ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ :
লালবাগে জমি ব্যবসায়ী এখলাস (৫০) হত্যার নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। তিনি নিজেই খুনি ভাড়া থেকে শুরু করে পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সাজিয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা এড়াতে তিনি জঙ্গিদের মতো ব্যবহার করেছেন ‘কাটআউট’ পদ্ধতি। খুনের জন্য উপযুক্ত সময় হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল ঈদুল আজহার আগের রাত। সেই রাতে বাসা থেকে বের হয়ে এখলাস আর ফেরেননি। নিখোঁজের দুদিনের মাথায় কামরাঙ্গীরচর থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের জট যখন খুলতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সেই প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। মামলার তদন্তে সম্পৃক্ত একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এখলাস খুনের পর এ ঘটনায় কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি মামলা হয়েছে। এরপর হত্যা রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে থানা পুলিশসহ ডিবি ডিবি, র্যাব, পিবিআই ও সিআইডির ভিন্ন ভিন্ন টিম। তারা তদন্ত করে যখন হত্যারহস্য উন্মোচনের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই এর নেপথ্যের গডফাদারের দেশ ত্যাগের খবর পাওয়া যায়। এখন তদন্তকারীরা তিনি কোন দেশে গেলেন, কীভাবে দেশত্যাগ করলেন, এক্ষেত্রে কারা তাকে কীভাবে সহযোগিতা করেছেন তা খতিয়ে দেখছেন। ইতোমধ্যেই কয়েকটি সংস্থার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা এরই মধ্যে পুলিশ এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিও দিয়েছে। ঈদুল আজহার আগে ২৮ জুন রাত ১১ টার দিকে হাজারীবাগের বাড়ি থেকে বের হন এখলাস। এরপর তিনি আর ফিরে না আসায় ঈদের দিন রাতে হাজারীবাগ থানায় একটি জিডি করেন এখলাসের ছোট ভাই জুয়েল। ঈদের পরদিন শুক্রবার সকালে বেড়িবাঁধের পাশে ম্যাটাডোর ফ্যাক্টরির সামনে এখলাসের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ। পরে পরিবারকে খবর দেওয়া হলে, তারা লাশ শনাক্ত করে। নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই জুয়েল কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
‘ক্লু-লেস’ এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি তদন্তে নামে ডিবি, র্যাব, পিবিআই ও সিআইডি। কিন্তু তারা এর কোনো কিনারা করতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে শনাক্ত হয় তিনজন। তাদেরকে গ্রেফতারও করা হয়। এরপরই মামলার তদন্তে নতুন মোড় নেয়। কারণ গ্রেফতার তিনজন হচ্ছেন তিন পেশার। একজন ভ্যান চালক, একজন দর্জি এবং আরেকজন দোকানি। এদের প্রত্যেকেই কিলিং মিশনের বিভিন্ন পর্যায়ে অংশ নিলেও কেউ কারও পূর্ব পরিচিত ছিলেন না। পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ নিশ্চিত হয়, যে এদের প্রত্যেককেই ভাড়া করা হয়েছিল। কিলিং মিশন বাস্তবায়নে তারা কেবল নিজের দায়িত্বের কাজটুকু সম্পর্কে জানতেন। আর পুরো বিষয়টি জানতেন ওই পরিকল্পনাকারী। এখন তার সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে তারা তিনজন এখন কারাগারে রয়েছেন।
Advertisement
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওই পরিকল্পনাকারী সম্পর্কে যুগান্তরকে জানিয়েছেন, স্থানীয় ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি একজন শিল্পপতি, রাজনীতি সংশ্লিষ্ট এবং জমি ব্যবসায়ী। যখন তখন তিনি যাতায়াত করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তিনি ঘটনার পর থেকেই বিদেশে রয়েছেন। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে তার তথ্য এসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। এ ছাড়াও এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন আরও একাধিক রাঘব বোয়াল। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। ওই কর্মকর্তা জানান, জমি বেচাকেনা নিয়ে বিরোধের জেরেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এখলাসকে। এমন সুপরিকল্পিতভাবে হত্যার ছক আঁকা এবং কার্যকর করা হয়েছে, তাতে এই ঘটনার ডিজিটাল কোনো তথ্য-উপাত্ত অবশিষ্ট নেই। নষ্ট করে ফেলা হয়েছে খুনের বিভিন্ন আলামতও। এছাড়া এখলাস হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় কেউ ফোন ব্যবহার করেননি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ যুগান্তরকে বলেন, এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে। খুব শিগগিরই খুনের নেপথ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
Advertisement
মামলার বাদী মো. জুয়েল যুগান্তরকে বলেন, আমাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা যোগাযোগ রাখছেন। তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বলেছেন, তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু এখন বলা যাচ্ছে না। তারা আমাকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন।