ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি) , ঢাকা প্রতিনিধি,শুক্রবার, ২৩ আগস্ট ২০২৪, ৮ ভাদ্র ১৪৩১ :
ক্যামেরায় পথশিশুদের আপত্তিকর ছবি-ভিডিও করে, তা এডিটের পর ইতালি, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় বিক্রি করতেন শিশুসাহিত্যিক টিপু কিবরিয়া। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তাঁর চার সহযোগীর নাম ও ছবি পেয়েছে পুলিশ। তাঁরা পেশায় ভাঙারি ব্যবসায়ী। তৃণমূল পর্যায়ের ছেলেশিশু এবং ঢাকার পথশিশুদের জোগাড় করে তাঁরাই টিপুর কাছে নিয়ে যেতেন।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএমপির সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অতিরিক্ত উপকমিশনার (সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আহমেদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য জানান।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের কাছে অস্ট্রেলিয়া ফেডারেল পুলিশের পাঠানো এক চিঠির সূত্র ধরে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) টিআইএম ফখরুজ্জামান ওরফে টিপু কিবরিয়া ও তাঁর প্রধান সহযোগী কামরুল ইসলামকে গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। পর দিন বুধবার আদালত তাঁদের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আহমেদুল ইসলাম বলেন, দুদিনের রিমান্ড শেষে তাঁদের আদালতে তোলা হবে।
Advertisement
এর আগে শিশুদের নিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরি করে ইন্টারপোলের সহায়তায় ২০১৪ সালে শিশুসাহিত্যিক টিপু কিবরিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২১ সালে কারাগার থেকে বেরিয়ে সাহিত্যচর্চার আড়ালে আবার শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি শুরু করেন।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, টিপু কিবরিয়া ও তাঁর প্রধান সহযোগী কামরুল ইসলামের আরও চার সহযোগীর নাম ও ছবি পাওয়া গেছে। তবে তাঁদের তথ্যগুলো যাচাইবাছাই চলছে। এছাড়া ভিকটিম শিশুর মধ্যে ২০-২৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এই শিশুদের জোগাড় করে দিতেন ভাঙারি ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশই রাজধানীর গুলিস্তান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, কমলাপুর রেলস্টেশনের ছিন্নমূল শিশু। তাদের কারও বয়সই ১২ বছরের বেশি নয়। তাদের দেওয়া হতো ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এদের একজন বৃহস্পতিবার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এর আগে সিটিটিসি জানায়, টিপু কিবরিয়া অশ্লীল ছবি ও ভিডিওগুলো বিভিন্ন পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটে আপলোড করতেন। এগুলো দেখে ইতালি, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ার বেশ কিছু মানুষসহ অনেকে টিপু কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর তাঁদের চাহিদা মতো ভিডিও তিনি একাধিক এনক্রিপটেড অ্যাপসের মাধ্যমে পাঠাতেন। মাত্র তিনটি কনটেন্ট বিক্রি করে এক হাজার ডলার নিয়েছেন। টিপু ও তাঁর সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর, তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া ছবি ও ভিডিওর মধ্যে ২৫ হাজার ছবি ও ১ হাজার ভিডিও গণনা করা সম্ভব হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, জব্দ হওয়া কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, মুঠোফোনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে হাজার হাজার ভিডিও এবং কনটেন্ট পাওয়া যাবে। টিপুর ডেস্কটপে অসংখ্য ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে।
Advertisement
উল্লেখ্য, শিশুসাহিত্যিক টিপু কিবরিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৯১ সালে একটি প্রকাশনীর মাসিক কিশোর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ফ্রিল্যান্সার আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন।