ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি, বুধবার ৩০ অক্টোবর ২০২৪ || কার্তিক ১৪ ১৪৩১ :
ফরিদপুর শহরের নিরাপত্তার আওতায় আনতে জেলা পুলিশের উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে দুই শতাধিক সিসি ক্যামেরা। যার ফলে সুরক্ষিত হবে নাগরিকদের নিরাপত্তা।
Advertisement
নাগরিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরেও, আবাসিক ভবনগুলোর বাসিন্দারাও নিজেদের উদ্যোগে ভিডিওর মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থায় (সার্ভিলেন্স সিস্টেম) সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা স্থাপন করেছে।
সম্প্রতি ফরিদপুর জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় জেলা সদরের পৌর এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থানগুলোতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় থেকে সিঅ্যান্ডবি ঘাট এবং ভাঙ্গা রাস্তার মোড় থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত এই সিসিটিভির নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্ণ করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলা পুলিশের এসপি মো. আলিমুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, নাগরিকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর পুলিশিং নজরদারির জন্য ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শহরের ব্যাণিজিক এলাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা এমনকি শহরের প্রবেশের প্রত্যেকটি সড়কে স্থাপন করা হয়ছে সিসি ক্যামেরা। আর এর মাধ্যমে সুরক্ষিত হয়েছে নাগরিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
তিনি আরও বলেন, শহর জুড়ে দুই শতাধিক সিসি ক্যামেরা দিয়ে পুলিশ নজরদারি করছে সব কিছু। এতে করে শহরের অপরাধ তুলনামূলকভাবে কমতে শুরু করেছে। আমরা পুরো সিস্টেম গুলো কন্টোল করার জন্য দক্ষ টিম তৈরি করেছি। তারা মনিটরিং করছে সব সময়।
শহরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার প্রসঙ্গে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, প্রথমত একজন নাগরিক হিসেবে এই উদ্যোগ সাধুবাদ জানাই। পুলিশের এই কর্মকাণ্ডের ফলে শহরবাসির সামজিক নিরাপত্তা বাড়বে। অপরাধীরা তাদের অপরাধ প্রবণতা কমাবে।
তবে তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, শুধু স্থাপন করলেই চলবে না, সেটাকে সচল রাখতে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
শুধু জেলা পুলিশের উদ্যোগই নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বাণিজিক বিপনী বিতান ও আবাসিক ভবনগুলো স্থাপন করা হয়েছে এই প্রযুক্তি। শহরের আলিপুর রওশন খান সড়কে নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছে ব্যাংকার হাদী নান্নু। তার ভবনে স্থাপন করা হয়েছে একাধিক সিসি ক্যামেরা। কেন এ ব্যবস্থা সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমার পরিবার ও ভাড়াটিয়াদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
Advertisement
আলিপুরের ওই ব্যাংকারের মতো শহরের ঝিলটুলি, নীলটুলি, খাবাসপুর, টেপাখোসহ সব মহল্লায় এমন ব্যবস্থা করেছে আবাসিক ভবন মালিকেরা।
ফরিদপুরের সরকারি চাকরি করেন কামরুল হাসান। তার দক্ষিণ ঝিলটুলির বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে যেসব সহিংসতা, চুরির ঘটনা ঘটেছে, সেসব দেখে আমরা মনে করছি। আমাদের ভবনের নিরাপত্তার জন্য কয়েকটি সিসি ক্যামেরা বসানো দরকার। তাহলে কেউ যদি এরকম কিছু করে। তাহলে আমরা তাদের শনাক্ত করতে পারব। এছাড়াও হয়তো সিসি ক্যামেরার ভয়ে দুষ্কৃতিকারীরা কোন অপরাধ করার আগে দুইবার চিন্তা করবে।’
এছাড়াও জেলা প্রশাসন, আদালত চত্বরসহ জেলা সদরের সকল সরকারি দপ্তর সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
এ জাতীয় সরঞ্জাম বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গত পাঁচ মাসে এ জাতীয় পণ্যের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে।
আলিপুর রেড় ক্রিসেন্ট মাকের্টের স্মার্মট ভিউয়ের মালিক মোহাম্মদ গোলাম রাব্বি রনি বলেন, ‘আগের তুলনায় ইদানীং আমাদের বিক্রি বেড়েছে। মানুষজন নিরাপত্তার বিষয়ে বেশ সচেতন হয়ে উঠেছে। আবার এ জাতীয় সরঞ্জামের দামও এখন অনেক কম। তাই অনেকেই নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা কিনছেন।’
তিনি জানান, বাণিজ্যিক ভবন বা অফিসের বাইরেও, আবাসিক ভবনগুলোর জন্যও অনেক ক্যামেরা বিক্রি হচ্ছে। জেলা শহরের বাইরে থেকেও ক্রেতা আসছে।
এসব ক্যামেরায় টানা তিনমাস পর্যন্ত ভিডিও সংরক্ষণ করা যায়। চাহিদা অনুযায়ী দাম ওঠানামা করলেও, তা খুব বেশি নয় বলে জানান তিনি।
Advertisement
সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি শিপ্রা গোস্বামী বলেন, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে সম্প্রতি মোটরসাইকেল চোর চক্র, কয়েকজন ছিনতাইকারিকে পুলিশ আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। অবশ্যই সিসি ক্যামেরা আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে। তবে স্থাপিত এই ক্যামেরাগুলো নিয়মিত মেনটেনেস (ব্যবস্থাপনা) করতে হবে। তা না হলে এই ভাল উদ্যোগ নষ্ট হয়ে যাবে।