিলেছে।
পুলিশ ও র্যাবের তরফ থেকে এই তরুণ-যুবকদের খুঁজে বের করার কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এদের অনেকেই কয়েক বছর ধরে ‘নিখোঁজ’ রয়েছে বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তারা আরও জানান, এই তরুণদের বেশির ভাগই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। যাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ প্রয়োজন।
যেসব পরিবারের সদস্য দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ আছে সেসব পরিবারকে কোনো রাখঢাক না করে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।
পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে সন্তান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা গোপন রাখার প্রবনতা থাকায় পুলিশ কঠোর হচ্ছে। লুকোচুরির আশ্রয় নিলে উল্টো পরিবারের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে অন্তত ৭৭ জন তরুণ-যুবক নিখোঁজ হয়েছে বলে সুনির্দিষ্ট তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, এরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জঙ্গি তত্পরতায় লিপ্ত হতে পারে। তবে প্রকৃত নিখোঁজের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলেই আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট সকল মহলের।
এদিকে নিখোঁজদের সন্ধান পেতে এরই মধ্যে নানা তত্পরতা শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিখোঁজ ৭৭ জনের মধ্যে ১০ জনের পাসপোর্ট নম্বরসহ প্রোফাইল এখন প্রস্তুত রয়েছে। ওই ১০ জনের পরিবারের তরফ থেকেও মিলছে সহযোগিতা। এরই মধ্যে তাদের উদ্ধার করতে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হচ্ছে। প্রোফাইল প্রস্তুত রয়েছে এমন নিখোঁজরা হলেন বাড্ডার জুনায়েদ খান (পাসপোর্ট নম্বর এ এফ ৭৪৯৩৩৭৮), তেজগাঁওয়ের বাসারুজ্জামান (পাসপোর্ট নম্বর এ এল ৭৩৮৪৯৮৭), গুলশানের আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম (পাসপোর্ট নম্বর এ এফ ৫২৫৮৪৯৬২৫), ধানমণ্ডির জুবায়েদুর রহিম (পাসপোর্ট নম্বর ই১০৪৭৭১৯), পুরান ঢাকার ইব্রাহিম হাসান খান (পাসপোর্ট নম্বর এ এফ ৭৪৯৩৩৭৮); সিলেটের তামিম আহম্মেদ চৌধুরী (পাসপোর্ট নম্বর এল ০৬৩৩৪৭৮), মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি (পাসপোর্ট নম্বর টি কে ৪০৯৯৮৬০), জুল্লন শিকদার (পাসপোর্ট নম্বর বি ই ০৯৪৯১৭২); চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী এবং লক্ষ্মীপুরের এ টি এম তাজউদ্দিন (পাসপোর্ট নম্বর এফ ০৫৮৫৫৬৮)।
পুলিশ জানিয়েছে, এসব তরুণ ও যুবকরা নিখোঁজ হওয়ার পরেও অনেকের পরিবার থানায় জিডি করেনি। পরিবারগুলোকে আরও সচেতন হতে আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।
একই ধরনের আহ্বান জানানো হচ্ছে তরুণ ও যুবকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিও। জানা গেছে, ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হিসাব রেখে কারো দীর্ঘ অনুপস্থিতি থাকলে বাসায় যোগাযোগ করে নিখোঁজ জানা গেলে দ্রুত তা স্থানীয় থানায় তা অবহিত করতে হবে। দিন কয়েকের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই মর্মে চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল সূত্র।
এ বিষয়ে এরই মধ্যে বক্তব্য তুলে ধরেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পরিবারের কোনো সদস্য নিখোঁজ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানান। সমাজের প্রত্যেক মা-বাবার উচিত সন্তানরা কোথায় যায়, কী করে তা সার্বক্ষণিক নজরদারি করা।’
র্যাবের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে একই আহ্বান। র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের মতে, নিখোঁজ যুবকদের খোঁজে বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিবারের পক্ষ থেকেও সহায়তা করতে হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া শনিবার রাতে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া পরিদর্শনে এসে নিখোঁজদের পরিবারের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সব মহলের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।