ঢাকা: ন্যুনতম নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই এমন দেশ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। আধুনিক সভ্যতার শুরু হয়েছিল যে ইউরোপ থেকে সেখানেও কী মানুষ শতভাগ সুরক্ষিত? নিশ্চয়ই নয়। তাই বলে কী সেখানে বিদেশিদের সফর বন্ধ হয়ে গেছে, না কি ক্রীড়ার বড় বড় আয়োজনগুলো থেমে গেছে?
২০০৫ সালের ৭ জুলাই সন্ত্রসীদের হামলায় লন্ডনে ৫২ জন মানুষ মারা যায়। ২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারায় ১৩০ জন নিরাপরাধ মানুষ। তাই বলে কী ২০১২ সালে লন্ডনের অলিম্পিক আয়োজন থেমেছিল, না কি ফ্রান্সে চলতি ইউরোর আয়োজন থেমে আছে? বরং বেশ সফলতার সাথেই ব্রিটিশরা সম্পন্ন করেছে ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক ও ফরাসিরা সম্পন্ন করছে ইউরোপের ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই।
শুধু লন্ডন কিংবা প্যারিস কেন? এইতো সেদিন (২৮ জুন) ইস্তানবুল বিমানবন্দরে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে কেড়ে নিল ৪৫টি তাজা প্রাণ। লন্ডন, প্যারিস এবং ইস্তানবুলের পর গেল ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে ঘটে গেছে এদেশের স্মরণ কালের ইতিহাসে সব চেয়ে ন্যাক্কারজনক জঙ্গি হামলার ঘটনা, যেখানে হামলাকারীরা বাদে প্রাণ হারিয়েছেন ২২ জন।
বাজে এই ঘটনাটি এমনই এক সময় ঘটলো যখন বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্ট ও তিনটি ওয়ানডে ম্যাচের।
গুলশান হামলার পরদিনই বহুল প্রতীক্ষিত এই সিরিজ নিয়ে এরই মধ্যে শঙ্কা প্রকাশ করেছে কতিপয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর শঙ্কাকে যথার্থ মনে করছেন না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের টেকনিক্যাল কমিটির উপদেষ্টা ও সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা, ‘সন্ত্রাসী হামলার এমন ঘটনা পৃথিবীর সব দেশেই হচ্ছে। এসব কারণে সিরিজ কখনই থেমে থাকেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সব সময়ই ভালো। বাংলাদেশ একটি ক্রিকেট পাগল জাতি। তাছাড়া সিরিজের এখনও দেড় মাস বাকি। তবে আর যদি এরকম ঘটনা না ঘটে তাহলে কোনো সমস্যা নেই। ইংল্যান্ড আমাদের সাথে বেশ বন্ধু সুলভ।’
আগামী অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজকে সামনে রেখে ৩০ সদস্যের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। এর ঠিক দু’দিন আগে সিরিজের সূচিও ঘোষণা করে বিসিবি। ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ইংল্যান্ডের। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ভেন্যুতে খেলাগুলো সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
গেল বছর অক্টোবরে নিরপত্তার খোড়া অজুহাত দেখিয়ে দুই ম্যাচ সিরিজের টেস্ট খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসেনি অস্ট্রেলিয়া। এমনকি তাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলকেও জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে পাঠায়নি। তবে উল্লেখ করার বিষয় হলো যুব বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ান যুবারা বাংলাদেশে না এলেও ইংল্যান্ড কিন্তু ঠিকই এসেছিল।
ঠিক সেই রকম ইতিবাচক মানসিকতা ইংলিশরা এবারও বাংলাদেশর প্রতি দেখাবে বলে মত শফিকুল হীরার। আর যদি ইংলিশরা না আসে? এমন প্রশ্নের জবাবে হীরা জানালেন, ‘তাহলে সেটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হবে। একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সিরিজ থেকে আমরা বঞ্চিত হবো। আমাদের ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় একটা ধাক্কা আসবে এবং আমরা পিছিয়ে যাব। দীর্ঘ একটি সময় টেস্ট ক্রিকেট থেকে বঞ্চিত থাকবো।’
যথার্থই বলেছেন হীরা। কেননা দেশের মাটিতে টাইগাররা সবশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিল ২০১৫ সালের জুলাইয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। তাছাড়া এ বছরের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজটি ছাড়া এফটিপিতে বাংলাদেশের আর কোনো সিরিজ এখনও নিশ্চিত হয়নি।
তবে এসব নেতিবাচক ভাবনা একেবারেই ভাবতে চাইছেন না এই লাল-সবুজের সাবেক দলপতি। বরং ভাবছেন ইংলিশদের বিপক্ষে টাইগররা কী করলে টেস্টে ভালো ফলাফল পেতে পারে। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে অবিরত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।