ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি) ,রাজশাহী প্রতিনিধি ,রোববার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭ ভাদ্র ১৪৩১ :
আবাসিক হোটেলে বিভিন্ন কক্ষের দরজায় আগেই ছিদ্র করে রাখা হয়। এরপর যেসব দম্পতি বা জুটি সেসব কক্ষে রাত যাপন করেন, তাঁদের অজ্ঞাতে ছিদ্র দিয়ে ব্যক্তিগত দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে ওই ভিডিও দেখিয়ে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাঁদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীরা টাকা দিতে বাধ্য হন।
Advertisement
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে এভাবে জিম্মি করার পর রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকার ‘পপুলার-২’ নামের ওই আবাসিক হোটেলের এসব ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এরপর দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার দুজন হলেন হোটেল ব্যবস্থাপক শরীফুল ইসলাম (২৮) এবং একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা আবদুল নূর (১৯)। শরীফুলের বাড়ি নওগাঁর পোরশায় এবং নূরের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে।
তাঁদেরসহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী ওই ছাত্র গত সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন।
মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে জানিয়ে রাজপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজল কুমার নন্দী গণমাধ্যমকে বলেন, ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত আবাসিক হোটেল। চতুর্থ তলায় ভবনমালিকের বাসা। পঞ্চম তলায় মেস। সেখানে থাকেন ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা আবদুল নূর। সেই সূত্রে ওই হোটেলের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভুক্তভোগী দম্পতি হোটেলের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে ছিলেন। ওই কক্ষের দেয়ালে এমনভাবে ছিদ্র করা রয়েছে যে সেখানে মুঠোফোনের ক্যামেরা ধরলে ঠিক বিছানার দৃশ্য আসে।
Advertisement
মামলার সূত্রে জানা গেছে, আশপাশের অন্যান্য জেলা-উপজেলা থেকে যাঁরা চিকিৎসার কাজে রাজশাহীতে আসেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পেতে তাঁদের রাত হয়ে যায়। বেশির ভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় হওয়ায় এসব রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা সেখানকার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে রাত যাপন করেন। এ সুযোগে হোটেল পপুলার-২–এ এমন সব ঘটনা ঘটানো হচ্ছিল।
গত রোববার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ওই হোটেলে ওঠেন। তাঁর স্ত্রী চিকিৎসার জন্য গ্রাম থেকে রাজশাহীতে আসেন। রাতে হোটেল পপুলার-২–এ ওঠার ঘণ্টাখানেক পর তাঁদের মুঠোফোনে কল করে বাইরে আসতে বলা হয়। তাঁরা বাইরে না এলে হোটেলের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করতে থাকেন হোটেলের ব্যবস্থাপক ও তাঁর সহযোগীরা।
একপর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী ও তাঁর স্ত্রী দরজা খুলে দিলে তাঁদের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে গোপনে ধারণ করা ভিডিও ইন্টানেটে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন তাঁরা। এ সময় ওই শিক্ষার্থী ও তাঁর স্ত্রী জোর করে হোটেল থেকে চলে আসেন। তাঁরা রাজশাহী স্টেশনে রাত কাটান। পরের দিন সকালে স্ত্রীকে বাড়ির উদ্দেশে ট্রেনে তুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান তিনি।
এরপর দুপুর থেকে ওই শিক্ষার্থীকে হোটেলের কর্মচারীরা কল করতে থাকেন। তাঁদের কাছে অনেক ভিডিও রয়েছে দাবি করে দেখা করতে বলেন। ওই শিক্ষার্থী বিষয়টি তাঁর বিভাগের এক বড় ভাইকে জানান। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতাকে জানালে রাজপাড়া থানা ছাত্রলীগকে বিষয়টি জানানো হয়। তাঁদের সহযোগিতায় স্থানীয় লোকজন ওই হোটেলে গিয়ে আবদুল নূরকে আটকে রাখেন। পুলিশ গিয়ে তাঁর মুঠোফোন জব্দ করে ভিডিওগুলো পান।
Advertisement
হোটেলের তিনজন মালিকের মধ্যে একজনের নাম শাহীনুল হক। গ্রেপ্তার দুজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা এর কিছুই জানি না। জানলে আগেই ওই কর্মচারীকে বের করে দিতাম।