ঢাকা: গোটা ফুটবল বিশ্ব জুড়ে তার অগণিত ভক্ত-সমর্থকদের একটাই আকুতি, ‘ফিরে এসো মেসি’। প্রিয় তারকার মন ভাঙাতে বুয়েন্স এইরেসের রাস্তায় বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিশাল র্যালিতে অংশ নেয় আর্জেন্টাইনরা। দেশবাসীর চাওয়াটুকু নিশ্চয়ই ফিরিয়ে দেবেন না লিওনেল মেসি!
হ্যাঁ, অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। এ বছরের শেষদিকে ব্রাজিলের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ দিয়ে তার ‘প্রত্যাবর্তন’ হতে পারে।
আর্জেন্টিনার দৈনিক ‘লা ন্যাসিওন’ (দ্য ন্যাশন) এমন খবরই প্রকাশ করেছে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে। মেসির সাবেক এক সতীর্থকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, জাতীয় দলে ফেরার বিষয়টি বিবেচনা করছেন মেসি। নভেম্বরে রাশিয়া বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং ম্যাচেই আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মাঠে নামতে পারেন বার্সেলোনা তারকা।
টানা তিন বছরে তিনটি ফাইনালে হারটাই মেসির হৃদয় ভেঙে দিয়েছে! শতবর্ষী কোপা আমেরিকার শিরোপা লড়াইয়ে টাইব্রেকারে স্বপ্নভঙ্গের পরপরই মাত্র ২৯ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসেন।
মেসিকে ফেরাতে মাঠে নামেন স্বয়ং আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর দিয়েগো ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে সাবেক ও বর্তমান ফুটবল তারকা, অন্যান্য ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি তার অগণিত ভক্ত-সমর্থকদের একটাই চাওয়া, মেসি যেন তার সিদ্ধান্ত বদলে আর্জেন্টিনার জার্সি পরাটা অব্যাহত রাখেন।
আর্জেন্টাইন দৈনিকের দাবি, মেসির অবসরের সিদ্ধান্তটা একেবারেই বিদায় নয়, কেবল একটা বিরতি। নভেম্বরেই নাকি তিনি ফিরছেন। ওই মাসে ব্রাজিল ও কলম্বিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলবে আলবিসেলেস্তেরা। ম্যাচ দু’টি অনুষ্ঠিত হবে ৮ ও ১৬ নভেম্বর। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী দু’টি ম্যাচই বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
তার আগে সেপ্টেম্বরে উরুগুয়ে ও ভেনেজুয়েলার মুখোমুখি হবে জেরার্ডো মার্টিনোর শিষ্যরা। তবে এ দু’টি ম্যাচসহ পরের মাসের দু’টি ম্যাচও (পেরু ও প্যারাগুয়ে) মেসি এড়িয়ে যেতে পারেন বলে জানা গেছে। ব্রাজিলে বা হোম ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ফিরে সমর্থকদের স্বস্তি এনে দিতে পারেন বিশ্ব ফুটবলের এ ক্ষুদে জাদুকর।
ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, মেসির সাবেক সতীর্থ যিনি তার সঙ্গে ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি মেসির ফেরার কথা জানিয়েছেন, ‘সে (মেসি) আর্জেন্টিনা দলে ফিরছে। লক্ষ্য ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ জয়।’
দু’জন খেলোয়াড়ই আছেন যারা মেসির সঙ্গে গত তিনটি ওয়ার্ল্ডকাপ খেলেছেন। এরা হলেন হাভিয়ের মাশ্চেরানো ও ম্যাক্সি রদ্রিগেজ।
মেসির বান্ধবীও কী মেসির ফেরারই ইঙ্গিতই দিলেন? আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোকে উদ্ধৃত করে ‘লা ন্যাসিওন’ বলছে, এক মেসি-ভক্ত রোকুজ্জোকে নাকি বলেছে, মেসিকে অবশ্যই আর্জেন্টিনার হয়ে খেলে যাওয়া উচিৎ গুটি কয়েক সমালোচকের কথা শোনার প্রয়োজন নেই। রোকুজ্জোর প্রতিক্রিয়া, ‘হ্যাঁ, তারা (সমালোচক) সংখ্যায় অল্প, কিন্তু তারা তার (মেসি) ওপর অধিক ভার চাপিয়ে দিয়েছে।’
দীর্ঘদিনের সমালোচনা, আর্জেন্টিনার হয়ে বার্সার ফর্ম টেনে নিয়ে আসতে পারেন না মেসি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন ম্যারাডোনার উত্তরসূরি এবং এখন তিনি এখন আর্জেন্টিনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চারবার ফাইনাল খেলেও শিরোপা এনে দিতে না পারার হতাশায় মেটলাইফ স্টেটিয়ামে চোখের জ্বলে অবসরের ঘোষণা দিয়ে ফেলেন। এটা স্পষ্ট যে, মেসির ওপর চাপের বোঝাটা যে বড্ড ভারী।
অবসরে যাওয়ার পর থেকেই একটি বিতর্কই এখন তুঙ্গে, আদৌ কী মেসির এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘায়িত হবে? পুরো ফুটবল বিশ্বই যে তার ফেরার অপেক্ষায়। বার্সেলোনা সতীর্থ লুইস সুয়ারেজও বলেছেন, ফিরে আসবেন মেসি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি তার পক্ষ থেকে।
মেসিকে ফেরাতে আর্জেন্টাইনরা অনেক কিছুই করছে যা খবরের শিরোনাম হচ্ছে। বুয়েন্স আইরেসে তার মূর্তি উন্মোচন, বিশাল র্যালি, রাস্তায় রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালে ফিরে আসার আকুতি সহ আরো কত কী। কিন্তু একমাত্র মেসিই জানেন, দেশবাসীর এতোসব প্রচেষ্টা দিন শেষে যথেষ্ট হবে কিনা!