ঢাকা : সম্প্রতি দেশে জঙ্গিবাদ নতুন মাত্রা পেয়েছে। এতদিন জঙ্গিবাদে শুধু অশিক্ষিত, অভাবী, মাদরাসার ছাত্রদের মনে করা হলেও এখন তা পরিবর্তন হয়েছে। এখন উচ্চবিত্ত ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষিত তরুণরাও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। তারা ‘সম্ভবত’ ইন্টারনেটের মাধ্যমেই জঙ্গিবাদের দীক্ষা নিচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জামান।
শুক্রবার (৮ জুলাই) বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন অভিমত দেন। তিনি বলেন, ‘এরা সম্ভবত ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রথমে যোগাযোগ স্থাপন করেছে কোন হ্যান্ডলারের সাথে। এই হ্যান্ডলারের মাধ্যমেই হয়তো তারা একটা গোষ্ঠীর সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। এবং আস্তে আস্তে তারা একটা সেল গড়ে তুলেছে।’
সম্প্রতি গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে পাঁচ হামলাকারীর তিনজনই ঢাকার উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ঢাকার নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এর কয়েকদিন পরেই আইএসের কথিত ভিডিও বার্তায় তিন বাঙালি তরুণকে দেখা গেছে। তাদের একজন তাহমিদ রহমান শাফি একজন উচ্চশিক্ষিত সংস্কৃতিকর্মী। এরপর শোলাকিয়ার ঈদের জামায়াতে হামলাকারীদের একজনও বেরোলো ঢাকার নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
তিনি বলছেন, ‘বাংলাদেশে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্ররাই বুঝি শুধু জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত হয়। কিন্তু এখন আমরা দেখছি উল্টো চিত্র। সমাজের উঁচু স্তরের পরিবারের সন্তান বা নামী-দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মধ্যেই এ ধরণের উগ্র মতবাদের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।’
ইসলামিক স্টেট যখন কয়েক বছর আগে ইরাক এবং সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নিয়ে সেখানে তাদের খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়, তখন ইউরোপ এবং আমেরিকা থেকে অনেক মুসলিম তরুণ সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ব্রিটেন থেকে বেশ কিছু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।
পশ্চিমা দেশগুলো থেকে সিরিয়ায় যাওয়া এই বাংলাদেশিদের সঙ্গে বাংলাদেশের তরুণদের যোগাযোগের সম্ভাবনা দেখছেন জেনারেল মুনীরুজ্জামান। তিনি বলছেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো থেকে যাওয়া তরুণরা যে ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে, যে ধরনের নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছে, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের এই তরুণদের সম্পর্ক থাকতে পারে। একটা পিয়ার-টু-পিয়ার কমিউনিকেশনের চ্যানেলগুলো এখানে উন্মুক্ত আছে।’
গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে যারা হামলা করেছিল, তাদের অনেকেই আগে থেকে নিখোঁজ ছিল। একজন হামলাকারীর বাবা জানিয়েছেন, নিজের সন্তানের খোঁজ করতে গিয়ে তিনি জানতে পেরেছেন, ঢাকার আরও বহু পরিবারের সন্তানেরা এভাবে পালিয়ে গেছে। জেনারেল মুনীরুজ্জামান মনে করেন, এই নিখোঁজ তরুণদের হদিস খুঁজে বের করা খুবই জরুরি।