ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আইন আদালত প্রতিনিধি, সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪ || কার্তিক ১২ ১৪৩১ :
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি হওয়ায় নিরাপত্তা চেয়ে রাতে থানা ঘেরাও করেছে স্থানীয় বাসিন্দা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় তারা। গত শনিবার সন্ধ্যায় যখন থানা ঘেরাও হয় ঠিক তখনো জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের গোলাগুলিতে শিশুসহ তিন জন গুলিবিদ্ধ হয়।
Advertisement
এ ঘটনার পর রাতে মোহাম্মদপুরে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার রাত ও গতকাল মিলিয়ে মোট ৫১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, মোহাম্মদপুরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। এদিকে গত শনিবার রাত একটায় বসিলা সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৩ ইস্ট বেঙ্গলের উপ-অধিনায়ক মেজর নাজিম আহমেদ বলেন, মোহাম্মদপুরের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি সাভাবিক করতে প্রতিটি হাউজিং এলাকায় স্থাপন করা হবে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প। যাতে করে এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের সহজে আটক করে আইনের আওতায় আনা যায়। ইতোমধ্যে ৪৫ জনকে গ্রেফতার করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আপনারা আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের তথ্য দিন। তথ্য দিলে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছাবে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান ও বিভিন্ন হাউজিং সোসাইটিতে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৪৫ জন আটক করে তাদের মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। মেজর নাজিম আহমেদ বলেন, আটকদের মধ্যে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ জন কিশোর গ্যাংয়ের লিডার রয়েছে। তারা চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক বিক্রিসহ নানা অপকর্মে জড়িত। এলাকাবাসীকে শান্তিতে রাখতে এই অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। মোহাম্মদপুরে ২৭ থেকে ২৮টি কিশোর গ্যাং চিহ্নিত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, জেনেভা ক্যাম্পে এ পর্যন্ত ছয় বার অভিযান হয়েছে। সেখান থেকে প্রচুর দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত যতো গ্রেফতার হয়েছে তার ৩০ শতাংশ জেনেভা ক্যাম্পের। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৯৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, এ সময় ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৬১ রাউন্ড গুলি, ১৯ রকমের মাদক, একটি গ্রেনেড, ৮০টি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের ডিএমপির প্রায় সবগুলো থানার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলেও অরক্ষিত হয়ে পড়ে মোহাম্মদপুর এলাকা। প্রতিদিনই ঘটতে থাকে খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সব শেষে গত শনিবারও শিশুসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার বাসিন্দা ও ছাত্রজনতা থানা ঘেরাও করে।
Advertisement
এদিকে আইএসপিআর থেকে বলা হয়েছে, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহের সার্বিক নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিচার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড রোধ ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে দেশব্যাপী নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ অক্টোবর আনুমানিক রাত ১০টার দিকে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র ব্রিগেড, র্যাব এবং পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়। এই অভিযানে সেনাবাহিনী, র্যাব এবং পুলিশের একাধিক দল অংশগ্রহণ করে। নিরাপত্তাহীনতায় নিমজ্জিত মোহাম্মদপুরবাসীর জীবনে স্বস্তি আনতে যৌথ বাহিনীর এ অভিযান সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হয়। এই অভিযানে মোহাম্মদপুর এলাকা হতে ৪৫ জন অপরাধী গ্রেফতার হয়। সন্ত্রাস দমন এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে।
তেজগাঁও জোনের এডিসি মোহাম্মদ জিয়া বলেন, আমাদের অভিযান চলছে। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। আমাদের সক্ষমতার কারণে হয় তো টহল দেয়াটা দুর্বল হচ্ছে। এটার জন্য আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অতিরিক্ত ফোর্স দেয়া হচ্ছে। আমরা টহল জোরদার করার মাধ্যমে মোহাম্মদপুর এলাকার এই ভংয়কর অবস্থার নিরসন করা হবে। এদিকে গতকাল দুপুরেও মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালান সেনা, র্যাব ও পুলিশের সমন্বয় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে।
দুই সপ্তাহ ধরে মোহাম্মদপুরে ছিনতাই, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ডাকাতি ও চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ওই এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গত শুক্রবার বছিলায় একটি সুপারশপে ডাকাতির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। সেই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত ও মামলার প্রধান আসামি মো. আসলাম ওরফে রুবেল ওরফে আলমকে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনী।
Advertisement
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার আলী জানান, মোহাম্মদপুরে নাগরিক সমাজ ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে অপরাধ দমনে যৌথ বাহিনী কাজ করছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।