ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি) ,ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা প্রতিনিধি , সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ :
বিএনপির পদপদবী ব্যবহার করে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও অবৈধ দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা বিএনপির পদধারী এক শ্রেণীর নেতাদের হাতে মামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন খোদ বিএনপির নেতাকর্মীরাও। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হামলা, মামলা ও কারা নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদেরও মামলায় আসামি করার প্রমাণ মিলেছে। দলের পদপদবী ব্যবহার করে এসব অপকর্মের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুক্তাগাছা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান লেবু, জাহাঙ্গীর হাসান ও মুক্তাগাছা পৌর বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম শহীদসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে।
Advertisement
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এই চক্রের সদস্যরা সরকারি বেসরকারি স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন জনের জমি দখল ও ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করেছে। তারা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে তালা দিয়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যান মেম্বারদের অনেকেই তাদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। সরেজমিনঘুরে জানা গেছে, মুক্তাগাছার ৭ নং ঘোগা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন কামরুজ্জামান লেবু। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। নির্বাচনের সময় যেসব বিএনপির নেতা-কর্মী তাকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাননি তাদের ওপর লেবু ও তার বাহিনী ব্যাপক অত্যাচার নির্যাতন করেছে। বিএনপির সক্রিয় নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটতরাজ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৮ সালে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মাহবুবুল আলম মনি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা মামলার ১ নম্বর আসামি ছিলেন হাতিল গ্রামের আবু তালেবের ছেলে মো: লুৎফর রহমান মেম্বার। তিনি বিএনপির ত্যাগী কর্মী। ওই মামলায় তিনি প্রায় ৩ মাস কারাভোগ করে জামিনে মুক্তি পান। অথচ বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে গত ৩০ আগস্ট খাজুলিয়া গ্রামের বিএনপি নেতা তারিকুল ইসলামের করা মামলায় লুৎফর রহমানকে ৮৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে। একই মামলায় বিএনপি নেতা ঘোগা গ্রামের মুন্নাফ মিয়া মেম্বারকে ও খাকজানা গ্রামের বুলবুলকেও আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনায় খোদ বিএনপির নেতাকর্মীরাও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, এরা বিএনপির ত্যাগী নেতা। আওয়ামী লীগ আমলে হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। এখন আবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও তারা মামলার শিকার হচ্ছেন বিষয়টি অনঅভিপ্রেত ও দুঃখজনক। মূলত কামরুজ্জামান লেবু চেয়ারম্যান থাকার সময় ৪৭ জনের নামে বিধবা ভাতা ও ১২৩ মৃত ব্যক্তির নামে বয়ষ্ক ভাতার অর্থ বছরের পর বছর ধরে জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন। সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার অভিযোগ দেয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কামরুজ্জামান লেবুর বিরুদ্ধে মামলা করে। লুৎফর মেম্বার ও মন্নাফ মেম্বার ওই মামলায় সাক্ষী থাকায় তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় বিএনপির ভুক্তভোগী নেতারা বলেন, কামরুজ্জামান লেবুর চাচাতো ভাই ঘোগা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাচা মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তারা দুজনই বিগত আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর মামলা-হামলা নির্যাতন ও অত্যাচার করেছে। লেবুর আত্মীয় হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অন্য কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অপর দিকে কামরুজ্জামান লেবুর নেতৃত্বে মুক্তাগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এখলাছুর রহমান জুয়েলের বাসায় গত ৫ আগষ্ট হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। লেবুর সমর্থক না হওয়ায় তার উপর হামলা করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি।
এদিকে মুক্তাগাছা উপজেলা বিএনপির নাম ব্যবহার করে মুক্তাগাছা মোটর মালিক সমিতির অফিস, সিএনজি, অটো স্ট্যান্ড, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস দখল ও সাব রেজিষ্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনা দখল করা হয়। আওয়ামী লীগ আমলে এসবের নিয়ন্ত্রক ছিলেন মুক্তাগাছা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহবুব আলম মনি। সে ছিল মুক্তাগাছাবাসীর কাছে এক আতঙ্কের নাম। তার নেতৃত্বে বহু খুন, হামলা, লুটতরাজ ও জননিরাপত্তা বিরোধী কার্যকলাপ সংঘটিত হয়েছে। সে ৫ আগস্টের পর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ওই অবস্থায় বিএনপি নেতা শহীদুল ইসলাম শহীদ ও জাহাঙ্গীর কৌশলে মনিরের একটি বাস নামমাত্র দামে কিনে নেয়। সেটি ইসলাম পরিবহনে যুক্ত করে। এর মাধ্যমে তারা মূলত মোটর সমিতির অফিস ও উপজেলার পরিবহন চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Advertisement
মনি উপজেলায় ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রক ছিল। এখন সেটা দখল করে নিয়েছে বিএনপি নেতা শহীদ ও জাহাঙ্গীর। স্থানীয়রা বলছেন, তাদের সামনে রেখে মূলত আওয়ামী লীগ নেতাদেরই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেখানে।
স্থানীয়রা আরো জানান, মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র বিল্লাল হোসেনের শ্যালক সোহরাব হোসেন ভূঁঞা মুক্তাগাছার চেঁচুয়া এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী। অর্থের বিনিময়ে এখন তাকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান লেবু মিটিংয়ে আছেন, তাই পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন। শহিদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি।