ঘুষ-দুর্নীতি চালাতে দালাল পোষেন বিআরটিএ কর্মকর্তা! (ভিডিও)

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি) ,ঢাকা প্রতিনিধি , শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১ : 

সরেজমিনে বিআরটিএ কর্মকর্তা মামুনুর রশীদের অফিসে অনুপস্থিতির সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে তিন দিন অফিসে গিয়েও দেখা মেলেনি এই কর্মকর্তার। এ সময় তার চেয়ারে বসে কম্পিউটারে কাজ করতে দেখা যায় দালাল আরিফকে। কর্মচারীদের চেয়েও অফিসে তার দাপট বেশি বলে জানান এক কর্মী।

Advertisement

দালালদের সরকারি আশ্রয়-প্রশয় দিয়ে অফিসের চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে ঘুষসহ নানামুখী দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিআরটিএ’র এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সরকারি এই কর্মকর্তা নিয়মিত অফিস করেন না। শুধু তাই নয়, অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে সেবাপ্রত্যাশীদের মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে থাকেন এই সরকারি কর্মকর্তা।

অভিযুক্ত এ কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জের বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ।

ফাইল ছাড়াতে গেলেই এ কর্মকর্তা ঘুষ দাবি করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তাছাড়া সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসে তিনি অফিস করেন মাত্র দুই দিন। শুধু তাই নয়, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না দেয়ার বিধান থাকলেও উৎকোচের বিনিময়ে লার্নার (শিক্ষানবিশ) কার্ডধারীদের নিয়মিতই রেজিস্ট্রেশন দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আর এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করলে সেবাপ্রত্যাশীদের চাঁদাবাজি মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন তিনি।

বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ এনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছিলেন স্থানীয় কয়েকজন মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা শো-রুমের মালিক। কিন্তু কোনো প্রতিকার মেলেনি। উল্টো তাদেরকে বিপাকে পড়তে হয়েছে। ব্লক করে দেয়া হয়েছে তাদের বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টাল (বিএসপি) নম্বর। এ অবস্থায় বিক্রি করা মোটরসাইকেল নিজেদের আইডি থেকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করতে পারছেন না তারা।

Advertisement

বিএসপি ডাটা না পাওয়ার অজুহাতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের ফাইল ফেরত দেয়া হয়েছে। অথচ যারা কর্মকর্তার চাহিদামতো উৎকোচ দিতে পেরেছেন, আগের আইএস ডাটা থেকে তাদের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করে দেয়া হয়েছে।

 

ঘুষ-দুর্নীতি চালাতে দালাল পোষেন বিআরটিএ কর্মকর্তা!
কেউ অভিযোগ নিয়ে তার অফিসে গেলেই আগে ভিডিও শুরু করেন বিআরটিএ-এর এই কর্মকর্তা। ছবি: নিউজবাংলা

 

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মুকসেদপুর গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিআরটিএ থেকে ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য লার্নার কার্ড পাই। কার্ড পাওয়ার তিন মাস পর স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলেও আমাকে তা দেয়া হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘বিআরটিএ অফিসের এক টেবিলে গেলে বলে ওই টেবিলে যান। এভাবে দুই বছর ধরে ঘুরছি। আকারে-ইঙ্গিতে আমার কাছে টাকাও দাবি করা হচ্ছে। ঘুষ দিয়ে স্মার্ট কার্ড নিতে চাই না বলে বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে আমাকে।’

‘নিউ দিয়া টিভিএস’ নামে এক মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা শো-রুমের পরিচালক রাকিবুল ইসলাম লিখন বলেন, ‘গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে বিআরটিএ-এর সহকারী পরিচালকের কাছে গেলে তিনি প্রথমেই নিজের মোবাইল ফোন থেকে ভিডিও করা শুরু করেন। ভিডিও করার কারণ জানতে চাইলে তেড়ে আসেন এবং আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শো-রুমের মালিক বলেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে এবং নবায়ন করতে গেলে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। ঘুষ দিলে নির্ধারিত সেমিনারে উপস্থিত না থেকেও অনেকের লাইসেন্স নবায়ন হয়ে যাচ্ছে।

‘২৬ জুন ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের জন্য ৮৪ জনকে সেমিনারে ডাকা হলেও সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন ৩৫ জনের মতো। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদেরও লাইসেন্স নবায়ন করে দেয়া হয়েছে বলে জেনেছি। ওই সেমিনারে উপস্থিত প্রত্যেকের জন্য ৩০০ টাকা সম্মানী ও দুপুরের খাবারের টাকা বরাদ্দ থাকলেও তাদের তা দেয়া হয়নি।’

অফিসে আসা ভুক্তভোগীরা জানান, সহকারী পরিচালক সপ্তাহে মাত্র দুদিন অফিস করেন। ঘুষ লেনদেনের কাজটি হয়ে থাকে অফিসের কতিপয় কর্মচারী আর দালালের মাধ্যমে। আরিফ নামে এক দালাল প্রায় প্রতিদিনই সহকারী পরিচালকের কক্ষে অবস্থান করেন। তার বাড়ি সদর উপজেলার বিন্নাটি এলাকায়।

সরেজমিনে মামুনুর রশীদের অফিসে অনুপস্থিতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে তিন দিন অফিসে গিয়েও দেখা মেলেনি তার। এ সময় দেখা যায়, সহকারী পরিচালকের কম্পিউটারের চেয়ারে বসে কাজ করছেন দালাল আরিফ। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে সটকে পড়েন তিনি। কর্মচারীদের চেয়েও অফিসে তার দাপট বেশি বলে জানান এক কর্মী।

সবশেষ রোববার অফিসে গেলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ প্রথমেই মোবাইল ফোনে ভিডিও চালু করেন। তারপর তার অফিসে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয় না বলে দাবি করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আগের কর্মকর্তাদের চেয়ে ভালো সেবা দিচ্ছি আমি।’

 

ঘুষ-দুর্নীতি চালাতে দালাল পোষেন বিআরটিএ কর্মকর্তা!
কিশোরগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালকের কম্পিউটার ব্যবহার করছেন দালাল আরিফ। ছবি: নিউজবাংলা

 

দালাল আরিফের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সে প্রতিদিন আমার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে আসে।’ নিজের কক্ষের কম্পিউটারে সামনে চেয়ারে বসিয়ে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভুল করে কম্পিউটারের চেয়ারে বসে থাকতে পারে।’

অনুপস্থিত থেকেও ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ‘বিষয়টি জানা নেই’ বলে এড়িয়ে যান তিনি।

Advertisement

তিন কর্মদিবস ঘুরে তার দেখা না পেলেও ‘নিয়মিত অফিস করেন’ বলেই দাবি করেন তিনি।