ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),নেত্রকোনার কেন্দুয়া প্রতিনিধি,বুধবার ০৯ অক্টোবর ২০২৪ || আশ্বিন ২৪ ১৪৩১ :
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির অতি উৎসাহী নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠছে। জানা গেছে, হাই কমান্ডের নির্দেশনার তোয়াক্কাই করছেন না তারা। এমনকি দখলকে কেন্দ্র করে ঘটছে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধার দোকান দখল করে বিএনপি কার্যালয় স্থাপনের খবরও পাওয়া গেছে। যদিও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা বিএনপি।
Advertisement
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নেত্রকোনায় হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন উপজেলায় দখল উৎসবে মেতে উঠেছে বিএনপির অতি উৎসাহী নেতাকর্মীরা।
মামলা হামলাসহ আতঙ্কে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাঁ ডাকা দেয়ায় বিভিন্ন স্থানে জোরপূর্বক বাজার, জলমহাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠছে। এরমধ্যে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার আদর্শ নগর বাজারটি বিএনপি দখলে নেয়ার বিষয়টি সবার নজরে এসেছে। সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সোয়াইর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তফা জামিল, ইউপি সদস্য হারেস মিয়া ও স্বপন মিয়া।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সরকার পতনের পর আদর্শ নগর বাজারে লুটপাট দখল অব্যাহত রয়েছে। এখন থেকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সকল ধরনের কাজ বিএনপি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই করতে হবে। এমনকি ইউনিয়নে আটটি টিউবওয়েল বরাদ্দ আসলেও ইতোমধ্যেই চারটি বিএনপি নেতাকর্মীরা দখলে নিয়েছেন। যদিও জোর করে নয় টাকা দিয়েই বাজার বিদায় করা হয়েছে আগের বাজার সংশ্লিষ্টদের বলছেন সোয়াইর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব জামাল মিয়া।
তিনি বলেন, সরকার পতনের পর এমনিতেই আত্মগোপনে গিয়েছে আগে বাজার পরিচালনা করা সংশ্লিষ্টরা। পরবর্তীতে তাদের প্রস্তাবই টাকা দিয়ে বাজার দখলে নিয়েছেন তারা। আর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কোনো অভিযোগ নেই একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ ছাড়া সোয়াইর ইউনিয়নের পালগাঁও বাজারে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছে ক্লাব ঘরের নামে দখলকৃত জায়গা বিক্রয় করলেও সরকার পতনের পর পুনরায় দখল করে বিএনপির কার্যালয় বানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মিনহাজ উদ্দিন দুলাল। তার অভিযোগ, দীর্ঘদিন আগে জায়গাটি কিনে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ সরকার পতনের পর জোরপূর্বক দোকান ঘরটি দখলে নিয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
Advertisement
যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করছেন দখলকারীরা। দোকান দখলদার হুমায়ুন, মাহমুদুর রহমান কায়সারসহ একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, আগে থেকেই এখানে বিএনপির অফিস ছিল। পরবর্তীতে বিক্রি করলেও এখন আবারো অফিস করা হয়েছে।
এদিকে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় দোকান দখলকে কেন্দ্র করে গেল বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির হিলালীপন্থী দুই গ্রুপের মধ্যে ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। এতে আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী। এ ছাড়াও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম হিলালী তার বাড়ির বাউন্ডারির সামনের সড়কে থাকা সরকারি গাছ কর্তন করেছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।
এসব ঘটনায় বিব্রত জেলা বিএনপি। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়েছে জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জান দুদু। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা বাস্তবায়নে তৃণমূলে কাজ করছে জেলা বিএনপি। বিএনপির কারও বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ উঠলেই ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।
Advertisement
এদিকে মুক্তিযোদ্ধার দোকান ও বাজার দখলের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস। তিনি জানান, অভিযোগগুলো আসার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশকে অবগত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ঘটনাগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার।