ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ফেনীর সোনাগাজী প্রতিনিধি, শনিবার ১২ অক্টোবর ২০২৪ || আশ্বিন ২৭ ১৪৩১ :
ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নুর উদ্দিনকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে ভালুকা উপেজলার আমতলি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তবে মামলার অপর আসামি শাহাদাতকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি।
নুসরাত অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম গা ঢাকা দেন।
শুরুর দিকে স্থানীয় পুলিশ এদের গ্রেফতারের ব্যাপারে উদ্যোগ না নিয়ে বরং এটি আত্মহত্যার চেষ্টা বলে বক্তব্য দিয়েছিল স্থানীয় পুলিশ। সে সুযোগে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় তারা।
অথচ ঘটনার প্রথম দিন থেকেই সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এই দুজন। ঘটনার মূল আসামি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নুর উদ্দিন ও শাহাদাত।
এ দুজনকে ধরতে পারলেই মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের গায়ে যে চার বোরকাধারী আগুন দিয়েছে তাদের নাম বেরিয়ে আসবে বলে এলাকার মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধারণা।
কেননা, ঘটনার দিন পরীক্ষার কেন্দ্রে ১৪৪ ধারা থাকলেও এ দুজনের প্রবেশে বাধা ছিল না। এমনটিই জানিয়েছেন মাদ্রাসার দফতরি নুরুল আমিন।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে নুরুল আমিন বলেন, বোরকাপরা চারজনের সঙ্গে নুর উদ্দিন ও শাহাদাতের যোগসাজশ থাকতে পারে। তারা যখন-তখন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার কক্ষে অবাধে যাতায়াত করতেন।
একই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী মো. মোস্তফার কাছ থেকে।
গণমাধ্যমে তিনি বলেন, এটি সবাই জানে যে, নুর উদ্দিন ও শাহাদাতের সঙ্গে অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আর এ কারণেই তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পেত সবাই।
তিনি দাবি করেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে নুসরাতকে নুর উদ্দিন ও শাহাদাত চাপ প্রয়োগ করেন। আর মামলার কারণেই নুসরাতকে পুড়িয়ে মারা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ৫ এপ্রিল রাতে নুর উদ্দিন ও শাহাদাতকে এবং পর দিন (ঘটনার দিন) সকালে নুর উদ্দিনকে মাদ্রাসার মূল ফটকে দেখা গেছে।
Advertisement
কে এই নুর উদ্দিন ও শাহাদাত?
জানা গেছে, নুর উদ্দিন ও শাহাদাত দুজনই সোনাগাজী মাদ্রাসার ফাজিলের ছাত্র। মাদ্রাসা থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চর চান্দিয়ায় নুর উদ্দিনের বাড়ি।
শাহাদাতের বাড়ি মাদ্রাসা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের ভূঁঞা বাজারে।
অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় নিয়মিতই মাদ্রাসায় প্রভাব খাটাতেন এ দুজন।
ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দাখিল পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে সে টাকা অধ্যক্ষসহ ভাগাভাগি করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে দফতরি নুরুল আমিন বলেন, শুধু সেই চাঁদাই নয়, কয়েক দিন আগেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদায় অনুষ্ঠানের কথা বলে নুর উদ্দিন ৬০ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন।
অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বহু অপকর্মের সঙ্গী এই নুর উদ্দিন ও শাহাদাত। গত ২৭ মার্চ সিরাজউদ্দৌলা গ্রেফতার হওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে ‘সিরাজউদ্দৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ’ নামে কমিটি গঠন করা হয়।
২০ সদস্যের এ কমিটির আহ্বায়ক নুর উদ্দিন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হন শাহাদাত হোসেন।
তাদের নেতৃত্বে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে গত ২৮ ও ৩০ মার্চ উপজেলা সদরে দুই দফা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
Advertisement
শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে ভালুকা থেকে নুসরাত হতা মামলার আসামি নুর উদ্দিন গ্রেফতার হলেও শাহাদাতকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি।
নুসরাত হত্যা মামলার আসামি সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন ও শাহাদাত