সেপটিক ট্যাংকে মিললো ৯ টুকরা লাশ, মা-মেয়ে গ্রেপ্তার

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর প্রতিনিধি,  বুধবার   ০২ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৭ ১৪৩১   :

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় নিখোঁজের চারদিন পর প্রতিবেশীর বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় এক ব্যক্তির ৯ টুকরা লাশ উদ্ধার হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নের ফরদাবাদ গ্রামের মধ্যপাড়া থেকে লাশের খণ্ডিত অংশগুলো উদ্ধার হয়।

Advertisement

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী ও মেয়েকে গ্রেপ্তার করে বুধবার (২ অক্টোবর) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিহতের প্রথম স্ত্রীর ছেলে লুৎফুর রহমান রুবেল বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- অরুণ নিহত মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী মোমেনা বেগম ও তার মেয়ে লাকী।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ায় ৩৫ বছর আগে ফরদাবাদ গ্রামের মোমেনা বেগমকে বিয়ে করেন অরুণ মিয়া। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চরম আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে অরুণ মিয়া তার প্রথম স্ত্রীর সন্তান রুবেলের কাছে ঢাকায় চলে যান। অরুণ মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান মধ্যপ্রাচ্যর দুবাইয়ে কর্মরত অবস্থায় মারা যান। তার মরদেহে দেশে এনে দাফন করা হয়। তার বিদেশ যাওয়ার সময় পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারদেনা করেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। দেনা থাকায় পরবর্তীতে অরুণ মিয়া তার জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেন। গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে অরুণ মিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) তার প্রথম স্ত্রীর সন্তান লুৎফুর রহমান রুবেল বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় তার বাবা নিখোঁজ হয়েছেন মর্মে ডাইরি করেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অরুণ মিয়ার প্রতিবেশী সৌদি প্রবাসী মনির মিয়ার সেপটিক ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ পান এলাকাবাসী। তারা টর্চ লাইট দিয়ে ট্যাংকির ভেতরে দেখেন। সে সময় তারা পলিথিনে মোড়ানো কিছু দেখতে পান। এরপর পুলিশ এসে সেপটিক ট্যাংকে পানি সেচে নয় টুকরা পলিথিন দিয়ে মোড়ানো দেহের অংশ উদ্ধার করে। লাশের খণ্ডিত অংশগুলো অরুণ মিয়ার বলে তার ছেলে শনাক্ত করেন।

Advertisement

নিহতের প্রতিবেশী কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘আমরা সঙ্গে অরুণ মিয়া গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মসজিদে গিয়া নামাজ পড়েছে। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তার বউ আমাদের বলেছে, শুক্রবার সকালে সে (অরুণ মিয়া) ঢাকা গেছে। তখনই এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের মনে সন্দেহ হয়। গতকাল সন্ধ্যায় আমরা মনিরের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে দুর্গন্ধ পাই। আমরা টর্চ লাইট দিয়ে দেখি পলিথিনে মোড়ানো কিছু জিনিস। আমাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ এসে ৯ টুকরো পলিথিন উদ্ধার করে। পলিথিন খুলে লাশ শনাক্ত করে তার ছেলে।’

অরুণ মিয়ার প্রথম স্ত্রীর সন্তান লুৎফুর রহমান রুবেল বলেন, ‘আমার ছোট মা বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমার আপন মা মারা গেছেন ৩৫ বছর আগে। বাবা ২০১৭ সাল থেকে আমার কাছে ছিল। কয়েক মাস আগে আমার প্রতিবেশী চাচারা বিষয়টি মিটমাট করে দেয়। এরপর বাবা আমার ছোট মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। এরমধ্যে আমার সৎ ভাই আশিক দুবাইয়ে মারা যায়। তার বিদেশ যাওয়ার সময় অনেক টাকা দেনা ছিল। পরবর্তীতে আমার বাবা জমি বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করেন। গত কয়দিন ধরে আমি ফোনে বাবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘গত রোববার আমি গাজীপুর থেকে বাড়িতে আসি। বাবাকে খুঁজে না পাওয়ার বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আমাদের বাড়ির পাশে মনির মিয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে থেকে পচা গন্ধ বের হলে এলাকার লোকজন টর্চ দিয়ে ভেতরে পলিথিনে কিছু দেখতে পায়। পুলিশ এসে ৯ টুকরো ইট দিয়ে মোড়ানো পলিথিন ব্যাগ উদ্ধার করে। পলিথিন খুললে আমার বাবার লাশ শনাক্ত করি।’

বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার পরিদর্শক তদন্ত সুজন কুমার পাল জানান, পারিবারিক কলহের জেরে দ্বিতীয় স্ত্রী মোমেনা মাথায় আঘাত করলে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন। মোমেনা চাপাতি (টাকশাল) দিয়ে লাশ টুকরো টুকরো করে নয়টি পলিথিনে বেঁধে পার্শ্ববর্তী সৌদি প্রবাসী মনির মিয়ার সেপটিক ট্যাংকিতে ফেলে দেন। ধারণা করা হচ্ছে, মোমেনা ছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডে আরো কেউ জড়িত থাকতে পারে।

 

তিনি আরও বলেন, গতকাল প্রতিবেশীরা পলিথিনগুলো দেখে আমাদের খবর দিলে আমরা গিয়ে তা উদ্ধার করি। নিহতের প্রথম স্ত্রীর ছেলে রুবেল শনাক্ত করে এটা অরুণ মিয়ার লাশ। এই ঘটনায় অরুণ মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর ও মেয়ে লাকিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়। আজ আদালতের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদের।